পাকস্থলীর ক্যানসারের কারণ ও প্রতিকার

প্রকাশ | ১৪ মে ২০১৭, ০০:২০

অনলাইন ডেস্ক

৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মাঝে মধ্যেই পেট ব্যথা হয়। চিকিৎসকেরর কাছে গেলে তিনি দেখেন তার ওজন ক্রমশ কমছে। পেট ব্যথার সঙ্গে ওজন কমে যাওয়ায় লক্ষণ ভাল নয়। এন্ডোস্কোপি করা হলে রিপোর্টে দেখা গেল পাকস্থলিতে ক্যানসার হয়েছে৷ পাকস্থলীতে ক্যানসারের এর পিছনে দায়ী মূলত কিছু বাজে অভ্যাস। ধূমপান, আলসারের ঝাঁজে বাড়ছে পাকস্থলীতে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি।

পাকস্থলী ক্যানসারের হাত থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে জানতে হবে কীভাবে কাটাবেন দৈনন্দিন জীবন। আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন থেকে জেনে নিন, পাকস্থলী ক্যানসারের হাত থেকে বাঁচতে হলে আমাদের করণীয় সম্পর্কে-

হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি-ব্যাকটেরিয়াই এই ক্যানসারের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। এই ব্যাকটেরিয়া থেকে ইনফেকশন অনেকসময় ক্যানসারের কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী এটি খুবই শক্তিশালী কারসিনোজেন। সাধারণত এই ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন কম-বেশি সবার শরীরেই হয়ে থাকে। তবে ইনফেকশন মানেই তা থেকে ক্যানসার হবে এমন নয়। ইনফেকশন দীর্ঘদিন থাকলে পাকস্থলীর কোষে এমন কিছু পরিবর্তন আনে যা ক্যানসার হতে সাহায্য করে।

ধূমপান পাকস্থলীর উপরের অংশের ক্যানসারের সম্ভাবনা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। কারও গ্যাস্ট্রিক সার্জারি হলে অথবা আলসার ওষুধে না সারলে সার্জারি করা হয়। পাকস্থলীর এই আলসার সার্জারির দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হিসাবে অনেক সময় ক্যানসার দেখা যায়। পাকস্থলীর মধ্যে পলিপ জাতীয় কিছু থাকলে তা থেকেও ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে। এমনকী দীর্ঘদিন ধরে নস্যির নেশা থাকলেও এই ক্যানসার শরীরে থাবা বসাতে পারে।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে আবার দেখা যায়, পানি থেকে হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি-ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয়। মল থেকে মুখের মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়া পৌঁছালে শরীরে সংক্রমণ ছড়ায়। যারা খুব অপরিষ্কার ভাবে থাকেন, নোংরা থালায় খান তাদের এই ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের প্রবণতা বেশি।

খাওয়াদাওয়া
ভিটামিন সি, এ, ই ও ফাইবার জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে। ডায়েটে বেশি করে রাখা প্রয়োজন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট(টক ফল, ভিটামিন এ) জাতীয় খাবার।

স্মোকড ফুড, খুব বেশি নুন দেওয়া মাছ, আচার বেশি খাওয়ার অভ্যাস ডেকে পাকস্থলীর ক্যানসার। নোংরা খাবার, দীর্ঘক্ষণ খোলা থাকা খাবার, বাসি খাবারে মিশে থাকে নাইট্রেট ও নাইট্রাইট জাতীয় উপাদান। এই উপাদান শরীরে গেলে যে রাসায়নিক পরিবর্তন হয় তা কোষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও ক্যানসারের জন্য দায়ী। রেড মিট কম খান। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। পাকস্থলীর ভাল রাখতে টাটকা খাবার, সবুজ শাকসবজি, কম তেল-মশলা জাতীয় খাবার, কম নুন যুক্ত স্বাভাবিক খাবার খান।

চিকিৎসা
এন্ডোস্কোপি করতে হবে। ঠিক সময়ে ক্যানসার ধরা পড়লে এবং সার্জারি করলে ক্যানসার অনেকক্ষেত্রেই সম্পূর্ণভাবে সেরে ওঠে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেরিতে ক্যানসার ধরা পড়ায় রোগ সারার সম্ভাবনা কমে। পাকস্থলী ক্যানসারের সবচেয়ে সফল চিকিৎসা অপারেশন। সার্জারি ও কেমোথেরাপি করে পাকস্থলী ক্যানসার সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব।

পুরুষ নাকি মহিলা
পাকস্থলী ক্যানসারে পুরুষরা মহিলাদের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হন। বিশেষত যাদের বয়স পঞ্চাশের বেশি তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। তবে শুধু বয়স্করাই নন, এখন কম বয়সিদের মধ্যেও এই ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ছে। নারীরা তুলনায় কম হলেও ব্যতিক্রম নন। অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস-ই পাকস্থলী ক্যানসারের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। বহু বছর ধরে অ্যাসিডিটি অথবা হঠাত্‍ করেই খুব বাড়াবাড়ি ভাবে অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দিলে অবিলম্বে সতর্ক হোন।