কেমন আছেন গোবিন্দগঞ্জের ওরা?

প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০১৬, ১৬:০১

শামীম আরা নীপা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ভূমি আন্দোলন এবং লড়াই টা একা সাঁওতালদের নয়... বাঙালী সাঁওতাল উভয়ই সেখানে নিপীড়িত এবং এটা তাদের সম্মিলিত আন্দোলন কিন্তু বিভিন্নরকম মিডিয়া কেন আন্দোলনটাকে কেবলমাত্র আদিবাসীদের আন্দোলন বলে চালিয়ে দিচ্ছে তার কারণ কিছুটা বুঝি আবার জ্ঞানপাপীদের বেয়াদবিগুলো দেখে দুঃখ পাই আবার তাদের ওসব ভূমিকা কখনো কখনো আমার বুঝের বাহিরে...

গোবিন্দগঞ্জের আন্দোলনটা একমাস বা দুইমাসের আন্দোলন নয়... এটা তাদের ন্যায্য অধিকারের আন্দোলন যেটা সময় নিবে অনেকটা যদি রাষ্ট্রপক্ষ ন্যায় না করে নাগরিকদের সাথে।

সরকারি ত্রাণ যাবে শুধু সেখানকার ভোটারদের জন্য, বাকী যারা ঐ জায়গার শরিক জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো তাদেরকে দলচ্যুত করে আন্দোলন কে দুর্বল করার/ ভেস্তে দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের যাকে প্রত্যাখ্যান করেছে গোবিন্দগঞ্জের নিপীড়িত জনতা।

কাগজে কলমে আছে ১৮৪২ একর জমি কিন্তু সরেজমিনে আরো ৬০০ একর বেশী জমি উনাদের প্রাপ্য, ন্যায্য অধিকার। তাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিলো তাদেরকে ভয় দেখিয়ে, ব্ল্যাকমেইল করে এবং এত বছর পর তাদেরকে হত্যা করে আবার সেই জমির দখল নিশ্চিত করতে চাইছে চিনিমিল এবং সাথে রাষ্ট্রযন্ত্র।

সংগ্রামী বাঙালী এবং সাঁওতালদের উপর হামলা হওয়ার পর থেকে ব্যক্তি/ ছোট বড় অনেক সংগঠন তাদের সাহায্যে এগিয়ে গিয়েছে। সেখানে পরিবার ছিলো ২ হাজার ৫ শত এবং জনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার.। এইসব আক্রমনে জেল থানা পুলিশের কারণে তারা প্রাণ ভয়ে পালিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হামলার পর প্রাথমিকভাবে সেখানে প্রায় ১৫০ পরিবারকে পাওয়া গেছিলো, তারপর ধীরে ধীরে তারা সাহস সঞ্চয় করে নিজেদের বাসভূমে ফিরে আসতে শুরু করেছে এবং সম্মিলিত জোট হয়ে আছে নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে।

এখন সেখানে আছে প্রায় ৫৫০ পরিবার যারা মাথার উপর প্লাস্টিক এর ছাউনি বেঁধেছে কিংবা কলাপাতা দিয়ে আশ্রয় তৈরী করে সন্তান ও পরিবার নিয়ে আছে। এর একটা সমাধান প্রয়োজন। নিঃসন্দেহে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। ঘর নাই, গোসল প্রস্রাব পায়খানার জায়গা নাই, শিশুদের পড়ার ব্যাবস্থা নাই, খাবার নাই, বস্ত্র নাই, চিকিৎসা নাই, এর থেকে মানবেতর জীবন আর কি হতে পারে?

সেখানে এখন প্রয়োজন মূলত তিনটি বিষয় ---
১. ত্রাণ
২. চিকিৎসা
৩. আইনি লড়াই
ত্রাণের ভেতর কম্বল এবং চাল তারা কিছু পেয়েছে যা দিয়ে আপাতত ক্রাইসিস টাকে অতিক্রম করার চেষ্টা চলছে। তাদের কে মিল থেকে ৭০০ বস্তা চাল দেয়ার কথা যেখানে তারা এখন পর্যন্ত পেয়েছে ২২৬ বস্তা...

সেখানকার মানুষদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের এখনকার প্রয়োজনটা---
১. নারীদের জন্য শাড়ী (কম হলেও ৫৫০ শাড়ী লাগবে) এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন।
২. শিশুদের জন্য দুধ।
৩. প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফার্স্ট এইড বক্স, মাল্টি ভিটামিন, স্যালাইন এবং ওষুধ।
৪. আপাতত মাথা গুঁজার জন্য ঘর (স্থায়ী সমাধান এটা নয় যেহেতু তারা তাদের জমি বুঝে পাচ্ছে না।) যার জন্য টিন এবং বাঁশ প্রয়োজন। ১৫ টি তাবু পাওয়া গেছে যার একেকটার ভেতর ১২ জন করে মানুষ থাকতে পারবে...
৫. প্রস্রাব পায়খানার জন্য ১২ থেকে ১৫ টা টয়লেট স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি।
৬.টিউবওয়েল।
৭. অন্যান্য শুকনো খাবার, ডাল, তেল, আনাজ।

ওখানে যারা আহত হয়েছিলেন তাদেরকে ঢাকা আনা হয়েছে চিকিৎসার জন্য। এইখানে একটি ব্যয় নির্বাহ করার ব্যাপার আছে। তাছাড়াও গোবিন্দগঞ্জে গিয়ে সেখানকার মানুষদের সাধারণ চেক- আপের জন্য ও ওখানে চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন যার জন্য চিকিৎসকদের একটি টীম সেখানে যাবে বলে জানা গেছে এবং সেই বিষয়ে সমন্বয় চলছে।

আইনি লড়াই এর যে বিষয়টা আছে সেখানেও সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

আমরা সাহায্য গ্রহণ এখনো জারী রেখেছি এবং আগামী ২ ডিসেম্বর আমরা আবারো ত্রাণ নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ যাচ্ছি। যে টাকাগুলো উঠছে তার পূর্নাঙ্গ হিসাব (জমা ও খরচ) আগামী ৭ ডিসেম্বরের ভেতর আপনাদের কে জানাতে পারবো বলে আশা রাখি। আমরা সবাই মিলে সাহায্য করছি উনাদেরকে, সবাই চেষ্টা করছি তারপর ও পর্যাপ্ত ফান্ড আমরা এখনো পাইনি বিধায় সাহায্য চাইছি এখনো। উনাদের প্রয়োজনটা মিটানোর মতো মিনিমাম একটা ব্যবস্থা করতে পারলেই আমরা ফান্ড তোলা বন্ধ করে দেবো সকলকে জানিয়ে।

ব্যক্তি/ ছোট বড় যত সামাজিক মানবিক সংগঠন আছে তাদের সকলের প্রতি অনুরোধ জানাই- গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল বাঙালি পরিবারগুলোকে সাহায্য করেন এবার। ওরা এই মুহুর্তে সবথেকে বেশি দুর্গত অবস্থায় আছে। ওদের খোঁজ খবর নেন, ওদেরকে বাঁচতে সাহায্য করেন। বাসস্থান, বস্ত্র, চিকিৎসাহীন অবস্থায় এই শীতকাল তাদের জন্য এক অভিশপ্ত বিপর্যয়। মানবিক হতে, স্বেচ্ছাসেবক হতে গেলে সকল রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে উঠে দুর্গত মানুষকে দেখতে হবে আমাদের। কোন অজুহাতেই গোবিন্দগঞ্জের মানুষগুলোকে অবহেলা উপেক্ষা করবেন না কেউ। ওদেরকে একবার দেখে আসেন এবং নিজের বিবেকের সাথে বোঝাপড়া করে নেন...

আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও ধন্যবাদ জানাই।
মানবতার জয় হোক!
সচেতনতা মুক্তি পাক!

শামীম আরা নীপা'র ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত