মা-বাবাকেই সন্তানের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠতে হবে

প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০১৬, ১৩:৫৪

কিছুদিন আগে ইংরেজি মাধ্যম এক স্কুলের এক শিক্ষার্থীকে একটি অনুচ্ছেদ লেখা নিয়ে বেশ কথা বার্তা হয়। সে বড় হয়ে কি হতে চায়- এ বিষয়ে একটি অনুচ্ছেদ লিখতে দেয়া হলে ছাত্রটি লেখে সে টেলিভিশন হতে চায়। খাতা দেখতে গিয়ে শিক্ষক কৌতুহলি হয়ে তাকে ডেকে জানতে চান সে কেন এমন লিখলো? ছাত্রটি বলে কাজ থেকে ফিরে বাবা মা সবচেয়ে মনযোগ ও গুরুত্ব দেন টেলিভিশন কে তাই বাবা মায়ের মনযোগ পাওয়ার জন্য সে টেলিভিশন হতে চায়। কৌতুহলি শিক্ষক এবার হতবাক। হতবাক আমরা সবাই।

আমরা বুঝতে পারি না নিজেদের অজান্তেই আমাদের নাড়ি ছেড়া ধনের সাথে আমরা কি অন্যায় করে কোন পথে তাকে ঠেলে দিচ্ছি। আমি এক ছেলেকে চিনি, তিন/ চার বছর বয়সে বাবা মা যাকে নিতান্ত প্রয়োজনেই একা ঘরে রেখে কাজে যেতে বাধ্য হতেন। আর ছেলেটি বাইরের আলো আর এক চিলতে আকাশ দেখবে বলে বাড়ির একমাত্র জানালা দিযে যেটা ছিল রান্নাঘরে, সেই রান্নাঘরের মেঝেতে শুয়ে জানালা দিযে আকাশ দেখতে দেখতে কখন যেন স্বপ্ন দেখতে শুরু করতো। নি:সঙ্গতা তার মাঝে অনেক অদ্ভুত মানসিকতার জন্ম দেয়।

আমরা বেঁচে থাকার তাগিদে, বাস্তবতার প্রেক্ষিতে, আবার অনেক সময় নিজের বিলাসিতাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে অবহেলা করি অতি আদরের, আকাঙ্খার সন্তানকে। অনেক সময় অর্থ দিয়ে সমাধান করতে চাই সব সমস্যার। কিন্তু সন্তান চায় এতটু স্পর্শ, আদর, মনের কথা বলার অতি আপনজন বাবা মা কে।

তাই আমাদের সময়কে অগ্রাধিকার ও গুরুত্বের ভিত্তিতে বন্টন খুবই জরুরি। এ যুগে বাবা মা কাজ করবেন এটাই বাস্তবতা। তবে আমরা বেশি স্বাধীনতার আশায় যৌথ পরিবার ভাঙবো না। অথবা এমন কাজ করবো যাতে সন্তান বাড়িতে থাকার সময়টুকু বাবা বা মা কেউ একজন কাছে থাকবো। আর আমরা বাড়িতে থেকে ফোনে ফেসবুকে টিভির সামনে থেকে মনে করি বাড়িতে থেকে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব করছি। তা হয় কি? আসলে quantity of time এর থেকে quality time বেশি জরুরি। প্রতিদিন স্কুলে যাবার সময় সাথে থাকা, বই পত্র গুছানো তত্ত্বাবধান করা, টিফিন দেয়া। স্কুল থেকে নিয়ে আসার চেষ্টা করা। স্কুল থেকে ফেরার সময় না থাকতে পারলে ফোন করে স্কুলে কি হলো, টিফিন খেলো কিনা তার খবর নেয়া। এখন সে কি করতে চায় তা জানা সে কি করুক। আপনি কি চান তার পরামর্শ তাকে দেয়া। বাড়ি ফিরে প্রথমে সন্তানের খোঁজ নেয়া, তার হাতে পানি খেতে চাওয়া। রাতে ঘুমাতে যাবার সময তার ববিচানায় ববসে কিছুক্ষণ মাথায হাত বুলিযে দেযা। মন দিয়ে তার সারাদিনের কথা শোনা। সেও যে সংসারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সেই বোধ তাকে দেয়া। কোন কোন বিষয়ে পরামর্শ নেয়া। বন্ধুদের খবরাখবর নেয়া। সে যে বয়সের সন্তান হোক না কেন!

বয়োসন্ধিকালের সন্তানের সাথে খোলামেলা আলোচনা করা, সিগারেট খাওয়া, ড্রাগ বিষয়ে তার ভাবনা, সমসাময়িক সব বিষয়। নারী পুরুষ সম্পর্ক, শারিরীক পরিবর্তন সব বিষয়েই তার বয়সোপযোগী করে আলাপ করা। সকল প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করা। ধমকে প্রশ্ন করা থেকে বিরত রাখা উচিত না। বন্ধুদের নিয়ে বাড়িতেই আড্ডা দিতে বলা। বন্ধুদের বাবা মায়ের সাথেও যোগাযোগ রাখা। তবে এটা যেন কখনোই খবরদারির পর্যায়ে না যায়। সবচেয়ে বড় কথা বাবা মা সন্তানের বিশ্বাস অর্জন করবেন এবং সন্তানকেও তারা বিশ্বাস করবেন।

সন্তানের সাথে বাবা মায়ের দূরত্ব, বাবা মায়ের প্রতি অশ্রদ্ধা সমূহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। সে বিপদ শুধু কোন পরিবারে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সমাজ পেরিয়ে রাষ্ট্র এমন কি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে। তখন শত বিলাপেও পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। শিশুর সুস্থ বেড়ে ওঠা একজন সুস্থ মানুষ হওয়ার জন্য জরুরি। এখনই সেই চরম মুহূর্ত, সন্তানের বন্ধু হবার।

সঙ্গীতা ইমাম’র ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত