প্রেগন্যন্সিতে ডায়েট কন্ট্রোল এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:৩৯

সাদিয়া ইসরাত স্মৃতি

আমি আজকে আলোচনা করব প্রেগন্যন্সিকালীন ডায়েট কন্ট্রোল এবং এই সময়ে মায়েদের যেসব পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন করা উচিত, সেগুলো নিয়ে।

গর্ভবতী মায়েরা যেসকল বিষয় নিয়ে চিন্তায় থাকেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডায়েট। যেসব গর্ভবতী মা অতিরিক্ত মোটা তারা অনেকেই ডায়েট কন্ট্রোল করে থাকেন এবং গর্ভাবস্থায়ও তা চালিয়ে যেতে চান। অনেকেই নিশ্চিত হতে পারেন না যে গর্ভাবস্থায় ডায়েট কন্ট্রোল করা উচিত কিনা। কিন্তু গর্ভাবস্থায় ডায়েট কন্ট্রোল করা ঠিক না। কেননা, গর্ভাবস্থায় আশা করা হয় যে মায়ের ওজন ২৫ থেকে ২৭ পাউন্ড বেড়ে যাবে। এমনকি যেসব মা খুব বেশি মোটা, তাদেরও ডায়েট কন্ট্রোল করা উচিত নয়। এর একটি কারণ হচ্ছে গর্ভবতী মা যা খান, তা শুধু তিনি নিজেই গ্রহণ করেন না। বরং, তার গর্ভে যে  শিশুটি সেও এই খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করে। ফলে গর্ভবতী মা যখন উপবাস করেন, তখন শিশুও এই উপবাসের শিকার হয় এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। কোন মা নিশ্চয়ই তা চান না। এই অতিরিক্ত ২৫ থেকে ২৭ পাউন্ড ওজন শুধু শিশুর ওজন বা গর্ভের অন্যান্য অঙ্গের ওজন বৃদ্ধিজনিত কারণে বাড়বে না, বরং কিছু অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণজনিত কারণেও বাড়বে। যেহেতু আপনি এখন আর একা নন, বরং শরীরের ভেতর আরেকটি জীবনকে বয়ে বেড়াচ্ছেন, তাই আপনার উচিত হবে সেই শিশুটির জন্যও খাবার গ্রহণ করা। ফলে আপনার উচিত হবে ডায়েট কন্ট্রোল না করে অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাদ্য সুষম পরিমাণে গ্রহণ করা। সাধারণ মানুষের প্রতিদিন ২১০০ থেকে ২৫০০ ক্যালরি গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু আপনি যখন গর্ভবতী,  তখন আপনার শিশুর জন্য, গর্ভাবস্থায় পরিবর্তনশীল দৈহিক অবস্থা এবং অঙ্গসমূহের জন্য অতিরিক্ত ৩৫০-৫০০ ক্যালরি দরকার।

আপনি বরং গর্ভধারণের আগে ডায়েট কন্ট্রোল করতে পারেন এবং গর্ভধারণকালীন সময়ে নিয়ন্ত্রিত খাবারের অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে পরবর্তী সারাজীবন তা অনুসরণ করতে পারেন যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

তবে অতিরিক্ত ক্যালরি এবং চর্বি গ্রহণ করার মানেই এই নয় যে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে খাদ্য গ্রহণ করে বেপরোয়া ভাবে ওজন বাড়িয়ে তুলবেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালরি এবং চর্বি আপনার এবং শিশুর জন্য দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ডেকে আনবে। তাই এইসময় পরিমিত এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ আবশ্যক। বাচ্চার শারিরিক সুস্থতা নির্ভর করে বাচ্চার জন্মের পূর্বে মায়ের খাদ্যাভ্যাসের উপর। তাই প্রত্যেক মায়েরই উচিত গর্ভকালীন সময়ে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা। যে সকল খাবার প্রেগন্যান্ট মায়েদের খাওয়া উচিত সেগুলো হলো:

দুধ
দুধে রযেছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও মিনারেল। যা আপনাকে একটি সুস্থ ও সুন্দর বাচ্চা জন্ম দিতে সহায়তা করবে এবং বাচ্চার শারিরীক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে।
 
ডিম
ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন এবং বিভিন্ন প্রকার প্রয়োজনীয় ভিটামিন। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে বাচ্চা জন্মের আগের তিন মাস যদি কোন মা নিয়মিত একটি করে দেশি ডিমের সাদা অংশ খান তবে তা সুস্থ বাচ্চা জন্মদানে সহায়ক হবে।

কাজুবাদাম
কাজুবাদামে রয়েছে হাইকোয়ালিটির প্রোটিন, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, এবং দরকারি অ্যামাইনো অ্যাসিড। যা গর্ভাবস্থায় বাচ্চার মানসিক বিকাশ, হাড়ের গঠন মজবুত ও উজ্বল ত্বক পেতে সাহায্য করে।

নারিকেল
নারিকেলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে নারিকেলের পানি এবং সাদা শাস বাচ্চার সুন্দর ত্বক গঠনে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে। তাই প্রত্যেক মায়েরই উচিত নিয়ম করে গর্ভকালীন অবস্থায় নারকেলের পানি ও শাস খাওয়া। তবে মাত্রারিক্ত পরিমাণে খাবেন না, এতে আপনার দেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।

টমেটো
টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, লাইকোপেন যা ফলকে লাল বর্ণ ধারন করতে সাহায্য করে। এটা সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এটা প্রমাণিত যে টমেটো আপনার  বাচ্চার গায়ের রং উজ্বল করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

বেদানা
একটা বেদানায় রয়েছে ১০৫ গ্রাম ক্যালরি, ১২৪ গ্রাম পানি, ১.৪৬ গ্রাম  প্রোটিন, ৩৯৯ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ৯.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। গর্ভবতী নারীরা চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে বেদানা খেতে পারেন। এতে শরীরে রক্ত-সঞ্চালন বাড়ে এবং শিশুর ব্রেইনে কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে।

লেখক: নিউট্রিশনিস্ট

সূত্র: হ্যালো অদিতি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত