লন্ডনের মিরর পত্রিকায়

একাত্তরে বাংলাদেশে নির্মম নিষ্ঠুরতা ও নির্যাতনের চিত্র

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ২০:৩৪

জাগরণীয়া ডেস্ক

একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি তার সার্ট উল্টিয়ে পেটে বেয়ানটের আঘাত দেখালেন। একটি ছোট্ট শিশুর কাণে রক্ত জমাট বেধেঁ আছে, কারণ তাকে খুব কাছে থেকে গুলি করা হয়। একজন মহিলা মাঠে বসে কাঁদছেন কারণ তার স্বামীকে গত পরশু জীবন্ত মাটি দেয়া হয়।

একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ ধরনের বর্বরতা তুলে ধরে রির্পোট করেছিলেন লন্ডনের ‘দৈনিক মিরর’ পত্রিকার সাংবাদিক জন পিলগার।

‘বাংলাদেশে নির্মম নিষ্ঠুরতা ও বুভুক্ষ মানুষের কাহিনী শীর্ষক’ এই প্রতিবেদনটি ১৯৭১ সালের ১৬ জুন বুধবার ‘দৈনিক মিররে’ প্রকাশিত হয়। জন পিলগার বাংলাদেশে অবস্থান করে এবং ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে এসব রিপোর্ট করেছিলেন।

তিনি যেদিন এ সব পর্যবেক্ষন করছিলেন তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। ‘এখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে, শুধু ধবংস স্তুপের ছায়া দেখা যায়। দুসপ্তাহ আগে একটি মসজিদ উড়িয়ে দেয়াসহ দোকান লুটপাট করে পুরিয়ে দেয়া হয়। মাটির ঘরের একটি দেয়াল আছে তা থেকে বাড়ির মালিক পালিয়ে যাননি। তার যুবতী মেয়েটিকে বলাৎকার করা হয়, তাই সে পাগলের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে।’

রিপোর্টে পিলগার ঘটনা স্থলের স্থান উল্লেখ করেননি। এ ব্যাপারে তিনি লিখেন ‘আমি একটি বাজারে এসে দেখলাম যে, কয়জন গ্রামবাসী আছেন তারা প্রায় সকলেই এখানে জড়ো হয়েছে। আমি গ্রাম বা ডিস্ট্রিকের নাম এখানে উল্লেখ করতে চাই না, কারণ উল্লেখ করলে হয়তো একদিন গ্রামটি ধবংস করে দিতে পারে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তারা ফটোগ্রাফার এরিক পাইপার ও আমাকে প্রথম বিদেশী দেখতে পায়।’

ভারত সীমান্তের পাশে পিলগারের সাথে একজন গেরিলার দেখা হলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘এখান থেকে প্রায় সবাই চলে গেছে। তারপরেও পিলগার প্রায় একশজনের মত লোকের সাথে কথা বলেন। তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক মেয়ে এবং তেরো থেকে বিষোর্ধযুবক ছিল। প্রতিটি পরিবারের সদস্য যাদের সাথে তার কথা হয়েছে তাদের সকলেই বলেছে , কারো ছেলে, স্বামী বা ভাইকে গুলি কওে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে এবং মেয়ে বা স্ত্রীর শালীনতা হানি করেছে।

কাসিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি ফোঁফাতে ফোফাতে পিলগারকে বলেন, গত ২৪ মে তার দুই ছেলেকে পাকিস্তানি সন্যরা নদীর কিনারে গর্তে পুতে কাদামাটিতে চাপা দিয়ে মেরে ফেলে। পিরালী নামে আর এবজন বলেন সৈন্যরা এখানে আসতে শুরু করলে তিনি তার বোন, ভাতিজাসহ নৌকা করে পালাতে চেষ্টা করেন কিন্তু পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের দিকে মেসিন গান তাক করলে তারা ফিরে আসেন। তবে পিরালী কোন প্রকারে প্রাণে রক্ষা পেলেও বোন ও ভাতিজা কে গুলি করে হত্যা করা হয়।

বাংলাদেশে যাওয়ার পথে দুজন জাতীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গেও দেখা হয় বলে পিলগার তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন। তাদের একজনের নাম ইকবাল আনোয়ারুল ইসলাম এবং মোল্লা জালাল উদ্দিন।

মি: ইসলাম পিলগারকে জানান, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সংখ্যালঘু, হিন্দু ও খ্রিষ্টানসহ শিক্ষক, ডাক্তার, প্রফেসর ও যুবকদের প্রক্রিয়া গতভাবে নিধন করে যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, ষাটটি ছেলেকে পাকিস্তান সৈন্যরা জোর করে ধরে নিয়ে গেছে যার মধ্যে তার ১৬ বছর বয়সের ছেলেটিও রয়েছে। জালাল উদ্দিন বাংলাদেশে পাকিস্তানের এই বর্বরতা নিয়ে ব্রিটেন বাংলাদেশের জন্য কেন কিছু করছে না তা জানতে চান।

পিলগার তার রিপোর্টে আরো লিখেন, ভারত উপমহাদেশের বিভাগের পর যে দেশটি বাংলাদেশ নামে পরিচিত, যেখানে মানব জাতির দুই অংশ ৭৫ মিলিয়ন প্রতিনিধিত্বকারী বাঙালিদের জেনারেল ইয়াহিয়া খানের পশ্চিম পাকিস্তান সরকার বিভিন্ন পদ্ধতিতে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধে লিপ্ত। নিষ্ঠুরতার লক্ষণ প্রতিটি গ্রামে প্রায় একই রকম বলেও উল্লেখ করেন দৈনিক মিররের এই সাংবাদিক।

সূত্র:  বাসস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত