শিশুর অদ্ভুত আচরণ, সচেতনতা প্রয়োজন

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০১৮, ২২:৫৩

ইসাবেল রোজ

'তারে জামিন পার' নামে একটি সিনেমা এসেছিল বেশ কিছু বছর আগে। যেখানে ইশান নামের একটি ছাত্রের আর্লি লার্নিং এর কিছু করুণ দৃশ্য দেখানো হয়। ইশান অন্যান্য বাচ্চাদের চেয়ে একটু পিছিয়ে পড়েছিল। স্কুলে তার মন টিকতো না। পড়া বলতে না পারায় স্কুলের শিক্ষিকা তাকে ক্লাসের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখতো যাতে তার লজ্জা হয়। বাবা মা তাকে বুঝতে চায় না, পারেও না। বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। যেখানে নিকুম্ব স্যার অর্থাৎ আমির খান তার সমস্যাটি ধরতে পারে এবং একটু এক্সট্রা কেয়ার নেয়ায় বাচ্চাটি ভাল রেজাল্ট করতে সক্ষম হয়। আপনারা সবাই নিশ্চয় দেখেছেন ছবিটি।

মনে করুন আমাদের দেশের শিশুদের স্কুলে পাঠানো হয়। মা বাবা স্কুলে পাঠিয়ে ভাবেন আর চিন্তা নেই। সন্তান মানুষ হয়ে বের হবে। খুব স্বাভাবিক প্রত্যাশা। সব শিশু কিন্তু ক্লাসে ফার্স্ট হয় না। আবার কেউ কেউ পাশ করতেই ব্যর্থ হয়। অনেক শিশুরা অতিরিক্ত দুষ্টুমি করে, অনেকে সস্থির হয়ে এক জায়গায় বসে না, নিয়ম মানতে চায় না। তাদের কিন্তু খুব করুণ দশা হয়। সিনেমার ওই ইশানের মত শাস্তি পেতে হয়। মা বাবা বুঝে উঠতে পারেন না কি হচ্ছে? কেন হচ্ছে? বলাই বাহুল্য কোন আমির খানের সাথেও ভাগ্যক্রমে দেখা হয় না।

আপনি এমন কোন শিশুকে চেনেন বা মনে করতে পারেন যে কিনা অন্যান্য বাচ্চাদের থেকে একটু ব্যতিক্রম? একটু স্ট্রেঞ্জ মনে হয় আপনার?

কখনো কখনো কিছু বাচ্চাদের আমরা দেখি যারা কিনা বড়দের প্রত্যাশা অনুযায়ী আচরন করছে না। যেমন খাওয়ায় অনিহা, সব সময় দৌড় ঝাঁপ করা, ফার্নিচার ক্লাইম্ব করা, আলমিরার পিছনে লুকানো, কোন জোরে শব্দ সহ্য করতে না পারা, আশ্চর্জনক আচরণ করা, গায়ের জামা মুখে দেয়া, ঘুরন্ত কোন কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকা। এধরনের বহু আচরন শিশুর মধ্যে দেখা যেতে পারে। এরকম আচরন দেখলেই আমরা সেই শিশুটিকে দুষ্ট, বা খারাপ, বেয়াদপ, কথা শুনে না, অমনোযোগী নানান উপাধি দিয়ে থাকি।

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের দেশের স্কুলে এই ধরনের আচরণ করা কোন শিশুদের দেখা যায় শিক্ষক/শিক্ষিকারা শাস্তিস্বরূপ ক্লাস রুমের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা সহ নানা ভাবে শাস্তি দেয়ার চেষ্টা করে। শুধু তাই নয়, তাদেরকে খারাপ ছাত্র বা ছাত্রী হিসেবে আখ্যা দিয়ে একদম শেষ সারিতে আলাদা করে বসার ব্যবস্থা করে দেয়।

এটা একটা শিশুর মনে কতটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে সে সম্পর্কে শিক্ষকদের কোন ধারণা নেই। বাবা মাদেরও উচিত এসব সিম্পটমগুলোকে ছোট অবস্হায় খেয়াল করা এবং সাথে সাথে সাইকোলজিস্টের কাছে করণীয় জেনে নেয়া।

প্রতিটি শিশু ভিন্ন। প্রতিটি শিশুর বিশেষ চাহিদা থাকতে পারে। প্রথমেই জেনে নেই শিশুর এধরনের আশ্চর্য জনক আচরনের কারণ কি? 

কারণ একটাই- ইউনিক সেন্সরী সিস্টেম অর্থাৎ একটি বিশেষ ভাবে মস্তিষ্কে বার্তা যাওয়া। যাতে তারা অন্য শিশুদের তুলনায় ব্যতিক্রম আচরন করে। শিশুদের মধ্যে এটা খুবই সাধারন একটা sensory processor disorder (এস.পি.ডি), অটিজম (autism spectrum disorder) এবং ADHD (Attention deficit hyperactivity disorder) এসব কিছুই সেন্সরি সিস্টেম এর কারনে হয়ে থাকে। যাদের মাঝে উপরোক্ত সিম্পটম না পাওয়া যায় সে সব শিশুদের মধ্যেও সেন্সরী সিস্টেমের কিছুটা অনিয়মতার কারনে শিশুর আচরন কিছুটা ব্যতিক্রম হতে পারে।

আপনার শিশুর হয়তো অটিজম অথবা হাইপার এক্টিভিটি কিছুই ধরা পড়ল না। তাই বলে সাইকোলজিস্টের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।

সেন্সরি অরগান মস্তিষ্কে ট্রাফিক জ্যাম এর মত কাজ করে অনেক সময় মস্তিষ্কে বার্তা পাঠাতে দেরী করে। আবার কখনো দেখা যায় বেশি করে বার্তা চলে যায়। অর্থাৎ ট্রাফিক সিগনালের সব লাইট এক সাথে জ্বলে উঠে। তখন শিশুরা অদ্ভুত আচরন করা শুরু করে।

প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে আর্লি লার্নিং স্টেজে একজন এডুকেশনাল সাইকোলজিস্ট থাকা বাঞ্ছনীয়। কেননা সাধারন শিক্ষক শিক্ষিকা যেই ছাত্রকে খারাপ ছাত্র বা দুষ্ট অমনযোগী বলে শাস্তি দিয়ে থাকেন, সামান্য সহযোগিতা পেলেই সেই ছাত্রটি কিন্তু সবার সাথে এগিয়ে যেতে পারবে।

আপনার সন্তানের চাহিদা বুঝতে পারার দায়িত্ব কিন্তু আপনার। আপনি যত দ্রুত সমস্যা চিহ্নিত করতে পারবেন তত তাড়াতাড়ি সমাধানও খুঁজে পাবেন। সচেতন হোন। ভাল থাকুন।

ইসাবেল রোজ এর ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত