এ বাঙালির চিরাচরিত অকৃতজ্ঞ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০১৭, ১৮:২২

'কোনো কোনো মহল শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা দিবস ১৫ই আগস্টকে জাতির নাজাত অর্থাৎ মুক্তি দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। শেখ মুজিবের হত্যাকারীরা যুক্তি দিয়ে বলে তারা একজন স্বৈরাচারীর হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করেছে। দেশের অনেক বুদ্ধিজীবিও তাতে সমর্থন দিয়ে থাকেন।

এইখানে কার্ল মার্ক্সের একটা কথা উদ্ধৃত না করে পারছি না- কোন ডাকাত সর্দার রাজাকে খুন করে রানীর শয়ন কক্ষে ঢুকে রাত্রি যাপন করতে পারে। তাতে করে ঐ ডাকাত সর্দারের উপর ঐ রাজ্য শাসনের অধিকার বর্তায় না। ১৫ই আগস্ট সেই শেখ মুজিব হত্যাকারীদের যুক্তিও সেই অনেকটা কথিত সেই ডাকাত সর্দারের অনুরূপ। শেখ মুজিব যদি জাতির বিরুদ্ধে অপরাধ করতেন জাতি স্বয়ংস্ফুর্ত ভাবে তার প্রতিবাদ করতো। জাতিকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অধিকার নিশ্চয় সেই আততায়ীদের নেই এবং ছিল না।

মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশ জন্ম লাভ করেছে তা মেনে নিতে কারো কোনো আপত্তি নেই। এমনকি যে সকল শ্রেণী, গোষ্ঠী এবং স্বাধীনতাচক্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে সরাসরি যুদ্ধ করেছে তাদেরকেও বাংলাদেশের বাস্তবতা মেনে নিতে বাঁধছে না। কিন্তু মুজিবের অস্তিত্ববাচক ভূমিকাটুকুকে মেনে নিতে তাদের ঘোরতর আপত্তি। এ এক মর্বিড মানসিকতা।'
------শেখ মুজিব এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ, আহমদ ছফা

স্বাধীনতাত্তোর শেখ মুজিব এবং স্বাধীনতা পরবর্তী শেখ মুজিবকে নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যায় অনেকের কাছে কেন জানি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শুধু স্বাধীনতা পরবর্তী ভুল ত্রুটিগুলোই কেবল প্রধান হয়ে ধরা পড়ে, তারা জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে শেখ মুজিবুরের একাত্তর সালের সাহসী নেতৃত্বকে অস্বীকার করে কেবল বাকশালী, স্বৈরাচারী একজন শাসককেই খুঁজে বের করে। এটা কেবল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যর্থতা নয়, এটা আমাদের বাঙালি জাতির চিরাচরিত অকৃতজ্ঞ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশও বলা যায়।

কোনো মানুষই দোষ বা ভুল ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু বরাবরই উনার ক্ষেত্রে উনার দোষ ত্রুটিগুলোই প্রধান হয়ে ধরা পড়েছে শুধুমাত্র এ দেশের রাজাককারপন্থী দল জামায়াত শিবিরের কাছে নয়, দেশের একটা বুদ্ধিজীবি মহলের কাছেও। বাকী দলগুলোর কাছে যত বেশি অবজ্ঞা আর যত বেশি তিরস্কারের শিকার হয়েছে শেখ মুজিব, ঠিক তত বেশিই প্রোডাক্ট ব্রান্ড হয়ে উঠেছেন উনি আওয়ামী লীগের কাছে। 
তাই তো এক দল এখন নিজেদের আদিখ্যেতা দেখাতে গিয়ে উনাকে নিয়ে মেতে উঠেন 'হায় মুজিব, হায় মুজিব' হাহাকারে আর অন্য দলের কাছে হয়ে উঠে ব্যঙ্গবিদ্রূপের 'হায় হায় মুজিব'।

ডানা বড়ুয়ার ফেসবুক থেকে