ওজন ঠিক রাখার খাবার

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:৩৬

সাদিয়া ইসরাত স্মৃতি

আমরা সকলেই সুন্দর হতে চাই, সুস্থ থাকতে চাই। নিত্য নিয়ম, সময়ের স্বল্পতা, আমাদের আলস্য, অনীহা সব মিলিয়ে নিজের খেয়াল রাখাটা সব সময় হয়ে উঠে না। কিন্তু নিজেকে ফিট রাখা জরুরী। বাড়তি ওজন আমাদের প্রধান সমস্যা।

ওজন  বেড়ে যাচ্ছে, মোটা হয়ে যাচ্ছি। কিভাবে, কি করলে ভালো থাকব, ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকবে। কম বেশি সবার মাঝে এই টেনশন। অনেকে ওজন কমানোর জন্য অনেক বিধি নিষেধ মেনে চলেন, কিন্তু এত কিছুর পরও ওজন কমে না। আজকে আমি চেষ্টা করব আপনাদের এই চিন্তা কিছুটা কমাতে। আশা করি আপনাদের অনেকের উপকারে আসবে। এর জন্য আপনাদের কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। আসুন জেনে নেই ভালো থাকার জন্য, ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য আমাদের কি কি করতে হবে।

স্বাস্থ্যকর নাশতা
আমাদের মাঝে অনেকের সকালে না খাওয়ার অভ্যাস আছে। মোটা হয়ে যাব এই ভয়ে সকালের খাবার খাই না অনেকেই। এটা একদমই উচিত না। সকাল এর খাবার সবচেয়ে ভালো হওয়া উচিত। আপনি ডায়েটে থাকুন কিংবা নাই থাকুন অন্তত প্রতিদিন সকালে স্বাস্থ্যকর নাশতা করবেন। প্রতিদিন সকালের নাশতায় প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখবেন, যা আপনার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।

অল্প খাওয়া
দিনে অল্প করে খেলে আপনার শরীরের বাড়তি ওজন কমে যাবে। এর মানে এই না, খাওয়া ছেড়ে দিবেন। এর জন্য যা করবেন তা হলো- খাওয়ার সময় বড় প্লেটের বদলে ছোট প্লেটটি বাছাই করতে হবে এবং আলু, পাস্তা, ভাত এর বদলে মাংস ও শাকসবজি বেশি করে খেতে হবে। এক সাথে বেশি করে না খেয়ে, অল্প পরিমাণে তিন চার বার খেতে হবে। এতে করে আপনার শরীরের ওজন বাড়বে না বরং নিয়ন্ত্রনে থাকবে।

কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার
ওজন কমানোর আরেকটি উপায় হলো সব ধরনের কার্বোহাইড্রেট খাবার কম খাওয়া। এই  কাজটি হয়ত অনেকের কাছেই অনেক কঠিন মনে হবে, কিন্তু এটি বর্জন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া স্টার্চ এবং পরিশোধিত চিনি বর্জন করতে হবে। আপনাকে প্রোটিন জাতীয় খাওয়া খেতে হবে। যদিও এটি ওজন কমানোর কোনো সেরা কৌশল না, তবুও ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকবে।

পানি পান করা
ওজন কমানোর সবচেয়ে ভালো উপাদান হলো পানি। খাওয়ার আগে এবং পরে পানি পান করুন। এটি আপনার পেটকে ভরা রাখবে আর খাবার কম খেতে সাহায্য করবে। যদি আপনি প্রায় সময়ই বেশি করে খাবার খান এবং এটিই যদি আপনার ওজন বাড়ার প্রধান কারণ হয়ে থাকে তাহলে সবসময় আপনার খাওয়ার আগে বেশি করে পানি পান করবেন। পানি পান আপনার শরীরের শুধু ওজনই কমাবে না, এটি আপনার ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে।

সবজির শরবত
ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন সবজির শরবত বা জুস পান করা ভালো। এই জুসে এক দিকে যেমন আশ থাকে, তেমনি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানও থাকে।

চিনিমুক্ত চা
চিনিমুক্ত চা, বিশেষ করে সবুজ চা শরীরকে খুব তাড়াতাড়ি ফ্রেশ করে তোলে। গ্রীনটি ওজন নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।

ব্ল্যাক কফি
সকালে এক কাপ ব্ল্যাক কফি আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। কেননা, এই কফিতে ক্যাফেইন আছে, যা ক্ষুধা কমায়, আবার স্নায়ু সচল রাখে।

সর তোলা দুধ
দুধ হচ্ছে প্রোটিন, ভিটামিন ডি আর ক্যালসিয়াম এর চমৎকার উৎস। কিন্তু ওজন কমাতে চাইলে অথবা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে অবশ্যই সর তোলা দুধ খেতে হবে।

খাদ্য তালিকা তৈরি 
ওজন কমানোর আরেকটি উপায় হলো খাদ্য তালিকা তৈরি করা। এটি তৈরি করলে আপনি প্রতিদিন কী খাচ্ছেন আর কোন খাওয়াটি পরিবর্তন করা প্রয়োজন তা দেখতে পাবেন। অনেকে মনে করে এটি কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ না, কিন্তু এই জিনিসটা আসলে অবিশ্বাস্যভাবে কার্যকরি। এছাড়া এই তালিকাটি তৈরি করতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

পরিমাণ মতো ঘুম 
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম সবার জন্য অতি প্রয়োজনীয় কারণ, যখন আমরা অনেক বেশি ক্লান্ত থাকি তখন আমাদের স্বাভাবিকভাবেই অনেক ক্ষুধা পায়। সুতরাং আমরা ব্যায়াম ছাড়াই অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাইলে আমাদের রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ছয় ঘন্টা ঘুমানো উচিত। কারো ঘুম পর্যাপ্ত পরিমাণে না হলে দৌড়ানো, জগিং করাই তার জন্য ঠিক। এতে করে ওজন বাড়ার  সম্ভাবনা কম থাকে।

ক্যালোরি গণনা করা
ওজন কমানোর জন্য খাদ্য তালিকার মতো ক্যালোরি গণনাও একটি কার্যকরি উপায়। আপনার ক্যালোরি কতখানি বার্ন হয়েছে তা দেখতে হবে। এতে করে আপনি খাবার নিয়ে আরো বেশি সচেতন হবেন। 

যখন ওজন কমানোর কথা আসে তখন সবার মাথায় যে জিনিসটা কাজ করে তা হলো ব্যায়াম। তবে উপরের উপায়গুলো কাজে লাগাতে পারলে আপনার ওজন সব সময় নিয়ন্ত্রনে থাকবে। অতিরিক্ত ওজন হওয়ার মূল কারণ হলো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাওয়া। বাড়তি খাবারগুলো দেহে ফ্যাট হিসেবে থেকে যায়, ফলে ওজন বেড়ে যায়। আসুন আমরা সচেতন হই, সুস্থ থাকার জন্য খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখি।

লেখক: নিউট্রিশনিস্ট
সূত্র: হ্যালো অদিতি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত