‘বিরল’ রোগে রাজশাহীর স্বর্ণালী!

প্রকাশ | ০৭ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:২৮

অনলাইন ডেস্ক

‘মুক্তামণি’র মতো বিরল রোগে আক্রান্ত রাজশাহীর পবা উপজেলার শিশু স্বর্ণালী খাতুন (১২)। তার ডান হাতে দেখা দিয়েছে বিরল রোগ। জন্মের সময় ছোট কালো দাগ থেকে ছড়িয়েছে পুরো হাতেই। চিকিৎসা নেই ভেবে এতোদিন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হননি তার বাবা-মা।

তবে সম্প্রতি গণমাধ্যমে মুক্তামণির বিরল রোগ ও চিকিৎসার খবর প্রকাশের পর আশার আলো দেখছে স্বর্ণালীর বাবা-মা। এনিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেও আর্থিক অসঙ্গতির কারণে থেমে গেছে চিকিৎসা। ফলে বিনা চিকিৎসায় এখনো স্বর্ণালী। স্বর্ণালী উপজেলার উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের টেগাটাপাড়ার আবদুল মান্নানের মেয়ে। নোনামাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সে।

স্বর্ণালী জানায়, স্কুলে গেলে তারপাশে অন্যরা বসতে চায় না। তাকে দেখে সহপাঠিরা হাসাহাসি করে। এজন্য প্রায় তার স্কুলে যাওয়া হয় না। শিক্ষকরা তাকে ভালোবাসলেও ক্লাশে তার ভালোলাগে না নিজের রোগাক্রান্ত হাতের জন্য। লেখাপড়া করে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন তার।

স্বর্ণালীর বাবা আবদুল মান্নান জেলার দুর্গাপুরের দাওকান্দি কলেজের পিওন। তার মা রুমা বেগম গৃহীনি। এ দম্পতির দ্বাদশ শ্রেণি পড়ুয়া এক ছেলে সন্তানও রয়েছে। মেয়ের চিকিৎসা নিয়ে মানসিকভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্বর্ণালীর বাবা-মা।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে স্বর্ণালীর বাবা আবদুল মান্নান জানান, মুক্তামণির হাতে যে বিরল রোগ, তার মেয়ের হাতেও একই রোগ বাসা বেধেছে। ক্রমেই হাত মোটা ও ভারি হয়ে যাচ্ছে। হাতে ছোট ছোট গুটি ও মাংসপিন্ডর মত বেড়ে উঠছে ক্রমেই। ডান হাতের পুরোটা এখন ছড়িয়ে পড়েছে। নিচের অংশ ঝুলছে চামড়া। মাঝে মাঝে পেকে পুজ বের হয়। তখন ব্যাথায় কাতর হয়ে উঠে স্বর্ণালী।

আবদুল মান্নান আরও জানান, মেয়ের হাতের রোগ নিয়ে তারা চরম বিপাকে রয়েছেন। তিনি নিজে কলেজের পিওন পদে চাকরি করেন। এ থেকে সংসার চালানোর পাশাপাশি এক ছেলের পড়ালেখার খরচ যোগান দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় মেয়ের চিকিৎসার খরচ যোগানো কোনোভাবেই তারপক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণে তার মেয়ের চিকিৎসার জন্য সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহায়তা চেয়েছেন তিনি।

এদিকে, স্বর্ণালীর মা রুমা বেগম জানান, মেয়ের বয়স যখন চার বছর ছিলো-তখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোয়াজ্জেম হোসেনকে দেখানো হয়েছিলো। সে সময় চিকিৎসক একটি মলম দিয়েছিলেন। সেটি লাগানো হলেও কমেনি সেই রোগ। বরং ক্রমেই বাড়তে থাকে। এরপর অজ্ঞাত ও বিরল রোগ জেনে তারা আস্থা হারিয়ে ফেলেন। আর চিকিৎসক দেখান নি।

তিনি আরও জানান, সম্প্রতি গণমাধ্যমে মুক্তামণির বিরল রোগ নিয়ে খবর তাদের নজরে আসে। একই ধরণের রোগ স্বর্ণালীর হাতেও বাসা বেধেছে। এরপর তাকে রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আফরোজা নাজনীনকে দেখান। পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর তিনিও জানান এটি বিরল রোগ। অস্ত্রপচারের পরামর্শ দেন ওই চিকিৎসক।

কিন্তু অস্ত্রপচারে যে টাকা ব্যয় হবে তা মেটানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয় কোনভাবেই। ফলে চিকিৎসা থমকে গেছে। এখন মেয়েকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। ভালো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার সামর্থও নেই তাদের।

রুমা বেগম আরও জানান, মেয়ে যত বড় হচ্ছে তত বিস্তার বাড়ছে রোগের। বাড়ছে দুশ্চিন্তা। তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, মুক্তামণির চিকিৎসা যেভাবে হয়েছে, তার মেয়ে স্বর্ণালীর চিকিৎসাও সেভাবে হবে। প্রয়োজন শুধু সহায়তা। এজন্য তিনি সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন।