পিরোজপুর গণহত্যা দিবস আজ

প্রকাশ : ০৩ মে ২০১৭, ১৪:২০

জাগরণীয়া ডেস্ক

১৯৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩ মে পিরোজপুরে শুরু হয়েছিল পাকিস্তানী হানাদারদের বর্বরোচিত গণহত্যা। এদিন তৎকালীন জেলা শহর বরিশাল থেকে গানবোট সহ জাহাজে করে ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে কর্ণেল আতিক পিরোজপুরের হুলারহাট নেমেই শুরু করে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্ষণসহ নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ।

এদিন সকালেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক খাদ্যমন্ত্রী খান বাহাদুর আফজাল হোসেন, সাবেক এমপি সরদার সুলতান মাহমুদ সহ মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামীর শতাধিক নেতা-কর্মী হুলারহাটে পাকিস্তানী সেনাদের অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত হয়।

পাকসেনারা হুলারহাটে নেমেই তাদের এদেশীয় দালালদের চিহ্নিত করা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান-বাসাবড়িতে শুরু করে আগুন দেয়া। পিরোজপুর শহরতলির মাছিমপুরের মন্ডলপাড়া ও মিস্ত্রিপাড়ায় এ দিনই ৬২ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। শুরু হয় পিরোজপুরের গণহত্যা।

৩ মে সারাদিন শহরের আওয়ামী লীগ, ন্যাপ  (মোঃ) ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীদের বাসা বাড়িতে লুটপাট শেষে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

এদিন স্থানীয় জামায়াত ও ইসলামী ছাত্র সংঘের সহযোগিতায় পাকসেনারা শহরের খুমুরিয়া সিকদার বাড়ির ১২টি, মুক্তারকাঠীর ৬টি, বসন্তপুল এলাকায় ১১টি সহ শতাধিক ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ভস্মিভূত করা হয়।

তৎকালীন পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের পিতা ফায়জুর রহমান আহমেদ, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিষ্ট্রেট ও দায়িত্বরত মহকুমা প্রশাসক (চলতি বছর স্বাধীনতা দিবস খেতাব প্রাপ্ত) সাইফ মিজানুর রহমানসহ একাধিক সরকারি কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করে পাক সেনারা। 

মে থেকে ৭ ডিসেম্বর ৭১’ পর্যন্ত মহাকুমার বিভিন্ন এলাকায় ১৫ সহস্রাধিক নারী-পুরুষকে হত্যা, সহাস্রাধিক নারীকে ধর্ষণ এবং হাজার হাজার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় বর্বর পাকসেনারা । পিরোজপুর গণহত্যার প্রথম দিনে প্রধান শিক্ষক রাজেন্দ্র নাথ মিস্ত্রি, সহকারী শিক্ষক বরদা কান্ত মন্ডল ও বিজয় মিস্ত্রির নাম উল্লেখযোগ্য।

৮ ডিসেম্বর ৭১’ সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়া উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা পিরোজপুর আক্রমনের প্রস্তুতির খবর পেয়েই পাকসেনারা আত্মরক্ষায় পিরোজপুর ছেড়ে বরিশালে পালিয়ে যায়।

৩ মে গণহত্যার বিষয় জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক অ্যাডভোকেট এম এ মান্নান সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, পাক সেনাদের আসার খবরে আমরা যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করে কিছুটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান নেই। রাতে মহুর্মুহু গুলির শব্দ আর আগুনের লেলিহান শিখা দেখে মনে হচ্ছিল নরখাদকরা সকল নারী, পুরুষ ও শিশুর রক্তে শহরটাকে রঞ্জিত করে ফেলবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত