লাইব্রেরি: প্রাচীন যুগে-বর্তমান যুগে

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:১৭

Library শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ Libre থেকে যার অর্থ বই। আর Library শব্দটির অর্থ হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে বই, পুস্তক, জার্নাল পান্ডুলিপি, অডিও ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্ট সমূহ বিধিবদ্ধভাবে বিন্যাসিত করা থাকে যাতে ব্যবহারকারী সহজে কাঙ্খিত তথ্য পেতে পারে। মানুষ যখন সভ্যতার ঊষার আলোকে উদ্ভাসিত হয় তখন থেকেই নিজেকে চিনতে ও জানতে প্রয়াস পায়। পরস্পরকে চেনার সক্সেগ সক্সেগ মানুষ তার পরিবেশকেও জানতে ও বুঝতে উৎসাহী হয়। মানুষের অনুসন্ধান স্পৃহা ক্রমে বেড়ে যায়। নব নব প্রাপ্তির আনন্দ নেশায় মানুষ উৎফুল্ল হয়ে উঠে। ক্রমে মানুষের জ্ঞান ভান্ডার হাজার হাজার তত্ত্বে ও তথ্যে ভরে উঠতে থাকে। এরূপ ক্রম লব্ধ জ্ঞান স্মৃতি শক্তিতে ধরে রাখা এ সময় অসম্ভব হয়ে উঠে। তখন মানুষ তার লব্ধ ও সংগৃহীত জ্ঞান স্থায়ী ভাবে ধরে রাখার মাধ্যম খুঁজতে থাকে। ফলে গাছের বাকল, প্যাপিরাস, শিলা, চামড়া প্রভৃতির ব্যবহার আরম্ভ হয়। মানুষ তার বিচিত্র অভিজ্ঞতা সাহিত্য দর্শন, বিজ্ঞান প্রভৃতির নানা তথ্যাদি এ সকল বস্তুতে বিস্তৃতভাবে লিখতে থাকে। এমন করে দর্শন ইতিহাস, বিজ্ঞান, শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসার ও বিস্তার লাভ করে। ক্রমে বিস্তৃত জ্ঞান ভান্ডার পরবর্তী মানুষের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা মানুষ এক সময় তীব্রভাবে অনুভব করে; এ অনুভব থেকেই একদা লাইব্রেরির উৎপত্তি ঘটে। যা বর্তমান সমাজেও অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আধুনিক তথ্যপ্রযু্িক্ত তথা বিশ্বায়নের এই যুগে গ্রন্থাগার শুধু পাঠকের চাহিদা ও রুচির সাথে মিল রেখে গ্রন্থ সংগ্রহ করার চেয়েও যুগোপযোগী সর্বশেষ তথ্যসংগ্রহ যা পাঠক, লেখক, ছাত্র, শিক্ষক, গবেষক, সমাজসেবক, বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী এবং জ্ঞান পিপাসুদেরকে মুহূর্তে তাদের কাঙ্খিত প্রত্যাশিত চাহিদাপূরণ করেছে। তাই এই যুগে গ্রন্থাগারকে তথ্যের সংরক্ষণ ও বিতরণ সেন্টার (Information preservation and Dissemination centre) বলা হয়ে থাকে।

গ্রন্থাগার একটি জাতির মন মানসিকতার উন্নয়নে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। যে জাতি যত বেশি উন্নত সে জাতির কাছে গ্রন্থাগার তত আকর্ষণীয় একটি স্থান। যিনি নিয়মিত পড়েন তিনিই পাঠক। আর একজন পাঠক গ্রন্থাগারে নিয়মিত যান এবং বিভিন্ন ধরণের তথ্য সমৃদ্ধ বই পাঠ করে আনন্দ বা তৃপ্তি লাভ করেন। এতে তার মেধার বিকাশ হয় এবং তার মাঝে একটি সৃষ্টিশীল মন গড়ে ওঠে অর্থাৎ তিনি সৃজনশীল মানুষ হয়ে ওঠেন। আর একজন সৃজনশীল মানুষের কাছে দেশ ও জাতি অনেক কিছুই প্রত্যাশা করতে পারে। সুতরাং বলা যায় গ্রন্থাগার আধুনিক সভ্য সমাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। মানুষের প্রয়োজনেই গ্রন্থাগারের উৎপত্তি। প্রাচীনকালে যে সকল সভ্যতাগুলো শিক্ষা সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, স্থাপত্য ইত্যাদি বিষয়ে উৎকর্ষ সাধন করেছিল তার সকল সভ্যতাতেই কিছু প্রাচীন সমৃদ্ধ লাইব্রেরি বিকশিত হয়েছিল। সেই প্রচীনকাল থেকেই সভ্যতা গুলো দেখলে বুঝা যায় যে জাতির লাইব্রেরি যত উন্নত ছিল সেই জাতি তত উন্নত ছিল। নি¤েœ কয়েকটি প্রাচীন লাইব্রেরি বর্ননা দেওয়া হল।
 
অসুরবানি পাল লাইব্রেরি
অসুরবানি পাল লাইব্রেরি প্রাচীন লাইব্রেরি গুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি ৬৬৯-৬২৬ ইপ তে প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্রাট অসুরবানি পাল এই লাইব্রেরিকে সর্বশ্রেষ্ট লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত করেন। তিনি যে কোন সংগ্রহকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতেন এবং প্রায় ৩০০০০০ ক্লে ট্যাবলেট (Clay Tablet) সংগ্রহ করেছিলেন। ক্লে ট্যাবলেট (Clay Tablet) এমন ধরণের লিখন উপকরণ যা মাটি দিয়ে তৈরি। মাটি যখন নরম অবস্থায় থাকতো তখন তাতে চিন্তা চেতনা লিখে আগুনে পুরিয়ে ক্লে ট্যাবলেট (Clay Tablet) তৈরি করা হত। স¤্রাট অসুরবানি পাল ছিলেন এ্যাসিরিয় সম্রাট। প্রাচীনকালে তিনি বেবিলনিয়া সুমেরিয়া অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তিনি তাঁর প্রচেষ্টায় এই অঞ্চলে অসুরবানি পাল লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। এই লাইব্রেরিতে বই-পুস্তক ছিলো না, তবে ক্লে ট্যাবলেট, প্যাপিরাস, পার্চমেন্ট, ভেলাম ও পাথরের বইয়ের সংগ্রহ ছিল। এই লাইব্রেরিতে পৌরানিক কাহিনী, ধর্মীয় কাহিনী, ইতিহাস,চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত বিষয় বেশি ছিল। তাছাড়া অন্যান্য বিষয়েরও নিদর্শন ছিল।


অসুরবানি পাল লাইব্রেরির ক্লে ট্যবলেট (Clay Tablet)

অসুরবানিপাল লাইব্রেরিটিতে অধিকতর মূল্যবান ক্লে ট্যবলেট (Clay Tablet) গুলো অপর একটি চাকতির মলাট দিয়ে কলসিতে স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখা হতো। এটি ছিল সু-শৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত একটি লাইব্রেরি। এখানে পেশাদার গ্রন্থাগারিক ও অন্যান্য কর্মচারী এ লাইব্রেরিটির দায়িত্ব পালন করতো। এই রাজকীয় লাইব্রেরিটি সরকারি ও বেসরকারি উভয় শ্রেণির বিদ্বান ব্যক্তিদের অবাধ মিলন মেলার কেন্দ্র ছিল। সকলেই এ লাইব্রেরিটি ব্যবহার করতে পারতো।

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে যে সব যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল তাতেই প্রকৃতপক্ষে এ্যাসিরিয় সভ্যতা বিধ্বস্ত হয়েছিল এবং এই সমৃদ্ধ লাইব্রেরিটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু পোড়া মাটির চাকতি বা ক্লে ট্যাবলেট (Clay Tablet) গুলো খুবই শক্ত ছিল। তাই হাজার হাজার ক্লে ট্যাবলেট (Clay Tablet) উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে যা আজও ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। 

আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি
আলেকজান্দ্রিয়ার প্রাচীন গ্রন্থাগার বা আলেকজান্দ্রিয়ার রাজ-গ্রন্থাগার ছিল প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাগারগুলির একটি। এটি মিশরের আলেকজান্দিয়া শহরে অবস্থিত ছিল। প্রায় খ্রীষ্টপূর্ব ৩০৫ B.C তে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি বর্তমান মিশরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন মিশরের রাজধানী ছিল আলেকজান্দ্রিয়া। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে মিশরের টলেমিক রাজবংশের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে এই গ্রন্থাগারটি গড়ে উঠেছিল। ৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমানদের মিশর আক্রমণের সময় পর্যন্ত এই গ্রন্থাগার কার্যকরী ছিল। গ্রন্থ সংগ্রহের পাশাপাশি এই গ্রন্থাগারে বক্তৃতাকক্ষ, সভাকক্ষ ও বাগানও ছিল। এই গ্রন্থাগার প্রকৃতপক্ষে ছিল মিউজিয়াম নামে এক বৃহত্তর গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অংশ। এখানে প্রাচীন বিশ্বের বহু বিশিষ্ট দার্শনিক পড়াশোনা করেছিলেন। মূলতঃ সেখানে গ্রীকরা বাস করত এবং মিশর ছিল গ্রীক সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। সম্ভবত টলেমি প্রথম সোটারের (৩২৩-২৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) অথবা তাঁর পুত্র টলেমি দ্বিতীয় ফিলাডেলফাসের (২৮৩-২৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) রাজত্বকালে এই গ্রন্থাগার পরিকল্পিত ও স্থাপিত হয়েছিল। এই গ্রন্থাগার ছিল মিশরের ঐশ্বর্য ও ক্ষমতার প্রতীক। সারা পৃথিবী থেকে বই ধার করে তার অনুলিপি তৈরি করা ও সেই বই গ্রন্থাগারে নিয়ে আসার জন্য এই গ্রন্থাগারে কর্মচারী নিয়োগ করা হত। অধিকাংশ বইই রাখা হয় প্যাপিরাস স্ক্রোলের আকারে। তবে ঠিক কতগুলি স্ক্রোল এই গ্রন্থাগারে রক্ষিত ছিল তা জানা যায় না। রাজা প্রথম টলেমি (Ptolemy) একজন বিদ্যানুরাগী শাসক ছিলেন। যদিও অনেক পন্ডিত তাকে বিদ্যানুরাগীর পাশাপাশি অত্যাচারী শাসক হিসাবেও চিহ্নিত করেছেন। তখনকার সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী লাইব্রেরি মূলত তার একক প্রচেষ্টাতেই মিশরে গড়ে উঠেছিল। লাইব্রেরিটি অনেকগুলি ভবনের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল। যেমন হলঘর, পাঠকক্ষ, খাবার ঘর, মন্দির ইত্যাদি একসঙ্গে যুক্ত আকারে ছিল।


প্রাচীন আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরী

আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি গড়ে উঠার পেছনে অবশ্য এথেন্স থেকে বিতাড়িত ব্যক্তি ডেমিট্রিউট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি লাইব্রেরিকে একটি Center for knowledge and learning হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। তখনকার যুগের পন্ডিত, কবি, সাহিত্যিকরা এ লাইব্রেরিতে গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব পালন করতেন যা ছিল আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির সংগ্রহ ছিল সিরাপিয়াম এক লক্ষ এবং পান্ডুলিপি সাত লক্ষ। সাধারণত এগুলো মিশরীয় হিব্রু ও ল্যাটিন ভাষায় লিপিবদ্ধ ছিল। এই গ্রন্থাগারে কোন যুগের ঠিক কতগুলি বই ছিল, তার অনুমান করা আর সম্ভব নয়। গ্রন্থ সংগৃহীত হত প্যাপিরাসের আকারে। ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পর থেকে অবশ্য কোডেক্সও ব্যবহৃত হয়েছে। আলেকজান্দিয়ার গ্রন্থাগারের গ্রন্থসংগ্রহকে কখনও পার্চমেন্ট কাগজে ধরে রাখা হয়নি। এর কারণ সম্ভবত মিশর অঞ্চলে প্যাপিরাস ব্যবসার রমরমা। তবে এই গ্রন্থাগার পার্চমেন্ট ব্যবহারের পরোক্ষ কারণ হয়ে উঠেছিল। গ্রন্থাগারের প্রচুর প্যাপিরাস প্রয়োজন হত বলে প্যাপিরাস রফতানি করা যেত না। তার বদলে পার্চমেন্ট রফতানির সূত্রপাত ঘটে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একই লেখা একাধিক স্ক্রোলে লিখে রাখা হত। এই ধরনের “বই” গুলি ছিল প্রধান সম্পাকীয় রচনা। কথিত আছে, রাজা টলেমি দ্বিতীয় ফিলাডেলফাসের রাজত্বকালে (৩০৯-২৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) গ্রন্থাগারে ৫০০,০০০-এরও বেশি স্ক্রোল ছিল। কথিত আছে, বিবাহের যৌতুক হিসেবে পারগামাম গ্রন্থাগারের ২০০,০০০ স্ক্রোল মার্ক অ্যান্টনি ক্লিওপেট্রাকে উপহার দিয়েছিলেন। যদিও, কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, অ্যান্টনি যে রোমের তুলনায় মিশরের প্রতি অধিক আনুগত্য দেখিয়েছিলেন, তা প্রমাণ করার জন্যই এই ধরনের দাবি করা হয় মাত্র। গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই গ্রন্থাগারে গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও অন্যান্য নানা বিষয়ের গ্রন্থ ছিল। সাম্রাজ্যের প্রধান গ্রন্থাগার হওয়ায় এখানে প্রাচীন বিশ্বের প্রথম এবং প্রধান গ্রন্থপাঠ সমালোচনার কেন্দ্র ছিল এই গ্রন্থাগার। একই লেখা একাধিক স্ক্রোলে বিধৃত হওয়ায় তুলনামূলক গ্রন্থপাঠ সমালোচনাও তীব্রতর হত। গ্রন্থ সংগ্রহের পর প্রধান অনুলিপিগুলি তৈরি করা হত সারা পৃথিবীর বিদ্বান, রাজপরিবার ও ধনী গ্রন্থ সংগ্রাহকদের জন্য। তা থেকে গ্রন্থের প্রচুর আয়ও হত। প্রায় সব প্রাচীন গ্রন্থেই আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগারকে প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাগারগুলির একটি বলে উল্লেখ করা হয়েছ। তবে এই গ্রন্থাগারের বিবরণ ইতিহাস ও কিংবদন্তির মিশ্রণই রয়ে গেছে। এই গ্রন্থাগারের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রাচীন মিশরের ঐশ্বর্য প্রদর্শন। গবেষণা ছিল গৌণ উদ্দেশ্য। তবে গ্রন্থাগারের সঞ্চিত গ্রন্থগুলি মিশরের শাসকের কাজে লাগত।


প্যাপিরাস সংগ্রহশালা
ছদ্ম-পত্রসাহিত্য লেটার্স অফ এরিস্টেয়াস (১৮০-১৪৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে রচিত) এই গ্রন্থাগার সম্পর্কে সবচেয়ে পুরনো তথ্যসূত্র। এই বই থেকে জানা যায়, লাইব্রেরিটি টলেমি প্রথম সোটারের রাজত্বকালে (৩৬৭-২৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) অ্যারিস্টটলের ছাত্র ডিমেট্রিয়াস ফালেরেউস গড়ে তুলেছিলেন। অন্যমতে, টলেমি প্রথম সোটারের পুত্র টলেমি দ্বিতীয় ফিলাডেলফাসের রাজত্বকালে (২৮৩-২৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এই গ্রন্থাগার গড়ে উঠেছিল। মিউজিয়ামের পাশে রাজপ্রাসাদের অঙ্গ হিসেবে অ্যারিস্টটলের লিসেয়ামের ধাঁচে এই গ্রন্থাগার গড়ে উঠেছিল। আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগারের দায়িত্ব ছিল সারা বিশ্বের জ্ঞান সংগ্রহ করা। গ্রন্থাগারের অধিকাংশ কর্মচারী প্যাপিরাসে বই অনুবাদের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। রোডস ও এথেন্সের বইমেলায় ঘুরে রাজার অর্থে প্রচুর বই সংগ্রহ করে এই কাজ চলত। গালেনের মতে, বন্দরের কোনো জাহাজে কোনো বই পাওয়া গেলেই তা গ্রন্থাগারে নিয়ে আসা হত। এই বইগুলি “জাহাজের বই” নামে তালিকাভুক্ত করা হত। তারপর সরকারি লিপিকার সেই বইয়ের অনুলিপি করতেন। মূল বইটি গ্রন্থাগারে রেখে, অনুলিপিটি মালিককে ফেরত দেওয়া হত। অতীতকালের গ্রন্থ সংগ্রহের পাশাপাশি এই গ্রন্থাগারে একদল আন্তর্জাতিক গবেষক সপরিবারে বাস করতেন। তাঁরা রাজার কাছ থেকে বৃত্তি পেতেন। গালেনের মতে, তৃতীয় টলেমি এথেন্সবাসীর কাথ থেকে এসিলাস, সোফোক্লিস ও ইউরিপিডিসের মূল বইগুলি সংগ্রহের অনুমতি চেয়েছিলেন। এর পরিবর্তে এথেন্সবাসীরা প্রচুর পনেরো ট্যালেন্ট (৪৫০ কিলোগ্রাম) ওজনের মূল্যবান ধাতু বন্ধকী রাখতে চান। তৃতীয় টলেমি সেই পরিমাণ অর্থ জমা রাখলেও মূল বইগুলি গ্রন্থাগারেই রেখে দেন। তবে এই গল্পটি টলেমিক রাজবংশের অধীনে এথেন্সের উপর আলেকজান্দিয়ার ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য প্রচারিত অসত্য গল্পও হতে পারে। আলেকজান্দ্রিয়া ছিল মিশরের মূল ভূখণ্ড ও ফারোজ দ্বীপের মধ্যে যোগাযোগরক্ষাকারী বন্দর। এখানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বণিকরা আসতেন। ধীরে ধীরে এটি একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয় এবং পরে প্যাপিরাসের অন্যতম প্রধান উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়। যা এখানে গ্রন্থ উৎপাদনেও সহায়ক হয়। এই গ্রন্থাগারের সম্পাদকেরা হোমারের গ্রন্থ সম্পাদনার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত ছিলেন। অধিকতর বিখ্যাত সম্পাদকেরা সাধারণত “প্রধান গ্রন্থাগারিক” উপাধি পেতেন। এঁদের মধ্যে জেনোডোটাস, রোডসের অ্যাপোলোনিয়াস, এরাটোস্থেনিস, বাইজান্টিয়ামের অ্যারিস্টোফেনস ও সামোথ্রেসের অ্যারিস্টারকাসের নাম উল্লেখযোগ্য। প্রথম গ্রন্থপঞ্জিকার ও পিনাকেস-এর রচয়িতা ক্যালিমাকাস এই গ্রন্থাগারের প্রথম ক্যাটালগ তৈরি করেছিলেন। তবে তিনি এই গ্রন্থাগারের প্রধান গ্রন্থাগারিক ছিলেন না। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে গবেষকরা নিরাপদতর স্থানে বড়ো রাজার পৃষ্ঠপোষকতা লাভের আশায় এই গ্রন্থাগার ছেড়ে যেতে শুরু করেন। ১৪৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অষ্টম টলেমি আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সকল বিদেশি গবেষককে বিতাড়িত করেন।


প্যাপিরাস সংগ্রহশালা

খ্রিস্টপূর্ব ২য় দশকে প্রচীন সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র স্থল মিশরের পতন শুরু হলে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির অবনতি ঘটতে থাকে। খৃস্টপূব ৪র্থ শতকের শেষ দিকে আলেকজান্দ্রিয়ায় পৌত্তলিকতার প্রভাব হ্রাস পেতে থাকে। পুরোনো এবং নব্য খৃস্টানরা আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিকে নাস্তিকতা ও ব্যাভিচারের কেন্দ্র বলে মনে করে ঘৃণা করত। ক্রমে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির গুরুত্ব হ্রাস পায়। পৃথিবীর বিস্ময় এই আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিকে ৩৯০ খ্রীস্টাব্দে বিশপ থিওকেলাস ধ্বংস করেন। তাছাড়া ৪৭ অব্দে জুলিয়াস সিজারের মিশর জয় আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির পতনের অন্যতম কারন। আবার মুসলমানদের আলেকজান্দ্রিয়া দখলের ফলেও লাইব্রেরিটির প্রভূত ক্ষতি সাধিত হয়। এইভাবেই কালের বিবর্তনে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি ধ্বংস হয়। এই গ্রন্থাগার পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। যার ফলে বহু স্ক্রোল ও বই চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়। আলেকজান্দিয়ার প্রাচীন গ্রন্থাগারের অগ্নিকাণ্ড তাই সাংস্কৃতিক জ্ঞান ধ্বংসের প্রতীক। প্রাচীন গ্রন্থগুলিতে এই অগ্নিকাণ্ডের সময় নিয়ে বিতর্ক দেখা যায়। কে এই অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছিলেন তা নিয়েও মতান্তর রয়েছে। এই ধ্বংস নিয়ে একটি জনশ্রুতি হল, বহু বছর ধরে জ্বলতে থাকা আগুনে এই গ্রন্থাগার বিনষ্ট হয়। সম্ভবত ৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জুলিয়াস সিজারের মিশর আক্রমণের সময় ২৭০ খ্রিস্টাব্দে আরেলিয়ান আক্রমণের সময়, ৩৯১ খ্রিস্টাব্দে কপটিক পোপ থেওফিলাসের নির্দেশে এবং ৬৪২ খ্রিস্টাব্দে মিশরে মুসলমান আক্রমণের সময় সংঘটিত পৃথক পৃথক অগ্নিকাণ্ডে আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়। মূল গ্রন্থাগারটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার পর, গবেষকরা আলেকজান্দিয়া শহরেরই অন্য প্রান্তে সেরাপিয়াম নামে এক মন্দিরে একটি ছোটো গ্রন্থাগার ব্যবহার করতেন। কনস্ট্যান্টিনোপলের সক্রেটিসের মতে কপটিক পোপ থেওপিলাস ৩৯১ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরটিও ধ্বংস করে দেন।

নালন্দা মহাবিহার লাইব্রেরি
নালন্দা বর্তমানে ভারতের বিহার রাজ্যের রাজধানী পাটনা জেলার অন্তর্গত একটি প্রচীন ঐতিহাসিক স্থান। ভারতের নবনির্মিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এখানেই অবস্থিত। বাংলার ভৌগলিক সীমানার বাইরে অবস্থিত হলেও নলন্দা মহাবিহারের সঙ্গে এই অঞ্চলের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। সাধারণভাবে প্রচলিত ইতিহাস নালন্দার প্রচীনত্বকে বুদ্ধের সময় পর্যন্ত নিয়ে যায়। অবশ্য এখানে পরিচালিত প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন গুপ্ত যুগের কোন কোন নিদর্শন পাওয়া যায় নি। পাল রাজাদের (আট থেকে বার শতক) সময়েই এটি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র বিন্দু ছিল। ধারনা করা হয় যে গুপ্ত বংশের শাসকগণ নালন্দা মহাবিহারের নির্মাতা। ফা-হিয়েনে এর ভ্রমর বিবরণীতে নালন্দায় বৌদ্ধ স্থাপনার কোন উল্লেখ না থাকায় এ বিষয়ে কিছুটা নিশ্চিত হওয়া যায়। সাত শতকের দিকে নালন্দা একটি শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে খ্যাতি লাভ করে। চৈনিক তীর্থ যাত্রী হিউয়েন সাঙ পড়াশুনার জন্য এখানে কয়েক বছর অতিবাহিত করেছিলেন। তাঁর সময়ে নালন্দা বিশিষ্ট পুরোহিতদের তত্ববধায়নে শিক্ষা ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। হিউয়েন সাঙ এর ভ্রমণের ৩০ বছরের মধ্যে ইৎসিঙ (৬৭৫-৬৮৫ পর্যন্ত ১০বছর এখানে শিক্ষা গ্রহণ করেন) সহ কমপক্ষে ১১ জন কোরীয় ও চৈনিক তীর্থযাত্রীসহ বিশিষ্টজনেরা নালন্দা ভ্রমণ করেন বলে জানা যায়। কনৌজের হর্ষবর্ধণ (৬০৬-৬৪৭ খ্রি:) নালন্দা বিহারের একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। 

প্রাচীন কালে 7th Century B.C তে এই নালন্দা মহাবিহারেই গড়ে উঠেছিল নালন্দা মহাবিহার লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরিতে সংগ্রহ সমূহের মধ্যে অধিকাংশই ছিল বৌদ্ধ ধর্ম সমন্ধীয় মূল বই ও সংশ্লিস্ট বইয়ের আলোচনা গ্রন্থ। এছাড়া অন্যান্য সংগ্রহশালার মধ্যে ছিল বেদ, দর্শন, সাহিত্য, চিকিৎসা বিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা সমন্ধীয় বই। উল্লেখিত সামগ্রীর বেশির ভাগ ছিল কাপড়ের বাঁধাই এবং তালপাতার উপর লেখা।


প্রাচীন নালন্দা মহাবিহার

১৩ শতকের প্রথমাংশে (১২০৪-১২০৫) বখতিয়ার খলজির বাংলা আক্রমনের সময় নালন্দা মহাবিহার লাইব্রেরিটি ধংস প্রাপ্ত হয়। আবার কারো কারো মতে ১৩ শতাব্দিতে তুর্কী সৈন্য দ্বারা এই নালন্দা মহাবিহার লাইব্রেরিটি ধংস হয়। ১৮৬০ সালে ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার কানিংহাম বড়গাঁ গ্রামের পাশ্ববর্তী স্থান হতে এই নালন্দা মহাবিহার লাইব্রেরির প্রত্নতত্ত্ব আবিস্কারের মাধ্যমে এই লাইব্রেরির ইতিহাস মানুষের দৃষ্টিগোচরে আনেন।তার আগে এই নালন্দা মহাবিহার লাইব্রেরি সমন্ধে আমাদের তেমন কোন ধারনা ছিল না।

পারগামাম লাইব্রেরি
এশিয়া মাইনরের রাজধানী ‘পারগামাম’ নামক স্থানে রাজা প্রথম এট্টালাস গ্রন্থাগারটি খ্রীষ্টপূর্ব 241 B.C তে স্থাপন করেন। এট্টালাসের মৃত্যুর পর তার উত্তসূরী রাজা ২য় ইউমিনেস লাইব্রেরির প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেন। তিনি লাইব্রেরিটির জন্য নতুন একটি ভবন নির্মান করেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লোক পাঠিয়ে পান্ডুলিপি সংগ্রহ করেন। অচিরেই লাইব্রেরিটি সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিশেষ পৃষ্ঠপোষক হিসাবে জ্ঞান বিতরণের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিণত হয়। পারগামাম লাইব্রেরির সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পান্ডুলিপি সংগ্রহ করা হত এবং নকল করার জন্য বিভিন্ন স্থানে সংগ্রাহক পাঠানো হত। রাজা ২য় ইউমিনেসের সংগ্রহশালার সংগ্রহ ছিল প্রায় ১,৬০,০০০ এর মত। সাধারণত পার্চমেন্ট ও ভেলাম এর তৈরি লাইব্রেরি উপকরণ এই পারগামাম লাইব্রেরিতে বেশি ছিল। পারগামাম লাইব্রেরির সংগ্রহগুলো বিষয় ভিত্তিকভাবে বিন্যাসিত ছিল এবং প্রতিটি গ্রন্থের সূচী তৈরি করা হয়েছিল। ফলে ব্যবহারকারিরা সহজে প্রয়োজনীয় উপকরণ খুঁজে পেত।


প্রাচীন পারগামাম লাইব্রেরির ধ্বংসাবশেষ

ইতিহসে উত্থান ও পতন অবাস্তব বা নতুন কোন ঘটনা নয়। খ্রিস্টপূর্ব ১৩৩ অব্দে রোমান সৈন্যবাহিনী পারগামাম জয় করেন এবং পারগামাম লাইব্রেরির সমস্ত উপকরণ লুট করে নিয়ে যায় মিশরে। তারা পারগামাম লাইব্রেরির সেই সংগ্রহগুলো তারা মিসরের রানী ক্লিওপেট্রাকে উপহার হিসাবে দান করেন। যা রানী ক্লিওপেট্রা সিরায়িাম মন্দির সংলগ্ন লাইব্রেরিতে যুক্ত করেন। এই ভাবেই হারিয়ে যায় সেকালের বিখ্যাত পারগামাম লাইব্রেরি। 

কার্ডোভা লাইব্রেরি
দশম শতাব্দীতে স্পেনের কার্ডোভা নগরীতে কার্ডোভা লাইব্রেরি গড়ে ওঠে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তখন স্পেনের মুসলমানরা ছিল সর্বাগ্রে। এই লাইব্রেরিটি গড়ে উঠতে কার্ডোভার ৩য় আবদুর রহমানের পুত্র স্পেনের দ্বিতীয় বাদশা হাকামের গুরুত্ব অপরিসীম। কার্ডোভা লাইব্রেরীতে যে বিশাল সংগ্রহশালা গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে ধর্মীয় গ্রন্থাদি, গণিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, দর্শন, আইন ইত্যাদি বিষয়ের পুস্তকাদি। ঐতিহাসিকদের মতে সেখানে প্রায় চল্লিশ লাখের এক বিশাল সংগ্রহশালা গড়ে উঠেছিল। সে সময় এই লাইব্রেরি ব্যবহার করার জন্য মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে লোক আসত। 


স্পেনের কার্ডোভা লাইব্রেরি

এই লাইব্রেরিতে প্রায় ১০০ জনের উপর কর্মচারী নকলনবিশ ছিলেন যাদের কাজ ছিল বিভিন্ন ভাষার বই আরবীতে অনুবাদ করা। সমসমায়িক বিশ্বে এই লাইব্রেরিটি ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ। মুলত এই প্রাচীন লাইব্রেরিটি ব্যবহার করেই মধ্যযুগের মুসলিম স্পেন শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিতে প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছিল। ৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে বাদশা হাকামের মৃত্যুর পর হতে এই লাইব্রেরিটি জৌলুস হারাতে থাকে। ১০০২ খ্রিস্টাব্দে স্প্যানীয়দের অক্রমনে কার্ডোভা লাইব্রেরিটি ধংসপ্রাপ্ত হয়।

লাইব্রেরি অব কংগ্রেস
বিশ্বের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরির নাম হচ্ছে ‘ইউনাইটেড লাইব্রেরি অব কংগ্রেস’। ১৮০০ সালের ২৪ এপ্রিল কংগ্রেস কর্তৃক কংগ্রেস ও আইন প্রণেতাদের ব্যবহারের জন্য আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। লাইব্রেরি অব কংগ্রেস মূলত: কংগ্রেস ও আইন প্রণেতাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে এই লাইব্রেরি সর্ব সাধারণের তথ্য সেবা প্রদান করে থাকে। বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে এই লাইব্রেরির তথ্য সেবা গ্রহণ করতে পারে। লাইব্রেরিটি প্রথম যাত্রা শুরু করে ৬ হাজার ৪৮৭টি বই নিয়ে। বর্তমানে এই লাইব্রেরিতে ১৬ মিলিয়ন বই এবং ১২০ মিলিয়ন অন্যান্য তথ্যাদি সংগৃহীত রয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এতে ৫৪০ মাইল দীর্ঘ সেলফ রয়েছে যাতে ৯০ মিলিয়ন বই কিংবা অন্যান্য জিনিসপত্র রাখা যাবে। এই লাইব্রেরিতে রয়েছে বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা, ছবি, হাতে লেখা বই, মানচিত্রসহ অবাক করার মতো অনেক কিছু। ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ সৈন্যরা এই লাইব্রেরিতে আক্রমণ করে এবং তারা লাইব্রেরির ৩ হাজার মূল্যবান বই পুড়িয়ে দেয়। ১৮১৫ সালের সাবেক প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন ২৯ হাজার ৯৫০ ডলার খরচ করে লাইব্রেরিটির সংস্কার করেন। কিন্তু ১৮৫১ সালে লাইব্রেরিতে আবার আগুন ধরে। এতে লাইব্রেরির দুই তৃতীয়াংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পুড়ে যায় লাইব্রেরির প্রায় ৩৫ হাজার ভলিউম বই। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের পর লাইব্রেরিতে যুক্ত করা হয় ৮২ হাজার ভলিউম বই। এখানে রয়েছে চীন, জাপান, রাশিয়ায়সহ বিভিন্ন দেশের বই। বইগুলো অধিকাংশ বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস, বিভিন্ন দেশের আইনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রচিত। এখানে রয়েছে হস্তলিখিত বইয়ের বিরাট সংগ্রহশালা। ১৮৬৪ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন লাইব্রেরিটি আরও প্রসার করেন। একই সাথে এটিকে দেখাশোনা করার জন্য লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দেন। লাইব্রেরির সংগ্রহশালা সংরক্ষণের জন্য ওই সময় কপিরাইট আইন চালু করা হয়। লাইব্রেরির জন্য নির্মাণ করা হয় স্থায়ী ভবন। নতুন রুম, গ্যালারি, সেলফসহ বিভিন্ন আসবাবপত্রের সংযোজনে লাইব্রেরিটি একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ ধারণ করে। এরপর ১৯৩৯ সালে এখানে জন অ্যাডম নামে আরও একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ১৯৮০ সালে মোট ৩টি ভবন নিয়ে গড়ে ওঠে লাইব্রেরিটি। লাইব্রেরির ভবণ নির্মাণ কাজে ৪০ জন পেইন্টার এবং ভাস্কর্য নিয়োজিত ছিলেন। লাইব্রেরির স্থপতি হলেন পেয়ারসন এবং ইউলসন। লাইব্রেরি পরিচালনার খরচে টাকা জোগাড় করতে ট্রাস্টি ফান্ড গঠন করা হয়। এরপর আমেরিকার অনেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে ওই ফান্ডে টাকা জমা দেয়া শুরু করেন। অনেকই দেন বিভিন্ন বই এবং পত্রপত্রিকা। এভাবে ধীরে ধীরে লাইব্রেরির সংগ্রহ বাড়তে থাকে। এখনও লাইব্রেরিটি বিশ্বের সবচয়ে বড় লাইব্রেরির স্থান দখল করে রেখেছে।


দি লাইব্রেরি অব কংগ্রেস লাইব্রেরি

লাইব্রেরি অব কংগ্রেস আমেরিকার জাতীয় গ্রন্থাগার। ১৮৯৭ সালে নির্মিত লাইব্রেরির স্থায়ী ভবন ও ১৯৩৯ সালে অত্যাধুনিক ভবন দুটি সমস্ত লাইব্রেরি এলাকার ১৩.২/৩ একর জমির ৬ একর দখল করে আছে। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের মোট আয়তন ৩৫ একর। সিনেটের অনুমোদন সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে বর্তমানে ৩৪ মিলিয়ন খন্ড বই এবং পুস্তিকা সহ এই লাইব্র্রেরির মোট সংগ্রহ ১১০ মিলিয়ন আইটেমের বেশী। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের অন্যান্য সংগ্রহগুলোর মধ্যে পান্ডুলিপি, জার্নাল, ম্যাপস, বিভিন্ন চুক্তি, আলোকচিত্র, অডিও ভিজ্যুয়্যাল ম্যাটিরিয়াল বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে লাইব্রেরি অব কংগ্রেস প্রিন্টেড বই পুস্তকের সংগ্রহের উপর বেশী গুরুত্ব প্রদান করে না। যেহেতু লাইব্রেরি অব কংগ্রেস এখন একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল লাইব্রেরি তাই বর্তমানে এই লাইব্রেরি ডিজিটাল সংগ্রহের উপর বেশী গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। এই লাইব্রেরি ওয়েব সাইটটি https://www.congress.gov/ ব্যবহার করে পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে এই লাইব্রেরিটি ব্যবহার করা যাবে। 

ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরি
১৯৭২ সালে বৃটিশ লাইব্রেরি এ্যাক্ট পাশ না হওয়া পর্যন্ত ইংল্যান্ডে কোন জাতীয় লাইব্রেরি ছিল না। তখন ব্রিটেনের জাতীয় লাইব্রেরি বলতে ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরিকে বোঝানো হত। ১৯৭২ সালে বৃটিশ লাইব্রেরি এ্যাক্ট পাশ হওয়ার ফলে ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরিকে ব্রিটেনের জাতীয় লাইব্রেরি হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ১৭৫৩ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্যার হ্যানম স্নোয়ান নামের একজন চিকিৎসক তাঁর ব্যক্তিগত সকল সংগ্রহ ব্রিটেনে একটি জাতীয় লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার জন্য দিয়ে যান। মূলত তাঁর সংগ্রহ এবং রাজা ৭ম হেনরী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত র্যময়াল লাইব্রেরির সকল সংগ্রহ একত্রে করে ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়। লন্ডনের বিখ্যাত মন্টেও ভবনে সর্বপ্রথম ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৫৭ সালে ব্লুমসবেরীতে এই লাইব্রেরিতে স্থানান্তরিত করা হয় যা এখনো এখানে মাথা উচু করে দাড়িয়ে রয়েছে।


ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরি

বর্তমানে এই লাইব্রেরিতে প্রচীন আলেকজান্দ্রিয়া,পারগামাম,কর্ডোভা লাইব্রেরির বিভিন্ন সংগ্রহ, পান্ডুলিপি, ম্যাপস, জার্নাল, সংগীত, অডিও ভিজুয়্যাল সংগ্রহগুলো রয়েছে। বর্তমানে এই লাইব্রেরিতে প্রায় লক্ষাধিক ইলেকট্রনিক প্রকাশনা রয়েছে। ফরম পূরণ করে যে কোন মানুষ এই লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারে। কোন বই এখানে ধার প্রদান করা হয় না কারন এটি একটি রেফারেন্স লাইব্রেরি। এটি পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড অফ ট্রাস্টি ছিল যার বর্তমান নাম বোর্ড অফ ম্যানেজমেন্ট রাখা হয়েছে। যার প্রধান একজন ডিজি (মহাপরিচালক) যিনি প্রতিবছর ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রদান করেন। এই লাইব্রেরির ওয়েব সাইটটি হল http://www.bl.uk/

বিবলিওথেক ন্যাশনেইল ফ্রান্স
বিবলিওথেক ন্যাশনেইল ফ্রান্সের জতীয় লাইব্রেরি যা ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত। এই লাইব্রেরিটি লেলিন স্টেট লাইব্রেরি, লাইব্রেরি অব কংগ্রেস ও ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরির চেয়ে বেশী প্রাচীন। ১৫০০ খ্রীস্টাব্দে একটি জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের যে চেতনা সৃষ্টি হয় তার ধারাবাহিকতায় ১৭৯৫ সালে এক বিশেষ কনভেনশনের মাধ্যমে এই লাইব্রেরিকে বিবলিওথেক ন্যাশনেইল ফ্রান্স ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে নেপোলিয়নের ব্যক্তিগত সংগ্রহ এখানে যুক্ত হয় এবং লাইব্রেরিটির সংগ্রহ আরো সমৃদ্ধ হয়। বিবলিওথেক ন্যাশনেইল ফ্রান্স একটি সরকারি সংগঠন হিসাবে ১৯৪৫ সাল হতে ফ্রান্স প্রজাতন্ত্রের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। একজন পরিচালক এবং একজন প্রশাসকের অধীনে এই লাইব্রেরিটি পরিচালিত হয়ে আসছে। বিবলিওথেক ন্যাশনেইল ফ্রান্সের সকল বাজেট ফ্রান্স সরকার কর্তৃক পেয়ে থাকে। প্রতি বছর লাইব্রেরিটির বার্ষিক রিপোর্ট ফ্রান্সের শিক্ষা মন্ত্রী বরাবর প্রদান করা হয়।


বিবলিওথেক ন্যাশনেইল ফ্রান্স

বিবলিওথেক ন্যাশনেইল ফ্রান্স লাইবেরিতে ৪০ মিলিয়ন বই, ১,৮০,০০০ বিভিন্ন ভাষার পান্ডুলিপি, ৪,০০,০০০ এর অধিক ম্যাপস, ৩৩,০০০ এর উপর সংগীত ও অডিও ভিজুয়াল উপকরণের উপর সংগ্রহ রয়েছে। এটি মূলত একটি গবেষণা লাইব্রেরি যা সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রতিদিন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯০০ থেকে ১৫০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে। যে কোন ব্যবহারকারী এই লাইব্রেরিটি ব্যবহার করতে পারেন। অনলাইনের মাধ্যমে এই পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে এই লাইব্রেরি ব্যবহার করা যায়।

লেলিন স্টেট লাইব্রেরি
লেলিন স্টেট লাইব্রেরি বিশ্ববিখ্যাত লাইব্রেরিগুলোর অন্যতম। এই লাইব্রেরির পূর্ব নাম রুমাইয়ানাসি লাইব্রেরি যা রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে অবস্থিত। ১৮০০ খ্রীস্টাব্দের প্রথম দিকে এই লাইব্রেরিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের পর এই লাইব্রেরিটিকে পূনরায় সংগঠিত করা হয়। ১৯৪০ সালে লেলিন স্টেট লাইব্রেরিকে নতুন আধুনিক লাইব্রেরি বিল্ডিং এ স্থানান্তরিত করা হয়। এ পর্যন্ত লাইব্রেরিটিকে আরো সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এই লাইব্রেরিটি পরিচালনার জন্য আলাদা আলাদা বিভাগ রয়েছে যার প্রধানগণ সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত হয়ে থাকে।


লেলিন স্টেট লাইব্রেরি

লেলিন স্টেট লাইব্রেরির বর্তমানে প্রায় তিন কোটি বই, ১ কোটি পান্ডুলিপি ও অন্যান্য পাঠ্য সমগ্রী সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া এখানে জার্নাল ও এনসাইক্লোপিডিয়া সংরক্ষিত রয়েছে। এ লাইব্রেরিতে প্রতিদিন ১৫৬ ভাষার বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্র সংগ্রহ করে থাকে। বর্তমানে এ লাইব্রেরিটি একটি ডিজিটাল লাইব্রেরি। এ লাইব্রেরিটিতে বর্তমানে ই-বুক ও ই-জর্নাল সংগ্রহের উপর বেশী জোর দিয়ে থাকে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে লেলিন স্টেট লাইব্রেরি অনলাইনে ব্যবহার করা যায়। লেলিন স্টেট লাইব্রেরি থেকে নিজস্ব কিছু প্রকাশনা প্রকাশিত হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতি বছর সমস্ত রাশিয়ার প্রকাশনার কপি কপিরাইট আইন অনুযায়ী লেলিন স্টেট লাইব্রেরি সংগ্রহ করে থাকে।

বাংলাদেশের বিখ্যাত লাইব্রেরি
শিক্ষা ও জ্ঞানের পরিপূর্ণ বিকাশের লক্ষ্যে ঢাকাসহ সারাদেশে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন লাইব্রেরী রয়েছে। নিম্নে বাংলাদেশের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য লাইব্রেরি বর্ননা দেওয়া হল।

বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার 
জাতীয় গ্রন্থাগার একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির আইনানুমোদিত তত্ত্বাবধানকারী ও সংরক্ষণকারী এবং জাতির সৃষ্টিশীল কাজের প্রহরী প্রতিষ্ঠান। প্রকৃতপক্ষে কোনো একটি দেশের পান্ডিত্য পরিমাপক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আয়না এবং দেশের গ্রন্থাগার ব্যবস্থার শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় গ্রন্থাগার কাজ করে। স্বাধীনতা লাভের পরপরই সরকারি এক বিশেষ অধ্যাদেশের অধীনে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের একটি শাখা চালু হয় এবং এর নাম দেওয়া হয় ‘বুকস্ অ্যান্ড নিউজ পেপারস্ কালেকশন ব্রাঞ্চ’। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রকাশিত গ্রন্থ ও সংবাদপত্র সংগ্রহ করাই ছিল এর কাজ। এটিই বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ধাপ। কার্যত ১৯৭৩ সাল থেকেই বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার চালু হয়। যদিও জাতীয় গ্রন্থাগারের যাত্রা শুরু হয়েছিল খুবই সাধারণভাবে তথাপি এটি খুব দ্রুত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থে শিক্ষা-দীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের চরিত্র অর্জন করে। এ প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিশেষত ইতিহাস, রাজনীতি, সংস্কৃতি, প্রশাসন, বিজ্ঞান, চিকিৎসা এবং প্রযুক্তিসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংগ্রহ করতে শুরু করে। বিশেষ করে দেশ ও বিদেশ থেকে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষ সম্পর্কিত যে কোনো ধরনের দলিলপত্র ও প্রকাশনা সংগ্রহের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর ফলে এটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কাগুজে দলিলপত্রের সবচেয়ে বড় সংগ্রহশালায় পরিণত হয়।

১৯৭৩ সালে কিছু প্রয়োজনীয় কাঠামোগত পরিবর্তন এনে সরকার বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগারকে বাংলাদেশ জাতীয় মহাফেজখানা ও গ্রন্থাগার (ডাইরেক্টরেট অব আর্কাইভস অ্যান্ড লাইব্রেরিস) অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে আসে। বর্তমানে (২০০২) এ অধিদপ্তর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান। প্রথমদিকে ঢাকায় ১০৩ নং এলিফেন্ট রোড এবং পরে ১০৬ নং সেন্ট্রাল রোডের ভাড়া বাড়িতে জাতীয় গ্রন্থাগারের কর্মকান্ড চলে। ১৯৮৫ সালে ঢাকার শেরে বাংলা নগরস্থ আগারগাঁও-এ সরকার কর্তৃক নির্মিত নিজস্ব ভবনে গ্রন্থাগার স্থানান্তরিত হয়। 

বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগারের প্রধান কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে (১) ১৯৭৪ সালে প্রণীত বাংলাদেশ কপিরাইট আইন (২০০০ সালে সংশোধিত) অনুসারে দেশের সকল প্রকাশনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা এবং এগুলির যথাযথ ব্যবস্থাপনা এবং গবেষক ও পাঠকদের কাছে প্রাপ্তিসাধ্য করে তোলা; (২) জাতীয় গ্রন্থপঞ্জি প্রস্ত্তত ও প্রকাশ করা; (৩) দেশের সকল গ্রন্থাগারের অভিভাবক হিসেবে কাজ করা; (৪) দেশ ও বিদেশের সকল গ্রন্থাগারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং তাদের সংগৃহীত বই-পুস্তক ও তথ্য আদান-প্রদান করা; (৫) জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত সকল সম্পাদকীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধের তালিকা প্রস্ত্তত ও প্রকাশ করা; (৬) গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করা; (৭) লাইব্রেরি ডাইরেক্টরি প্রস্ত্তত ও প্রকাশ করা; (৮) ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড বুক নাম্বার্স (আই.এস.বি.এন) প্রদান করা; এবং (৯) বাংলাদেশের জন্য একটি ইউনিয়ন ক্যাটালগ প্রস্ত্তত ও প্রকাশ করা। বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগারের অনেকগুলি শাখার মধ্যে রয়েছে গ্রন্থপঞ্জি শাখা, গ্রন্থাগার শাখা, বাঁধাই শাখা, প্রসেসিং শাখা, কম্পিউটার শাখা এবং মাইক্রোফিল্ম শাখা। ফক্সপ্রো, ভিজুয়াল ফক্সপ্রো এবং সিডিএস/ আইএসআইএস ব্যবস্থার মাধ্যমে সংগ্রহ ও তথ্যের জন্য গ্রন্থাগারটিকে স্বয়ংক্রিয় প্রোগ্রামের অধীনে আনা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ দুর্লভ গ্রন্থ ও দলিলপত্র স্ক্যান করে সংরক্ষণের একটি প্রোগ্রামও চালু করা হয়। দুর্লভ সামগ্রী বিশেষত পুরানো সংবাদপত্র সংরক্ষণ করার জন্য মাইক্রো ফিল্মিং প্রোগ্রামও গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে অতি সম্প্রতি একটি আধুনিক মাইক্রোফিল্ম ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে যেখানে কম্পিউটারাইজড ক্যামেরা, একটি ডাটা প্রসেসর, মাইক্রোফিল্ম রীডার এবং প্রিন্টার রয়েছে।


বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার

সংগ্রহ ও সংরক্ষণ দুর্লভ পুস্তক ও পান্ডুলিপিসহ জাতীয় গ্রন্থাগারে প্রায় চার লক্ষ গ্রন্থের সংগ্রহ রয়েছে। আরও রয়েছে বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত গবেষণা পত্রিকার প্রায় এক লক্ষ কপি। জাতীয় গ্রন্থাগারের সংগ্রহ কর্মসূচির একটি অন্যতম প্রধান দিক হচ্ছে পত্রিকা সংগ্রহ করা। ব্যক্তি বিশেষের দান থেকেও এ গ্রন্থাগারে বিপুল পরিমাণ দুর্লভ পুস্তক, পত্রিকা এবং পান্ডুলিপি সংগৃহীত হয়। সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি এবং ইউনেস্কো, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আইএলও-এর মতো বিদেশি উৎস থেকেও এ গ্রন্থাগার পুরানো দৈনিক সংবাদপত্র, গ্রন্থাদি এবং পত্রিকা সংগ্রহ করে। এ গ্রন্থাগারে উর্দু, আরবি ও ফারসি গ্রন্থ ও পান্ডুলিপি এবং বাংলাদেশের ও ভারতীয় উপমহাদেশের বিপুলসংখ্যক পুরনো মানচিত্রের সংগ্রহ রয়েছে। জাতীয় গ্রন্থাগারের সকল সংগ্রহ একটি সাত তলা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও আধুনিক সাজ-সরঞ্জামে সজ্জিত ভবনে মজুদ করে রাখা হয়। জাতীয় গ্রন্থাগারে রয়েছে নানা ধরনের পাঠক সেবা ও অন্যান্য সুবিধা। প্রায় ৭৪৩.২২ বর্গমিটার আয়তনের চারটি বড় পাঠ কক্ষ এতে রয়েছে। আরও রয়েছে একটি ৩০০ আসনবিশিষ্ট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অডিটোরিয়াম।

জাতীয় গ্রন্থাগার শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কসহ সকল প্রকার পাঠক ও গ্রন্থাগার ব্যবহারকারীদের জন্য নিয়মিতভাবে বিশেষ প্রদর্শনী, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে থাকে। এ ছাড়াা জাতীয় বই মেলাসমূহ এবং দেশের অন্যান্য সকল প্রাসঙ্গিক প্রদর্শনীতে জাতীয় গ্রন্থাগার অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ে জাতীয় গ্রন্থাগার মোটামুটি সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসলেও দেশে গ্রন্থাগারের উন্নয়ন ও প্রশাসন সম্পর্কিত আইনের অনুপস্থিতিতে বর্তমানে তীব্র অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। এ বিষয়ে বর্তমানে একটি নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগারসহ সকল গ্রন্থাগার উপনিবেশিক আমলের আইন ও রীতি-নীতিতে পরিচালিত হচ্ছে। একটি নতুন স্বাধীন দেশের পরিবর্তিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশের সঙ্গে এ আইন সম্পূর্ণভাবে অনুপযোগী। 

জাতীয় গ্রন্থাগারের প্রধান হিসেবে জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের পরিচালক প্রায় ৪০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারিসহ দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে জাতীয় গ্রন্থাগার ভবন ৩২, জাস্টিস এস.এম মুর্শিদ সরণী, আগারগাঁও, শেরে বাংলানগর, ঢাকা-১২০৭-এ অবস্থিত। সাপ্তাহিক এবং সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ গ্রন্থাগার খোলা থাকে

কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি শাহবাগ, ঢাকা
১৯৫৮ সালে ১০ হাজার ৪০টি বই নিয়ে যাত্রা শুরু। এখন বইয়ের সংগ্রহ দুই লাখেরও বেশি। জ্ঞানের কাঠামোবদ্ধ সংরক্ষণ এবং এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে সেই জ্ঞানের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ একইধারায় নিশ্চিত করছে এই গ্রন্থাগার। ই-বুক বা ডিজিটাল বইয়ের দাপটের এই সময়েও বিপুলসংখ্যক গবেষক ও পাঠক এতে ভিড় করেন। রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ গণগ্রন্থাগার সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের আবেদন এমনই। ১৯৮৩ সালে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,শাহাবাগ,ঢাকায় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর অপর নাম গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর। এই গণ গ্রন্থাগারটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহবাগ মোড়ের সন্নিকটে অবস্থিত, এর দক্ষিণ পাশে রয়েছে চারুকলা ইনষ্টিটিউট এবং উত্তর পাশে রয়েছে জাতীয় জাদুঘর ভবন।এই লাইব্রেরির নিয়ন্ত্রণাধীন বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে বেশ কিছু গণগ্রন্থাগার রয়েছে। যেমন বিভাগীয় পর্যায়ে চট্রগ্রাম,খুলনা, রাজশাহীতে একটি করে তিনটি বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার, জেলা পর্যায়ে ৬০টি জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার এবং চারটি শাখা গ্রন্থাগার রয়েছে। সুতারাং গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর এর অধিনে সারাদেশে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি,শাহাবাগ,ঢাকা সহ সর্বমোট ৬৮টি গ্রন্থাগার রয়েছে। প্রতি জেলার পাবলিক লাইব্রেরির প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন একজন লাইব্রেরিয়ান। গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে যার প্রধান কর্মকর্তা হল এই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।


কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি শাহবাগ, ঢাকা

২০০৪ সালে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার (সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরি) নামকরণ করা হয়েছিল। ২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি আবার এর আগের নামটি পুন:প্রবর্তন করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এই গ্রন্থাগারটিতে বিভিন্ন সমসাময়িক বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য বইও রয়েছে। যেমন –বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অর্থনীতি, ইতিহাস, সাহিত্য-সংস্কৃতি, উপন্যাস, আইন, ধর্মীয়, ভ্রমণ, নাটক, ছড়া, কবিতা, রান্না, চিকিৎসা, খেলাধুলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, শিল্প, ম্যাগাজিন, জার্নাল ও ট্যাবলয়েড পত্রিকা। এছাড়াও জাগতিক নানা বিষয়ে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ক্যাটাগরির বই সহ বার্ষিক সাধারন সভা, প্রতিবেদন, কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স ও সাময়িকী রয়েছে। এখানে সবমিলিয়ে পাঁচ লক্ষাধিক বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। জাতীয় গণ গ্রন্থাগারে বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ষান্মাসিক ও বাৎসরিক পত্রিকা ও সাময়িকী পাওয়া যায়। আরও রয়েছে চাকুরীর খবর ও কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স। এছাড়া এখানে পাঠকের প্রয়োজন ও চাহিদার দিক বিবেচনা করে পুরনো পত্রিকাও সংরক্ষণ করা হয়।

সম্পূর্ণ নিরিবিলি ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশে বসে বই পড়ার জন্য গণগ্রন্থাগার - এর প্রতিটি ফ্লোরে ৬০ টি টেবিল ও শতাধিক চেয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে। আলো ও বাতাসের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত লাইট ও ফ্যানের ব্যবস্থা। উল্লেখ্য এখানে মহিলা ও পুরুষদের জন্য আলাদাভাবে বসে বই পড়ার ব্যবস্থা নেই। অতীতে গ্রন্থাগারের সদস্যরা প্রয়োজনে বই বাসায় নিতে পারলেও কিন্তু বর্তমানে বই বাসায় নেয়ার কোন রকম ব্যবস্থা নেই। পাঠকদের সুবিধার্থে এই গ্রন্থাগারটিতে বইসমূহ দুই ভাগে ভাগ করে সাজানো হয়েছে। গ্রন্থাগার ভবনের দ্বিতীয় তলায় –বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অর্থনীতি, ইতিহাস, সাহিত্য-সংস্কৃতি, উপন্যাস, আইন, ধর্মীয়, ভ্রমণ, নাটক, ছড়া, কবিতা, রান্না, চিকিৎসা, খেলাধুলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, শিল্প, ম্যাগাজিন, জার্নাল সমূহ এবং তৃতীয় তলায় দেশী-বিদেশী ইংরেজী ও অন্যান্য ভাষার দুষ্প্রাপ্য বই, পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিন সমূহ বিভিন্ন সেলফে সজ্জিত রয়েছে।জাতীয় গণ গ্রন্থাগারের অভ্যন্তরে ফটোকপি করার ব্যবস্থা রয়েছে। যেকোন বই ও ডকুমেন্টরি প্রয়োজনে ফটোকপি করা যায়। প্রতি পৃষ্ঠা ফটোকপি করার জন্য ২ টাকা করে প্রদান করতে হয়। বিকেল ৫.০০ পর্যন্ত ফটোকপি সার্ভিস প্রদান করা হয়ে থাকে।শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ। এছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন সকাল ৯.০০ টা থেকে রাত ৮.৩০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে প্রতি শনিবার ২য় তলার অংশটুকু বন্ধ থাকে এবং ৩য় তলার অংশটুকু যথারীতি পাঠকদের জন্য খোলা থাকে।

কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি,শাহাবাগ,ঢাকাতে সকল পেশার,সকল শ্রেণীর লোকজন প্রবেশ করতে পারে।এখানে নিদ্দিষ্ট কোন শ্রেণীর জন্য কোন বিশেষ সেবা দেওয়া হয় না। সমাজের সকল শ্রেণী ধর্ম,বর্ণ ইত্যাদি নির্বিশেষে সকলেই প্রবেশ করতে পারে বলে ইহাকে জনগণের বিশ্ববিদ্যালয় Peoples University বলা হয়ে থাকে। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের ওয়েব সাইট www.publiclibrary.gov.bd

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ই-লাইব্রেরি
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় লাইব্রেরি, একটি বিশেষ গ্রন্থাগার। ইহা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের রেফারেন্স সেবা প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৯১ সালে পার্লামেন্টারী সরকার ব্যবস্থা চালু হলে এই গ্রন্থাগারটির নাম হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় লাইব্রেরি। ১৯৯১ সালের আগে এ গ্রন্থাগারটির নাম ছিল রাষ্ট্রপতির সচিবালয় গ্রন্থাগার। গভর্ণর হাউজ (বঙ্গভবন) এর গ্রন্থাগারটি রাষ্ট্রপতির সচিবালয় গ্রন্থাগার হিসাবে রূপান্তরিত হয়। নাম যাই হোক না কেন এ গ্রন্থাগারটি সব সময় রাষ্ট্র/সরকার প্রধানের গ্রন্থাগার হিসাবে কাজ চালিয়ে আসছে। সরকারি দলিল যেমন-ঢাকা গেজেট ১৯৪৮ সাল হতে বাংলাদেশ গেজেট শুরু হতে বর্তমান পর্যন্ত সংরক্ষিত আছে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রথম অলংকৃত ও হাতে লেখা সংবিধানের একটি খসড়াঁ সংখ্যা এখানে সংরক্ষিত আছে। ১৯৮৭ সালে রাষ্ট্রপতির সচিবলায়সহ এ গ্রন্থাগারটি আধুনিক সুবিধা সম্বলিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দ্বৈত কাঠামোর দ্বিতল ভবনে অবস্থিত।


প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ই-লাইব্রেরি

লাইব্রেরির সংগ্রহ
এই গ্রন্থাগারে বর্তমানে ৩১ হাজারের বেশী প্রকাশনা রয়েছে। এখানে লাইব্রেরির সকল প্রকাশনাসমূহ Dewey Decimal Classification নিয়ম অনুযায়ী বিন্যাসিত। এখানে ১৮ হাজারের বেশী বই অন লাইনে ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানে ৫ হাজারেরও বেশী বিভিন্ন ধরনের ই প্রকাশনাও রয়েছে। এই গ্রন্থগাওে কিছু আর্কাইভাল সংগ্রহ রয়েছে। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম হস্তলিখিত সংবিধানের খসড়াঁ এবং বিভিন্ন কমিশনের রিপোর্টসমূহ। এই লাইব্রেরি অনেক সংখ্যক পেপার, পত্রিকা ও জার্নাল ক্রয় করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস অনুবিভাগ এবং এ কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেও প্রতিদিন সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এখানে ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট ও কম্পিউটার সেবাও প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় লাইব্রেরির ওয়েব সাইট ঠিকানা http://lib.pmo.gov.bd এবং ফেসবুক ঠিকানা https://www.facebook.com/pmolibrarybd/ পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় লাইব্রেরি অনলাইনে ব্যবহার করা যায়।

মানব সভ্যতার ঊষালগ্নে থেকে কয়েকটি সমাজিক প্রতিষ্ঠান মানুষকে তার সমকাল এবং উত্তরকালে প্রভাবিত করেছে তার মধ্যে লাইব্রেরি স্মরণীয় ও উজ্জ্বলতম। যুগে যুগে কোন ব্যক্তি একক প্রচেষ্টায় অথবা কোন গোত্রের যৌথ উদ্যেগে লাইব্রেরি গড়ে তুলেছিল তাদের চিন্তা চেতনাকে তার অগ্রজদের ব্যবহারের জন্য। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাতে তা যা আজও বিদ্যমান। সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু লাইব্রেরি আজও মানুষের চিন্তালব্ধ জ্ঞান ও চেতনাকে সংরক্ষণ করে চলেছে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। আধুনিক যুগ যেহেতু প্রযুক্তির যুগ তাই আজকের তরুণ প্রজন্মকে গ্রন্থাগার খুব একটা আকর্ষণ করছে বলে আমার মনে হয় না। রাস্তাঘাটে ট্রেন, বাসে, লঞ্চে কিংবা রিকশায় দেখি ছেলেমেয়েরা মোবাইল, ল্যাপটপ, নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকছে। কেউ কেউ হয় মোবাইলে কথা বলছে, ভিডিও গেমস্ খেলছে আবার কেউ হয়ত ফেসবুক নিয়েই ব্যস্ত থাকে। এ থেকে বোঝা যায় আজকের তরুণ প্রজন্ম আধুনিক প্রযুক্তির দিকেই বেশি ঝুঁকছে। আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার অবশ্যই খারাপ কিছু নয়, কিন্তু এর পাশাপাশি বইপড়ার চর্চা যেন খুব একটা চোখে পড়ে না। বাসে, ট্রেনে, কিংবা রাস্তাঘাটে বই পড়ার চর্চা উন্নত বিশ্বে সব সময় চোখে পড়ে অথচ প্রযুক্তির দিক দিয়ে তারা বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশ। তাই আজকের তরুণ প্রজন্মকে গ্রন্থাগারমুখী করতে পারলে একটি সৃষ্টিশীল প্রজন্ম আমরা আশা করতে পারি। অনেকে বলে থাকে তথ্য ও প্রযুক্তির বিকাশের ফলে লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গেছে। আমি বলি লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা ও দায়বদ্ধতা আরো বেড়ে গেছে Because not everything on the internet is true.

লেখক: সরকারি কর্মকর্তা
ই-মেইল: [email protected]

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত