গৃহিণী হয়ে আর কতকাল নারীরা?

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২১:৫১ | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২১:৫৫

কেয়া তালুকদার

স্কুলের মাঠ দেখলে বোঝা যায়, এদেশে কত নারীদের মেধার অপচয় হচ্ছে৷ সুশিক্ষিত হয়েও এই নারীরা খুব গর্ব করে বলে আমার স্বামী আমাকে চাকুরী করতে দেয় না৷ আবার বিয়ের পর বাবার পদবী ছেড়ে স্বামীর পদবী ধরো৷ আরে বোকারা তোমাদের ঘরের ভিতরে বন্দী জীবন উপহার দেবার জন্যই তোমাদের স্বামীদের এমন আহলাদ৷ 

ঘরের বাইরে চাকুরী করতে বের হলে তোমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে৷ তার সাথে আসবে সংসারে কথা বলার অধিকার৷ তোমরা টাকার জন্য স্বামীর কাছে ধর্না ধরো বলেই তারা তোমাদের কন্ঠকে দমিয়ে রাখতে পারছে৷ তোমাদের ঘরের বাইরে যেতে হলে অনুমতি লাগে, টাকা খরচের অনুমতি লাগে, শখের দু একটা জিনিস কিনতে অনুমতি লাগে৷ সব অনুমতি প্রদানের মালিক হলো স্বামীধন এবং এসব কারণেই স্বামীদের ক্ষমতা প্রদর্শনের মধ্য দিয়েই তোমাদের জীবনকে উপলব্ধি করার মত অবকাশ থাকে না৷ তাদের ইচ্ছাতেই ডিগ্রীধারী বুয়া হয়ে জীবন পার করছো৷ 

শপিং মলে গিয়ে দুহাত ভরে কেনাকেনা করাটাই জীবনের সুখ নয়৷ তোমাদের নিজের একটা জীবন আছে যা নিজের মত করে কাটাতে চাও, তাও পাও না৷ সব সময় সবকিছুর জন্য স্বামীর কাছে বায়না কেন? শিক্ষিত হয়ে ঘরে বসে শুধু সন্তানের জন্ম দেয়া আর স্বামী সেবা করে কাটাবে আর কতকাল? সেখান থেকে বেরিয়ে আসো, বাইরের জগতটাকে চোখ মেলে দেখো৷ তোমাদের কর্মদক্ষতা দিয়ে দেশের মানুষদের উপকার করো৷ স্বামী চায়নি বলে আমি উচ্চ শিক্ষিত হয়েও ঘরে বসে থাকবো এটা তো হতে পারে না৷ তোমাদের সন্তানদের সুশিক্ষিত করতেও তোমাদের আয়ের একটা অংশ ব্যয় হতে পারে৷ সংসারের অন্যান্য খরচগুলোতে সাহায্য করতে পারো৷ তখন গাড়ি, বাড়ি, শাড়ি, গহনার জন্য স্বামীর কাছে ওত পেতে থাকতে হবে না৷ স্বামীদেরও তোমাদের ঘ্যানঘ্যানানি শুনতে হবে না৷ সাবলীলভাবে সংসারটা চলবে৷ একা স্বামীর সংসারের দায়ভার থেকে তাদেরকে মুক্ত করো৷ 

স্কুলের মাঠে বসে কার কত দামী শাড়ি ও গয়না আছে এসবের হিসাব আর পরচর্চা, পরনিন্দা না করে সময়গুলো আর নিজেদের মেধাগুলোকে কাজে লাগাও৷ যার যে দক্ষতা আর শিক্ষা আছে তা নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ো কর্মক্ষেত্রে৷ বাইরের জগতে পা রাখলে বুঝবে টাকা অর্জন করে ব্যয় করা কতটা কষ্টের৷ হয়তো তোমার জীবনে এমন একটা সময় আসতেও পারে তখন স্বামী হয়তো না থাকতে পারে, তখন সেই পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে তো আবার সেই বাবা আর ভাইয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারো ৷ অথবা কোনা দুর্ঘটনায় তোমাদের স্বামীর উপার্জন করার ক্ষমতা নাও থাকতে পারে৷ তখন তো অনায়াসেই সংসারের হাল ধরতে তোমাদের সমস্যা হবে না৷ সঞ্চয়ের টাকা দিয়েও সেই সময় নিশ্চিতভাবে খরচ চালিয়ে যেতে পারবে৷

স্বামীদের অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করে তাদেরকে সংসারের চাপমুক্ত করো৷ তাহলে তারা কঠিন অসুখগুলো আর মানসিক চিন্তা থেকে রেহাই পাবে৷

নিজের অধিকার পাওয়ার জন্য গলা ফাটালেও কেউ তোমাদের ঘরে এসে দিয়ে যাবে না৷ যা দিতে পারে তোমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি৷ এর সাথেই চলে আসবে সামাজিক মুক্তি৷

জাগরণীয়ার ইমেইল থেকে