অ্যালার্জির কারণ ও প্রতিকার

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০১৮, ২২:০০

জাগরণীয়া ডেস্ক

বহুল প্রচলিত শব্দ অ্যালার্জি। সচরাচর নির্দোষ বলে গণ্য কোনো জিনিস যদি শরীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তাকে অ্যালার্জি বলা হয়। যেসব দ্রব্য অ্যালার্জি সৃষ্টি করে, তাকে বলে এলারজেন বা এন্টিজেন। শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ বহু চর্মরোগেরই কারণ এই অ্যালার্জি। 

হাঁপানির সঙ্গে অ্যালার্জির গভীর সংযোগ রয়েছে। ফুলের পরাগ, দূষিত বাতাস, ধোঁয়া, কাঁচা রঙের গন্ধ, চুনকাম, ঘরের ধূলি, পুরনো ফাইলের ধূলি দেহে অ্যালার্জির বিক্রিয়া করে হাঁপানি রোগের সৃষ্টি করে। কাজেই যাঁরা হাঁপানিতে ভুগছেন তাঁদের এগুলো পরিত্যাগ করে চলা উচিত।

অতি ক্ষুদ্র সরল উদ্ভিদ ছত্রাক যা অ্যালার্জি তথা হাঁপানি সৃষ্টির অন্যতম কারণ। কোনো কোনো খাদ্য ছত্রাক দ্বারা দূষিত হয়ে থাকে। পনির, পাউরুটি ও কেক তৈরিতেও ইস্টজাতীয় ছত্রাক ব্যবহার করা হয়।

কারণ
ঘরের ধূলি হাঁপানিজনিত অ্যালার্জির অন্যতম কারণ। প্রায় ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য ধূলিতে থাকা ক্ষুদ্র জীবাণু বা ‘মাইট’ দায়ী। যাঁরা হাঁপানিজনিত অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন তাঁরা ঘরের ধূলি সব সময় এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে যখন ঘর ঝাড়ু দেওয়া হয় তখন এবং ঘরের আসবাবপত্র কম্বল, পর্দা, তোশক, বালিশ প্রভৃতিতে যে ধূলি জমে, তা পরিষ্কার করার সময় দূরে থাকতে হবে।

পতঙ্গের কামড়ে গায়ে চুলকানি, স্থানটি ফুলে যাওয়া, এমনকি হাঁপানি পর্যন্তও হতে দেখা যায়। মশা, বেলেমাছি, মৌমাছি, বোলতা, ভীমরুল প্রভৃতি পতঙ্গের কামড়ে দেহে অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া রোমশ ও পালকবিশিষ্ট জীবজন্তু যেমন—বিড়াল, কুকুর, অশ্ব প্রভৃতি গৃহপালিত পশু অনেক সময় অ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য বিশেষভাবে দায়ী। এ ছাড়া এক ধরনের চর্মরোগ আছে যাকে বলা হয় আর্টিকোরিয়া বা আমবাত। এ ক্ষেত্রে ত্বকে চাকা চাকা হয়। আর ফুলে ওঠে চুলকাতে দেখা যায়। এটিও হলো অ্যালার্জির অন্যতম প্রকাশ।

খাদ্যে অ্যালার্জি
বিভিন্ন খাদ্যেও অ্যালার্জির আশঙ্কা থাকে। গরুর দুধে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে গায়ে চুলকানি, হাঁপানি ইত্যাদি হতে দেখা যায়। গম, ডিম, মাছ, বাদাম, কলা, আপেল, আঙুর, ব্যাঙের ছাতা, তরমুজ, পেঁয়াজ, রসুন, চকোলেট, এমনকি ঠাণ্ডা পানীয় কোনো কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে।

প্রভাব
বেশির ভাগ লোকের জীবনেই কোনো না কোনো সময় অ্যালার্জি দেখা যায়। এই রোগ শরীরের কোনো অংশে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে অথবা সব শরীর ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন আকারের লালচে বা চাকা চাকা ফোলা দাগ হতে দেখা যায় এবং সেই সঙ্গে প্রচণ্ড চুলকানি থাকে।

ওষুধেও অ্যালার্জি
অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই জ্বর, গা ব্যথা, মাথা ব্যথা, পাঁচড়া, ফোঁড়া ইত্যাদির ওষুধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু এসব ছাড়াও আরো অসংখ্য ওষুধ আছে, যা খেলে শরীরে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে। সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ কখনোই খাওয়া উচিত নয়।

আমরা শিশুদের টিকা দিয়ে থাকি। মনে রাখতে হবে, কোনো কোনো টিকা বা ভ্যাকসিনে ব্যক্তিবিশেষে অ্যালার্জি হতে দেখা যায়। সুতরাং ভ্যাকসিন দেওয়ার পর আপনার শিশুকে যদি অ্যালার্জি চুলকানি বা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই তাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া উচিত।

মোটকথা অ্যালার্জি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। যে কারণে আপনার অ্যালার্জি হয় সেই কারণ এড়িয়ে চলতে হবে।

লেখক ডা. দিদারুল আহসান: চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ, আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা
সূত্র: কালেরকণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত