আমরা সামনে আগাইনি মোটেও

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০১৭, ০০:৫৬

১৭ কোটি মানুষের ছোট্ট এই ভূখণ্ড 'বাংলাদেশ' দুর্নীতি আর অপরাধের বিভিন্ন র‍্যাঙ্কিয়ে প্রায়শঃই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরিমাপে শীর্ষে অবস্থান করে। কিন্তু সে সব অপরাধের কারণে আজ পর্যন্ত দেশ থেকে কাউকে নির্বাসনে পাঠানো হয় নি। যুগে যুগে নির্বাসিত হয়েছে “ভিন্ন মতে” চিন্তা করা, লেখালেখি করা লোকেরা। জঘন্য সব অপরাধের ঘৃণ্য অপরাধীদের দেশের মাটিতে জায়গা হয়, রাজনীতি শুধু নয় মন্ত্রী সভায় স্থান হয়, জায়গা পায় না “ভিন্ন মতালম্বীরা”।

একমাত্র 'ছাগু সম্প্রদায়' ছাড়া কখনোই দু’জন স্বতন্ত্র ব্যক্তি সব বিষয়ে একমত হতে পারে না। যুক্তিশীল–চিন্তাশীল মানুষ’রা একই বিষয়ে ভিন্ন মত রাখতে পারেন। নানা বিষয়ে ঘরের মানুষ– বন্ধুদের সাথে মত পার্থক্য থাকেই। তাই বলে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো’র মত সাধারণ একটা সৌজন্য বোধে মানুষের এতো কার্পণ্য এতো রাজনীতি!

নির্দ্বিধায় বলছি, লেখক তসলিমা নাসরিনের জন্মদিনে একরাশ শুভেচ্ছা। চিরআয়ুষ্মতী হোন, সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন। যে কথাগুলো কেউ কখনো বলতে সাহস করেনি সেগুলো বলার চেষ্টা করার জন্যে আপনি চিরস্মরণীয়।

যারা যারা লেখক তসলিমা নাসরিন আর বেগম রোকেয়ার তুলনা করে প্যাঁচ কষাচ্ছেন, বুকে সুখ সুখ বাতাস অনুভব করছেন তাদের বিনীত কন্ঠে জানাচ্ছি, কষ্ট করে ইতিহাসটা একবার ভাল করে পড়ে নেবেন। যখন বেগম রোকেয়া বেঁচেছিলেন, তিনি কি 'নন্দিত' ছিলেন? আমাদের পূর্ব পুরুষরা কি এতোটাই দূরদর্শী আর প্রগতিশীল ছিলেন? না, ছিলেন না। তাহলে কি ঠাকুরবাড়ির মত কিছু মুসলিম বাড়িও থাকত না? ধনী মুসলমান তো অনেক ছিলেন, কারো নাম করতে পারেন যে রোকেয়া’র সমর্থনে পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন? 

হ্যাঁ, চিরকালই মুসলমান’রা গোঁড়া, নতুনকে গ্রহণ করতে ভয় পায়, প্রথা ভাঙার বিপক্ষে। বেগম রোকেয়া তার বিরুদ্ধে’র আন্দোলনকে থামাতে, মোল্লাদের সাথে আপস করতে 'সুলতানার স্বপ্ন' ও 'মতিচুর' এর মত বই লিখেছিলেন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তিনি 'মতিচুর' বইয়ের বিভিন্ন প্রবন্ধ বিভিন্নভাবে পরিবর্তন ও অর্ন্তভুক্ত ও বাদও দিয়েছেন। আপোষ রফা করার পরও তার মৃত্যুর পর হুজুররা তার নামাজে জানাজায় অংশ গ্রহণ করেনি।

বেগম রোকেয়া জন্মেছিলেন ১৮৮০ সালে। তাকে 'বেগম রোকেয়া' হিসেবে স্বীকৃতি পেতে কম পক্ষে একশ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তসলিমাকে হয়ত তার চেয়ে অনেক বেশি সময়ই অপেক্ষা করতে হবে। আমরা ফেসবুক ব্যবহার করে ডিজিটাল হলেও চিন্তা ভাবনায় আমাদের পূর্ব পুরুষদের থেকে বহুগুণে পিছিয়ে গেছি। সামনে আগাইনি মোটেও।

তবুও এই আশা বুকে রাখি, সূর্য একদিন উঠবেই– ভোর হবেই। ততদিন তসলিমা বরং পাখি হয়েই ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে পাড়ে নিজের শৈশবের গন্ধ খুঁজে ফিরুক।

তানবীরা তালুকদার এর ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত