মধ্যবিত্তের ভালবাসা থাকে অপরাধের মত অপ্রকাশিত

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০০:৩১

সন্তান কোন অন্যায় করলে তাকে শাসন করার অধিকার প্রতিটা বাবা মায়ের আছে। সন্তানকে মারার অধিকারও তারা রাখে। তারা যেহেতু জন্ম দিয়েছে সেহেতু সন্তানের উপর খবরদারিটা তারা বরাবরই বজায় রাখে। নিম্নবিত্ত পরিবারে একটা বয়সের পর ছেলেরা আর বাবা মায়ের ধার ধারে না। আমাদের গ্রামের প্রায় সব পরিবারের ছেলেই বয়স ১৫/২০ এর মধ্যে বিয়ে করে বাবা মা থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন জীবনযাপন করে। তারা খোলাখুলি বিড়ি খায় ছোট বড় সবার সামনে। সিনিয়রিটির বিষয়টা তারা পাত্তা দেয় না। শেষ বয়সে বাবা মাকে দেখাশুনাও তারা করে না। মন চাইলে দিন পনেরো পরে বাবা বা মাকে ডেকে এক দুই বেলা খাবার দিলে দেয়, না দিলে নাই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাবা মায়ের সাথে সন্তানদের সম্পর্ক থাকে বৈরি। গালিগালাজ মারামারি পর্যন্ত গড়ায়। উচ্চবিত্তেও বাবা মায়ের সাথে সন্তানের দূরত্ব অনেক। তারাও একটা বয়সে স্বাধীন জীবন যাপন করে।

সমস্যা হল মধ্যবিত্তে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বাবা মায়েরা তাদের সন্তানদের তাদের বগলে নিয়ে ঘুমাতে চায় জন্ম থেকে মৃত্যু অব্দি। বাবা মা যে স্বপ্ন দেখে সে অনুসারে সন্তান মানুষ না হলে তারা পড়ে যায় বিপদে। সন্তানকে তারা শাসন করে সবচাইতে বেশি। যেহেতু প্রয়োজনের চেয়ে নিতান্ত কম উপার্জনে সংসার চালাতে হয়, নিজেদের সুখ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে সন্তানকে ভাল ভাল খাইয়ে পরিয়ে বড় করে; সে কারণে সন্তানের উপর তাদের দাবিটা ঋণদানের মত। আমি তোমার জন্য এই এই দিয়েছি, এই এই ত্যাগ করেছি, তোমাকেও আমাদের অমুক তমুক দিতে হবে। না হলে চলে অত্যাচার। 

মধ্যবিত্তের সন্তানেরা জীবন যেভাবে দেখে সেভাবে নিম্নবিত্ত আর উচ্চবিত্তের দেখার উপায় নেই। তারা থাকে সর্বদা বাবা মা এবং বড়দের আশীর্বাদ পুষ্ট সন্তানের পাল। তারা থাকে খুব আদুরে। আদরটা চলে শাসনের ফাঁকে ফাঁকে, আদরটাও যেন শাসন মিশ্রিত। গোল্ডেন পেলে সেলফোন পেতে পারো টাইপ আদর। এসব আদুরে সন্তানদের সমস্ত কাজ বাঙালি পিতা মাতা মেনে নিবে, উইদাউট রিলেশনশিপ। পিতা মাতা সন্তানের ভালোর জন্য গায়ে হাত তুলতে পারবে, সন্তান ভালবেসে নিজের ভালোলাগাকে মূল্যায়ন করে প্রেমিক/প্রেমিকার হাত ধরলে তারা তা মেনে নিবে না। তারা সন্তানের সর্বোচ্চ ভাল চায় কিন্তু সন্তানের নিজের ভালোলাগা ভালবাসার জায়গাতে তাদের অবজেকশন। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পিতামাতারা চায় সন্তান বিয়ে করবে বা প্রেম করবে তাদের দেয়া রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী মানুষকে। এইসব সন্তানেরা তাদের বাবা মাকেও কখনো হাত ধরতে দেখে না। তাদের ভালবাসাবাসি থাকে পর্দার আড়ালে অপরাধের মত অপ্রকাশিত।

এক বাঙালি পুরুষের স্ত্রী সেদিন দেশ থেকে এলো। পরদিন তার এক ইতালিয়ান বন্ধু জিজ্ঞাস করলো, কাল রাত তোমার কেমন কেটেছে? তিনি অন্যদিকে তাকিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বললেন, কাল রাতে বৃষ্টি ছিল। এমন একটা ভাব, তার স্ত্রী আসা না আসাতে তার কিছুই আসলো গেলো না। মধ্যবিত্ত বাঙালিরা তাদের ভালবাসা আড়াল করতে ভালবাসে। তারা যে সন্তান জন্ম দেয়, এক্ষেত্রে তারা এমন ভাব করে- স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনরকমের ছোঁয়াছুয়ি ছাড়াই সন্তান আকাশ থেকে পেটে পড়েছে। মেয়েরা অপারগ বলে পেট ফুলানোটা বন্ধ করতে পারে না, সম্ভব হলে তাও করতো। এরা সত্যিই এক আজব চিড়িয়া। সবকিছুকে তারা সাধুবাদ জানাবে, শুধু প্রেম ভালোবাসা আর ভালবাসার প্রকাশ ছাড়া। কেউ কারোর সাথে প্রেম করলো, একটু ভালবাসার প্রকাশ করলো, এই শুরু হয়ে গেলো চুলকানি। তাদের পেটে সবই হজম হয় উইদাউট লাভ, তা হোক নিজের সন্তানের অথবা অন্যের সন্তানের। এটা হয়তো মধ্যবিত্তের অর্থনৈতিক সামর্থ্যহীনতার সাইড ইফেক্ট।

অন্নপূর্ণা দেবী'র ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত