জনবল ও ঔষধ সংকটে গাইবান্ধার ৩০৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৬:৫৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), একজন হেলথ এসিস্ট্যান্ট (এইচএ) ও একজন ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার এসিস্ট্যান্ট (এফডাব্লিউএ) কাজ করেন। সিএইচসিপি ও এইচএরা সিভিল সার্জনের অধীনে ও এফডাব্লিউরা কাজ করেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অধীনে।

গাইবান্ধা জেলার সাত উপজেলার ৩০৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক (সিসি) চলছে ওষুধ, কক্ষ ও আসবাবপত্র সংকট, ভবনে বিদ্যুৎ না থাকা, ছাদ চুয়ে কক্ষে পানি ঢোকা, টিউবওয়েলের পানি আয়রন ও মেঝে ডেবে যাওয়াসহ নানান সমস্যা নিয়ে। 

গাইবান্ধা জেলায় সিএইচসিপি পদে ৩০৫ জন থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন ২৯২ জন, শুন্য রয়েছে ১২ জন ও একজন সাময়িক বরখাস্ত রয়েছেন। এইচএ পদে ৩৯০ জনের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৩৩১ জন, শুন্য রয়েছেন ৫৯ জন আর এফডাব্লিউএ পদে ৪৯০ জনের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৩১৪ জন, এখানে শুন্য রয়েছেন ১৭৬ জন।

গাইবান্ধা সদর ও সাঘাটা উপজেলার ১০ জন এইচএ দীর্ঘদিন থেকে রয়েছেন চার বছরের প্রশিক্ষণে। এসব ক্লিনিকে কক্ষ রয়েছে দুইটি। একটিতে বসেন সিএইচসিপি ও অন্যটি গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই আর একটি কক্ষ নির্মাণ দরকার। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ক্লিনিকগুলো খোলা রাখার নিয়ম থাকলেও তা মানে না কেউ। ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার পাঁচটি ক্লিনিক সরেজমিনে দেখতে গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। গাইবান্ধা জেলার সাত উপজেলার ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক সরেজমিনে ঘুরে এসব কথা জানা গেছে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ৫২টি। সিএইচসিপি আছেন ৫০ জন আর শুন্য রয়েছেন দুইজন। এইচএ আছেন ৫২ জন, শুন্য রয়েছেন আটজন। এফডাব্লিউএ আছেন ৫৩ জন, শুন্য রয়েছেন ২৮ জন। এরমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এইচএ ছয়জন রয়েছেন প্রশিক্ষণে। রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের সোনারপাড়া ও মোল্লারচর ইউনিয়নের মাইজবাড়ী সিসিতে কোন সিএইচসিপি নেই। ফলে সেখানে এইচএ ও এফডাব্লিউএ রোগীদের সেবা দেন। গ্রামগুলোতে কাজের চাপ বেশি হলে তারা সিসিতে বসতে পারেন না। তখন রোগীরা সেবা নিতে এসে ফেরত যান। ৫২টি সিসির মধ্যে সবচেয়ে কম দুইটি করে রয়েছে ঘাগোয়া, কামারজানি ও মোল্লারচর ইউনিয়নে। জনসংখ্যা বিবেচনা করলে এসব ইউনিয়নের আরও দুই-তিনটি করে সিসি দরকার। ফলে কাঙ্খিত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ।

গত ২৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে এগারোটায় সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের কাজলঢোপ সিসিতে গিয়ে দেখা যায়, সিএইচসিপি রাহাতুন জান্নাত বসে আছেন। এরই মধ্যে তিনজন শিশু কোলে নিয়ে চারজন মধ্যবয়সী নারী ও তিনজন বৃদ্ধা এলেন। সবাই ওষুধ নিয়ে গেলেন।

দুপুর সোয়া বারোটায় একই ইউনিয়নের চকগয়েশপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সিএইচসিপি ফিরোজ কবীর তার কক্ষে নেই। ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার এসিস্ট্যান্ট রুপালী বেগমের ক্লিনিকে থাকার কথা থাকলেও তিনি আসেননি আর হেলথ এসিস্ট্যান্ট শাকিলা জান্নাত দিশা রয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে।

এখানে চিকিৎসা নিতে আসা দক্ষিণ মনদুয়ার গ্রামের কবিতা বেগম (২৭) বলেন, গতকাল থেকে গলা ব্যথা আর জ্বর। ঘরের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকায় ওষুধ নিতে এসেছিলাম কিন্তু পেলাম না। সিএইচসিপি প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে বাহিরে থেকে ওষুধ কিনে খেতে বলেছেন।

৩০ অক্টোবর সকাল পৌনে দশটায় সাহাপাড়া ইউনিয়নের শিবপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় ক্লিনিকটি বন্ধ। আশেপাশের গ্রামের কয়েকজন রোগী এসেছিলেন ওষুধ নিতে। কিন্তু বন্ধ দেখে তারা ফেরত যাচ্ছেন। ক্লিনিকের সামনের আনছার আলী নামে এক ব্যক্তি বলেন, সিএইচসিপি আপাকে প্রতিদিন আমি তুলসীঘাট বাজার থেকে ভ্যানে করে ক্লিনিকে নিয়ে আসি। আবার দুইটা থেকে আড়াইটার দিকে ভ্যানে করে তুলসীঘাট বাজারে পৌঁছে দেই। 

শিবপুর গ্রামের মোর্শেদা বেগম (৪৬) বলেন, চারদিন থেকে আমার নাতির সর্দি, জ্বর ও কাশি। ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে এনে খাওয়ালেও অসুখ ভালো হয় না। সরকারি ওষুধ খেলে তবেই ভালো হয়। গতকাল গিয়েছিলাম ওষুধ আনতে গিয়ে পাইনি। এর আগেও দুইদিন গিয়েছিলাম কিন্তু পাইনি। পরে অন্য একজনের বাচ্চার জন্য আনা ওষুধ ধার করে নিয়ে নাতিটাকে খাওয়াচ্ছি। গত ২ নভেম্বর সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে বাদিয়াখালী ইউনিয়নের ফুলবাড়ী কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ দেখা যায়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সিএইচসিপি মামুনুর রশিদ সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন করে ক্লিনিক খোলেন। সেসময় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার বেশি তিনি থাকেন না। 

ফুলছড়ি উপজেলা : ফুলছড়ি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ১৮টি। সিএইচসিপি আছেন ১৭ জন আর শুন্য রয়েছেন একজন। এইচএ আছেন ৩১ জন, শুন্য রয়েছেন চারজন। এফডাব্লিউএ আছেন ২২ জন, শুন্য রয়েছেন ১৫ জন। ১৮টি সিসির মধ্যে এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের অভিরননেছা ও মমতাজ উদ্দিন, গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী ও ফুলছড়ি ইউনিয়নের দেলুয়াবাড়ী সিসিতে কোন ওষুধ দেওয়া হয় না। সেগুলোতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওষুধ দিয়ে চালাতে হচ্ছে। ফজলুপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খাটিয়ামারি সিসিতে এইচও এবং এফডাব্লিউএ ক্লিনিক খোলেন। তাদের যেদিন বেশি কাজ থাকে গ্রামগুলোতে। তখন ক্লিনিক বন্ধ থাকে। প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক হলেও উড়িয়া ইউনিয়নে ২৫ হাজার লোকের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে মাত্র একটি। এছাড়া উদাখালিতে প্রায় ২৫ হাজার ও ফুলছড়িতে প্রায় ২০ হাজার লোকের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে দুইটি করে। এই উপজেলায় জনসংখ্যা বিবেচনা করে আরও নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা দরকার।

এবিষয়ে উড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মহাতাব উদ্দিন সরকার বলেন, একটি ক্লিনিক করার জন্য জায়গা পাওয়া গেছে। আরও একটি জায়গা সংগ্রহের জন্য চেষ্টা চলছে। গত ২৮ অক্টোবর সকাল ১১টায় কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর, সাড়ে ১১টায় কঞ্চিপাড়া ও দুপুর একটায় উড়িয়া ইউনিয়নের মশামারী কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে।

হোসেনপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি সাইফুল ইসলাম রুবেল বলেন, সেদিন আমি ছুটিতে ছিলাম। তাই ক্লিনিক বন্ধ ছিল।

হোসেনপুর গ্রামের শাকিব সরকার বলেন, আমার মামা কয়েকদিন থেকে অসুস্থ্য। ক্লিনিকে গিয়ে মা ফেরত এসেছে।

মশামারি গ্রামের আসলাম মিয়া বলেন, আমি রিকসা-ভ্যান চালাই। ১০দিন থেকে আমার মেয়েটার জ্বর, সর্দি ও কাশি ছিল। কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে ওষুধ না পেয়ে ফেরত আসি। পরে বাজারের একটি ফার্মেসি থেকে বেশি দামে ওষুধ কিনতে হয়েছে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা : গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ৬৩টি। সিএইচসিপি আছেন ৬০ জন আর শুন্য রয়েছেন তিনজন। এইচএ আছেন ৬৬ জন, শুন্য রয়েছেন নয়জন। এফডাব্লিউএ আছেন ৫৭ জন, শুন্য রয়েছেন ৪৩ জন। সেগুলো হচ্ছে দরবস্ত ইউনিয়নের সাতানা বালুয়া, তালুককানুপুর ইউনিয়নের ছোট নারায়নপুর ও হরিরামপুর ইউনিয়নের রামপুরা সিসি। এসব সিসিতে এইচএ ও এফডাব্লিউএ রোগীদের সেবা দেন। গ্রামগুলোতে কাজের চাপ বেশি হলে তারা সিসিতে বসতে পারেন না। তখন রোগীরা সেবা নিতে এসে ফেরত যান।

গত ৪ নভেম্বর সকাল ১১টায় গিয়ে নাকাই ইউনিয়নের পোগইল কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ দেখা যায়। এরপর সকাল ১১টা ২০ মিনিটে হরিরামপুর ইউনিয়নের বড়দহ কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, সিএইচসিপি দীপা রানী সরকার রোগীদের কাছ থেকে রোগের বর্ণনা শুনে ওষুধ দিলেন। ক্লিনিকটির দুই কক্ষের মধ্যে একটিতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় অপরটিতে কিছু আসবাবপত্র রাখা হয়েছে। এই কক্ষটির মেঝে ডেবে গেছে। এটাচড বাথরুমে উইপোকা মাটি তুলেছে। কক্ষটি ব্যবহারের অনুপযোগী হযে পড়েছে। বৃষ্টি হলে ক্লিনিকে ছাদ চুয়ে ভেতরে পানি ঢোকে। ভূমিকম্পে ভবনে ফাটল ধরেছে। একইদিন দুপুর পৌনে দুইটায় ফুলবাড়ী ইউনিয়নের বামনকুড়ি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ দেখতে পাওয়া যায়। 

পলাশবাড়ী উপজেলা : এই উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ৩৩টি। সিএইচসিপি আছেন ৩১ জন আর শুন্য রয়েছেন দুইজন। একজন সিএইচসিপি সাময়িক বরখাস্ত হয়ে রয়েছেন। এইচএ আছেন ৩২ জন, শুন্য রয়েছেন আটজন। এফডাব্লিউএ আছেন ৩৬ জন, শুন্য রয়েছেন ১৮ জন। পবনাপুর ইউনিয়নের পূর্বগোফিনাথপুরে প্রায় ১৭ মাস, মহদীপুর ইউনিয়নের ছোট ভগবানপুরে প্রায় ১৬ মাস ও দুর্গাপুর সিসিতে তিনমাস ধরে নেই সিএইচসিপি। বেতকাপা ইউনিয়নের ডাকেরপাড়া সিসির সিএইচসিপি মাছুমা আক্তার ছোট ভগবানপুরে দুইদিন গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দেন। এই দুইদিন আবার ডাকেরপাড়া সিসি বন্ধ থাকে। ফলে অনেক রোগী এসে সেবা না পেয়ে ফেরত যান। পূর্বগোফিনাথপুর ও দুর্গাপুর সিসিতে এফডাব্লিউএ ও এইচএ চিকিৎসা সেবা দেন। গ্রামগুলোতে যেদিন কাজের চাপ বেশি থাকে তখন কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ থাকে। এতে করে সেবা নিতে এসে রোগীরা ফেরত যান।

গত ৩০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের মোস্তফাপুর ও ৪ নভেম্বর সকাল সোয়া ১০টায় হরিনাবাড়ী সিসির এইচএ অপূর্ব কুমার সরকার ও এফডাব্লিউএ শাপলা খাতুনের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা আসেননি।

মোস্তফাপুর সিসির সিএইচসিপি মাহমুদুন্নবী মামুন বলেন, এক কিটবক্সের ওষুধ দুইমাস চালাতে হলেও তা দেড় মাসেই শেষ হয়। রোগীদের একা সেবা দিতে সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। আর একজন করে সার্বক্ষণিক সহকর্মী দরকার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে।

হরিনাবাড়ী সিসির সিএইচসিপি এস এম কামাল হোসেন বলেন, সপ্তাহে তিনদিন এফডাব্লিউএ ও এইচএ মো. আলআমিন প্রধানের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা মাসে মাত্র দুই থেকে তিনদিন উপস্থিত থাকেন। সেদিন এসে সারামাসের হাজিরা করেন। 

৩০ অক্টোবর দুপুর সোয়া একটায় মহদীপুর ইউনিয়নের ঝালিঙ্গি সিসির সিএইচসিপি মো. লিখন মন্ডল বলেন, যে ওষুধ পাই তা ভাগ করে প্রতিদিন রোগীদের দেই। এছাড়া অফিসিয়াল রেজিস্ট্রারের কাজকর্মও দুপুর একটার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। আর দুপুরে পর কোন রোগীও আসে না। তাই দুইটা থেকে আড়াইটার মধ্যেই ক্লিনিক বন্ধ করি।

সাদুল্যাপুর উপজেলা : সাদুল্যাপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ৩৯টি। সিএইচসিপি আছেন ৩৮ জন আর শুন্য রয়েছেন একজন। এইচএ আছেন ৪২ জন, শুন্য রয়েছেন আটজন। এফডাব্লিউএ আছেন ৪২ জন, শুন্য রয়েছেন ২৩ জন। এর মধ্যে শুধু খোর্দ্দকোমরপুরে রয়েছে দুইটি ক্লিনিক। এই ইউনিয়নের জনসংখ্যা অনুযায়ী আরও একটি ক্লিনিক দরকার। এ ছাড়া অন্যসবগুলোতে তিনটি থেকে চারটি করে ক্লিনিক রয়েছে। সিএইচসিপির পদ শুন্য রয়েছে নলডাঙ্গা ইউনিয়নের খামার দশলিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে। এই সিসিতে এইচএ ও এফডাব্লিউএ বসেন। এতে করে তাদের উপর বেশি চাপ পড়ছে। গ্রামগুলোতে কাজের চাপ বেশি হলে তারা সিসিতে বসতে পারেন না। তখন রোগীরা সেবা নিতে এসে ফেরত যান। তাই দ্রুত এখানে একজন সিএইচসিপি দরকার।

গত ২৯ ও ৩০ অক্টোবর দুপুরে সাদুল্যাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের জয়েনপুর ও খোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নের পাইকা কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, সিএইচসিপি জয়নাল আবেদীন ও মরিয়ম বেগম রোগের বর্ণনা শুনে রোগীদের ওষুধ দিচ্ছেন। এখানে ওষুধ নিতে এসেছিলেন জয়েনপুর গ্রামের সাজু মিয়া (৪৫)।

তিনি বলেন, চারদিন থেকে সর্দি ও জ্বর। কিছুতেই অসুখ ছাড়ছে না। সামান্য লেবারের কাজ করে সংসার চালাই। অসুখের কারণে সে কাজও এখন বন্ধ। এখানে এসেছিলাম ওষুধ নিতে কিন্তু ওষুধ না নিয়েই ফিরে যেতে হলো।

মরিয়ম বেগম বলেন, এখানে বিদ্যুৎ নাই। টিউবওয়েল ও টয়লেট নষ্ট, বৃষ্টিতে ছাদ দিয়ে চুইয়ে কক্ষে পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। এখানে হেলথ এসিস্ট্যান্ট ও ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার এসিস্ট্যান্ট অবসরে গেছেন। অন্য ক্লিনিকের দুইজন এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছে। তারা সপ্তাহে একদিন আসে। ফলে রোগীদের কাংখিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সাঘাটা উপজেলা : সাঘাটা উপজেলার জনসংখ্যা অনুযায়ী ৪৫টি থাকার কথা থাকলেও কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ৩৯টি। এরমধ্যে সিএইচসিপি রয়েছেন ৩৯ জন। এইচএ আছেন ৪৫ জন, শুন্য রয়েছেন নয়জন। এফডাব্লিউএ আছেন ৩৫ জন, শুন্য রয়েছেন ২১ জন। জনসংখ্যা অনুযায়ী আরও ছয়টি সিসি স্থাপন করা দরকার।

গত ২ নভেম্বর সকাল ১১টায় পদুমশহর ইউনিয়নের মমিনুর রহমান কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় ক্লিনিকটি বন্ধ।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কখনযে এই ক্লিনিক খোলা হয় আবার কখনযে বন্ধ হয় তা কেউ জানে না। এরপর দুপুর দেড়টায় ঘুড়িদহ ইউনিয়নের যাদুরতাইড় কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ দেখতে পাওয়া যায়। অথচ ক্লিনিক ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখার নিয়ম।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা : সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক (সিসি) রয়েছে ৬১টি। সিএইচসিপি আছেন ৫৮ জন আর শুন্য রয়েছেন তিনজন। এইচএ আছেন ৭২ জন, শুন্য রয়েছেন ১৩ জন। এফডাব্লিউএ আছেন ৬৯ জন, শুন্য রয়েছেন ২৮ জন। এরমধ্যে সবচেয়ে কম তিনটি করে সিসি রয়েছে বেলকা ও ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নে। জনসংখ্যার দিক থেকে বেলকায় আরও চারটি এবং ধোপাডাঙ্গায় দুইটি সিসি দরকার। সিএইচসিপি রয়েছেন ৫৮ জন। শুন্যপদ রয়েছে তিনটি। সেগুলো হচ্ছে বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সাতগিরি, সর্বানন্দ ইউনিয়নের তালুক সর্বানন্দ ও চন্ডিপুর ইউনিয়নের মাদারের ভিটা সিসি। এসব সিসিতে এইচএ ও এফডাব্লিউএ রোগীদের সেবা দেন। গ্রামগুলোতে কাজের চাপ বেশি হলে তারা সিসিতে বসতে পারেন না। তখন রোগীরা সেবা নিতে এসে ফেরত যান।

গত ১ নভেম্বর সকাল সোয়া ১১টায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বোয়ালী কমিউনিটি ক্লিনিকে রয়েছেন একজন বৃদ্ধ, দুইজন বৃদ্ধা, দুইজন মহিলা ও একজন শিশু রোগী। সিএইচসিপি ফাহমিনা আফরিন বলেন, ক্লিনিকে এইচএ সেলিনা খাতুনের সপ্তাহে দুইদিন বসার কথা থাকলেও একদিন বসেন। ক্লিনিকের সীমানা প্রাচীর না থাকায় টিউবওয়েলটি চুরি হয়ে গেছে।

এখানে ওষুধ নিতে আসা বোয়ালী গ্রামের আহেলা বেগম (৪৬) বলেন, গতকাল ওষুধ নিতে এস একবার ঘুরে গেছি। আজ ওষুধ পেলাম।

শান্তিরাম ইউনিয়নের পাঁচগাছী শান্তিরাম কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি রেজাউল করিম বলেন, কক্ষে ছাদ দিয়ে পানি চুইয়ে ঢোকে। প্রতিদিন এই ক্লিনিকে শতাধিক রোগী আসেন। সেই তুলনায় ঔষধ না থাকায় রোগীরা এসে ফিরে যান। কাঙ্খিত সেবা দিতে গেলে আরও ওষুধ প্রয়োজন এখানে। এফডাব্লিউএ ও এইচএ সপ্তাহে দুইদিন করে বসার নিয়ম থাকলেও তারা খুব কম সময় বসেন।

দুপুর ১২টা ২০মিনিটে কঞ্চিবাড়ী কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় ক্লিনিকটি বন্ধ। এখানে ১৫ মিনিট থাকাকালীন সময়ে সিএইচসিপির বিরুদ্ধে সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন ক্লিনিক খোলা, দুই থেকে তিন ঘণ্টা থাকা, ওষুধ না পাওয়া ও ওষুধ স্থানীয় বাজারে একটি ফার্মেসিতে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ জানালো স্থানীয় ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।

চিকিৎসা নিতে এসে ফেরত যাওয়া কঞ্চিবাড়ী গ্রামের কাঞ্চন বালা (৪৫) বলেন, তিনদিন থেকে আমার ও মেয়ের জ্বর, সর্দি ও কাশি। বাহিরে থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ার টাকা আমার নেই। তাই গতকাল এই ক্লিনিকে এসে ফেরত গেছি। আজও ফেরত গেলাম।

গাইবান্ধা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক দেওয়ান মোর্শেদ কামাল বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে আর একটি করে কক্ষ নির্মাণ দরকার। এফডাব্লিউ এ গ্রামগুলোতে কাজ করার পাশাপাশি স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন করে কাজ করবেন। এ ছাড়া এফডাব্লিউএ শুন্য পদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আছে। জনবল চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুস শাকুর বলেন, নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের জন্য যদি কেউ জমি দান করেন তাহলে সেখানে ভবন করা হবে। এ ছাড়া ওষুধ কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প থেকে দেওয়া হয়। ওষুধের পরিমাণ আরও বাড়ানোর জন্য জানানো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত