ইমারজেন্সি পিল এর খুঁটিনাটি

প্রকাশ : ২২ জুন ২০১৬, ১৬:৫৪

জাগরণীয়া ডেস্ক

অসংরক্ষিত শারীরিক মিলন। ইমারজেন্সি কনট্রাসেপটিভ পিল খাওয়ার পর কেটে যায় মাসখানেক। পিরিয়ড হয় না। যেতে হয় ডাক্তারের কাছে। পরীক্ষা করে বোঝা যায় সে গর্ভবতী। গর্ভপাত করাতে ডক্তার একটি ওষুধ দেন। বলে দেন সোনোগ্রাফি করিয়ে রিপোর্ট দেখিয়ে তবে ওষুধ খেতে হবে। কিন্ত্ত সোনোগ্রাফি না করিয়েই খাওয়ানো হয় ওষুধ। তার দিনদুয়েকের মাথায় আরেকটি। এবং তার খানিকক্ষণের মধ্যেই অসহ্য পেটব্যথা, পেট ফোলা নিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় মেয়ে। তড়িঘড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার বলেন 'শক '-এ চলে গেছে সে। প্রেশার আনরেকর্ডেবল। কারণ? একটোপিক প্রেগন্যান্সি রাপচার। সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হলে বাঁচানো যাবে না তাকে।

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দিন সাতেক যমে-মানুষে টানাটানির পর চোখ খোলে মেয়ে। আর দলবল নিয়ে বাবা হাজির হন ওই ডাক্তারের চেম্বারে। ধারণা, তাঁর ওষুধেই ঘটেছে এই অঘটন। আর তখনই জানা যায় এটা ছিল নেহাতই এক সমাপতন।

সমাপতন!
সমাপতনই। যে ওষুধ দিয়েছিলেন ডাক্তার তাতে প্রায় সুনিশ্চিত ছিল গর্ভপাত। কিন্তু বিপদ এসেছে অন্য দিক দিয়ে। মেয়েটির গর্ভসঞ্চার হয়েছিল জরায়ুর পরিবর্তে ফ্যালোপিয়ান টিউবে। ওষুধ খাওয়ার আগে নিয়ম মতো সোনোগ্রাফি করলে ধরা যেত এই খবর। এবং সেক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার পরিবর্তে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিত্‍‍‌সা করালে এ রকম হতো না। এই ওষুধ কাজ করে জরায়ুতে গর্ভসঞ্চার হলে। টিউবে হলে তার কিছু করার থাকে না। উপরন্তু টিউবাল প্রেগন্যান্সি বিপজ্জনক এক ব্যাপার। তড়িঘড়ি ব্যবস্থা না নিলে কী হতে পারে তা তো মেয়েটির ক্ষেত্রেই দেখা গেল। আর যেহেতু ওষুধ খাওয়া ও ভ্রূণের চাপে টিউব ফেটে যাওয়া প্রায় একই সময় ঘটেছে, সবার ধারণা হয় এই ওষুধের জন্যই এ রকম হয়েছে। কিন্তু বুঝতেই পারছেন, সেটা সমাপতন ছাড়া কিছুই নয়।

গর্ভপাতের ওষুধ নিরাপদ?
অবশ্যই। কাজেরও বটে। পিরিয়ড মিস করার ৭ সপ্তাহের মধ্যে খেলে ৯৫ -৯৬ শতাংশ তার সাফল্যের হার। বাকি ৪-৫ শতাংশের ক্ষেত্রে আংশিক গর্ভপাত হতে পারে। বা মোটেও না হতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে ওয়াশ করে নিতে হয়। তবে ডাক্তার না দেখিয়ে ওষুধ না খাওয়াই ভালো। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, সব দিক আটঘাট বেঁধে তবে ওষুধ দেবেন।

গর্ভপাতের ওষুধ খাওয়ার নিয়ম
● অসুরক্ষিত সহবাসের পর পিরিয়ড মিস হলে তার ৫ -৭ দিনের মাথায় ইউরিনের প্রেগ। কালার টেস্ট করে দেখতে হবে গর্ভসঞ্চার হয়েছে কি না। রিপোর্ট পজিটিভ হলে তো হয়েই গেল, না হলে ৫-৬ দিনের মাথায় আবার পরীক্ষা করাতে হবে।
● রিপোর্ট পজিটিভ হলে ভ্রূণের বয়স ও গর্ভসঞ্চার জরায়ুতেই হয়েছে কি না তা জানতে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো তলপেটের সোনোগ্রাফি করাতে হবে।
● জরায়ুতে গর্ভসঞ্চার ৭-৯ সন্তাহের মধ্যে হলে প্রথমে মিফেপ্রিস্টন নামের ওষুধ খেতে হবে। তার ৪৮ ঘণ্টার মাথায় খেতে হবে মিসোপ্রোস্টোল। এরপর ২-৩ দিনের মধ্যে পিরিয়ডের মতো ব্লিডিং শুরু হয়ে যাবে। সঙ্গে পেটব্যথা থাকবে। তবে দু-একটা ব্যথার ওষুধেই তাকে আয়ত্তে রাখা যাবে।
● এর সপ্তাহ দুয়েক পরে আরেকবার সোনোগ্রাফি করে দেখতে হবে গর্ভপাত সম্পূর্ণ হয়েছে কিনা। এছাড়া যদি ওষুধ খাওয়ার পর থেকে অল্প অল্প করে ব্লিডিং চলতেই থাকে, পেটে ব্যথা থাকে, তাহলেও ইনকমপ্লিট। অ্যাবরশনের কথা মাথায় রেখে সোনোগ্রাফি করে পরিস্থিতি যাচাই করে ওয়াশ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

ইমারজেন্সি পিল
গর্ভ সঞ্চার হয়ে গেলে আর ইমারজেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিলের কোনও ভূমিকা নেই। এই ওষুধ ওভিউলেশনকে পিছিয়ে গর্ভ সঞ্চার হওয়া আটকায়।

১৫০ মিগ্রা লিভোনরজেস্ট্রিল ট্যাবলেট খেতে হয় অসুরক্ষিত সহবাসের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খেলে সাফল্যের হার ৯৫ শতাংশ , ২৫ -৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খেলে ৮৫ শতাংশ , ৪৯-৭২ ঘণ্টার মধ্যে খেলে তা নেমে আসে ৫৮ শতাংশে। ১২০ ঘণ্টার মধ্যে খেলেও কিছুটা কাজ হয়। তবে সাফল্যের হার যে অনেক কমে যায় তা বলাই বাহুল্য।

ইমারজেন্সি পিলের ভালো-মন্দ
● আকস্মিক অঘটনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খেলে নিলে বিপদের আশঙ্কা এসে ঠেকে তলানিতে।
● প্রচুর পরিমাণে প্রজেস্টেরণ হরমোন থাকলেও কারও কারও ক্ষেত্রে সামান্য গা গুলানো, বমি, মাথা ঝিমঝিম, ক্লান্তি, একটু মাথাব্যথা, পেট ফাঁপা, কখনও সখনও সামান্য ব্লিডিং ছাড়া আর কোন সমস্যা হয় না।
● এই পিল খেলে পরের পিরিয়ডটা ক'দিন পিছিয়ে যেতে পারে। পিল খাওয়ার পর মোটামুটি সন্তাহ তিনেকের মধ্যে পিরিয়ড হয়। তা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
● নিয়মিত খেলে, অর্থাত্‍‌ এর অপব্যবহার হলে ভবিষ্যতে ডায়াবিটিস, গলব্লাডারে পাথর বা ব্রেস্ট ক্যান্সারের ব্যাপারে একটু সজাগ থাকা দরকার।

ইমারজেন্সি পিল কখন খাবেন না
● কখনও হার্টঅ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়ে থাকলে।
● মাইগ্রেনের সঙ্গে নিউরোলজিকাল কিছু উপসর্গ থাকলে।
● জন্ডিস বা বড় ধরণের লিভারের অসুখ থাকলে।
● পেরিফেরাল ভ্যাসকুলার ডিজিজের রোগী হলে।
● নিয়মিত গর্ভনিরোধক পদ্ধতির পরিবর্তে।

(স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পার্থ মুখোপাধ্যায় এর সাক্ষাৎকার অবলম্বনে।)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত