বলতে মানা-৩

প্রকাশ | ১৫ এপ্রিল ২০১৭, ২০:১৫

আমার পরিবার এবং বন্ধুদের জীবনের ঘটে যাওয়া টুকরো ঘটনা নিয়েই এই লেখা। এ লেখার পেছনের কারণ অনেক গভীর। আমি বাঙালি ‘ভাল মেয়ে’ বিশেষণের উপর বিশ্বাস হারিয়েছি বহু বছর আগে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের জীবনের ছোট ছোট ঘটনা যা আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি এবং বারবার ভেবেছি তার কিছু অংশ এই লেখার ছোট ছোট টুকরো। কারো জীবন নয় এই সমাজ এর অনমনীয়তা তুলে ধরাই আমার লেখার উদ্দেশ্য। 

আশা করি না এই লেখা পড়ে রাতারাতি সভ্য জাতিতে পরিণত হবো আমরা। তবু একজন নারীর জীবনভাবনাও যদি এই লেখার কারণে পরিবর্তন হয় তাতেও তো এ সমাজ একজন সুখি নারী পাবে। এই গল্পের সব চরিত্র এখনো বেঁচে আছেন এবং আমার বেড়ে ওঠার সময়ে এদের সান্নিধ্যে আসার কারণেই আমার জীবনধারা ব্যতিক্রম হয়েছে। যে জীবন আমার নিঃশ্বাস আটকে রাখে সে জীবন থেকে আমি নিজেকে মুক্ত করে নেই, ক্ষতি নেই যদি তা হয় স্রোতের বিপরীত।

বিঃ দ্রঃ এই গল্পের চরিত্র যদি আপনার চেনা মানুষও হন আমি অনুরোধ করবো চরিত্রকে সমালোচনার বাইরে রাখুন, তার অভিজ্ঞতা এবং এর সমাধান এর ব্যাপারে অভিমত জানান। 

সময় ১৯৯০

সাহারা কি করে এই কাজ করল তা বুঝে উঠতে পারছেন না বকুল। কি করে তার মেয়ে এত নিষ্ঠুর হল! এত আদরে যত্নে বড় করেছেন মেয়েকে, চাইবার আগেই পেয়ে গেছে সব! ছোটবেলা থেকে পর্দায় বড় হয়েছে মেয়ে। পই পই করে ধর্ম আর সামাজিকতা শেখানো হয়েছে। শবে বরাতে সবচেয়ে ভাল হালুয়া বানায় বকুল, সবার বাড়িতে পাঠানো হয়, সাহারাকে সব শিখিয়েছেন মা। কি করে সেলাই করতে হয়, ফুল তুলতে হয়, কোরান পড়তে হয়। মেয়ে যেন সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে তার জন্য সব করেছেন তিনি, বাড়িও করেছেন যেন ভাল ঘরে মেয়ে বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারেন। 

সেই মেয়ে, এত লক্ষ্মী মেয়ে কিনা ষোল বছর বয়েসে এক হিন্দু ছেলের হাত ধরে পালিয়ে গেল!! কি করে সমাজে মুখ দেখাবেন তিনি! তার স্বামী মুখ পাথর করে বসে আছেন। সাহারার মামা যে কিনা কোলে পিঠে করে তাকে বড় করেছেন খবরটা শোনার পর থেকে শাপ শাপান্ত করে যাচ্ছেন। পারিবারিক মিটিং হবে আজ রাতে, লোক জানাজানি হবার আগে মেয়েকে খুঁজে পেলেই হয়। এই পাপ কি করে প্রায়শ্চিত্ত করা যাবে কে জানে!

অনেক চেষ্টা করেও মেয়েকে মানানো গেল না, পারিবারিক সিদ্ধান্ত হল সাহারাকে ত্যাজ্য করা হবে। ষোল বছর বয়সে সাহারা পরিবারহারা হয়ে গেল ভালবাসার অপরাধে। তার পরিবার পরিজন কোনদিন জানতেও চায়নি সে বেঁচে আছে কি মরে গেছে!

(চলবে...)

লেখক: গবেষক