প্রতিরোধের মার্চ

১৯৭১ এর উত্তাল ১৫ মার্চ

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০১৭, ১১:৪৫

জাগরণীয়া ডেস্ক

ঢাকার মত দেশের বিভিন্ন শহরেও সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং চলতেই থাকে এবং এর পাশাপাশি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বীর বাঙালি। এই দিনে অফিস আদালতেও পূর্ণ কর্মবিরতি চলে। সরকারি ও বেসরকারি ভবনের শীর্ষে এবং যানবাহনে শোকের প্রতীক কালোপতাকা ওড়ে। বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাড়ি অভিমুখে সারাদিনব্যাপী স্লোগান মুখর বিক্ষুব্ধ মিছিলের পর মিছিল আসা অব্যাহত আছে। সব মিছিল এগিয়ে যাচ্ছে- সারা বাংলা যেখান থেকে পরিচালিত হচ্ছে সেই ঐতিহাসিক ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধুর ৩২ নং রোডের বাড়ির দিকে।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান কড়া নিরাপত্তার মধ্যে এই অগ্নিগর্ভ উত্তাল অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সাথে আলেচনার জন্য করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার দাবীতে অটল থেকেই সাদা রঙ্গের গাড়িতে কালো পতাকা লাগিয়ে ইয়াহিয়া খানের সাথে দেখা করতে যান। সারা বাংলা উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

এদিকে একাত্তরের ১৫ মার্চ সামরিক বাহিনীর নয়াবিধি জারির প্রতিবাদে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আহূত সমাবেশে বক্তারা ‘বাংলাদেশ আজ স্বাধীন’ বলে ঘোষণা দেন। বাংলার অধিকারকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদসরূপ শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের পাকিস্তানি খেতাব বর্জন অব্যাহত রাখেন। 

আসম আবদুর রব বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশেই সবকিছু চলবে। পাকিস্তান সরকারের সামরিক ফরমান আমরা আর মেনে চলব না।

আবদুল কুদ্দুস মাখন বলেন, বাংলাদেশে যদি কোনো আইন জারির প্রয়োজন হয় তবে তা করবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

শাজাহান সিরাজ বলেন, প্রতিপক্ষের আঘাতের জবাব দেয়ার জন্য আমাদের প্রত্যেককে প্রস্তুত থাকতে হবে।

সভাপতির বক্তৃতায় নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, গত ২৩ বছর ধরে সোনার বাংলাকে ওরা শ্মশানে পরিণত করেছে। ওদের সঙ্গে কোনো আপস নেই। এ যেন অস্তিত্বের লড়াই, আদর্শের লড়াই, বেঁচে থাকার লড়াই। ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছে, পৃথিবীর কোনো শক্তিই নেই তা নস্যাৎ করার।

এছাড়া একাত্তরের এদিনে অধ্যাপক আবুল ফজলের সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, সাংবাদিক নূর ইসলাম প্রমুখ।

বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি টেলিভিশন নাট্যশিল্পী সংসদ এদিন স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তাঁদের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আবদুল মজিদ। বক্তব্য রাখেন সৈয়দ হাসান ইমাম, ফরিদ আলী, শওকত আকবর, আলতাফ হোসেন, রওশন জামিল, আলেয়া ফেরদৌস প্রমুখ।

কবি সুফিয়া কামাল তোপখানা রোডে নারী সমাবেশের ডাক দেন। মিছিল ও শোভাযাত্রা বের করে বেসামরিক কর্মচারী ও চিকিৎসকরা। দেশরক্ষা বিভাগের বেসামরিক কর্মচারীরা সংশ্লিষ্ট দফতরের নির্দেশ উপেক্ষা করে কর্মবিরতি পালন করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত