এনাম মেডিকেল

সাত লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেও মুক্তি পেল না নবজাতক ও মা

প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:৪১

জাগরণীয়া ডেস্ক

স্ত্রী ও নবজাতক সন্তানের চিকিৎসা যাবৎ ১২ লাখেরও বেশি টাকা বিল করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গ্রামের শেষ সম্বল ভিটে মাটি বিক্রি করে এ পর্যন্ত হাসপাতালে প্রায় সাত লাখ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে। আরো বকেয়া বিল পরিশোধ করতে না পারায় নবজাতকসহ এক মাকে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে এনাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের বিরুদ্ধে। রোগীরা হচ্ছে সাভার পৌর এলাকার ডগরমোড়া মহল্লার আনিসুর রহমানের স্ত্রী এ্যাপি রহমান ও তার দেড় মাসের নবজাতক শিশু।

২৩ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সন্ধ্যায় সরেজমিনে হাসপাতালের ৭ মতলায় শিশু ওয়ার্ডে ৭০১ নম্বর বেডে গিয়ে তাদেরকে নজরবন্দি অবস্থায় দেখা যায়। এক মাসেরও বেশি সময় আগে চিকিৎসা শেষ হয়ে গেলেও সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করতে না পারায় হাসপাতালের নার্স ও কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে রাখা হয়েছে নবজাতক শিশু ও তার মাকে।

এ ব্যাপারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আনোয়ারুল কাদের নাজিম উদ্দিন বলেন, নবজাতক ও তার মায়ের এখনো বিল বকেয়া রয়েছে। তবে এ বিষয়ে তিনি আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। হাসপাতালের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলেন তিনি।

তবে এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের চেয়ারম্যান স্থানীয় সাংসদ ডা. এনামুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়াও তার মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ্যাপি রহমানের স্বামী আনিসুর রহমান বলেন, জুলাই মাসের ১৪ তারিখে তার স্ত্রীর প্রসব ব্যাথা শুরু হয়। এর পর তাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে স্থানীয় এক দালালের প্ররোচনায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎস তার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়। টানা নয়দিন ভর্তি থাকার পর ২৫ জুলাই প্রফেসর শিউলী তার অপারেশন করেন। মাত্র ছয় মাস বয়সে শিশু সন্তান জন্ম নেওয়াত নবজাতকের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে শুরু হয়। তাকে কয়েকদিন নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে রাখা হয়। এর পর চিকিৎসা শেষে শিশুটি সুস্থ্য হওয়ায় গত ১৭ আগষ্ট তাদেরকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে হাসপাতালের সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করতে না পারায় তাদেরকে আর যেতে দেওয়া হয়নি। এর আট দিন পার হয়ে যাওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে শিশু ও তার নবজাতক মাকে পাশের শিশু ওয়ার্ডে ৭০১ নম্বর সাধারণ বেডে হস্তান্তর করে। এর পর থেকে তাদের চিকিৎসা সেবাও বন্ধ করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সব-সময় ওই ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্সদের নজরদারীতে রাখা হয়েছে তাদেরকে।

ঘটনাস্থলে থাকা দুই নার্স ও কর্তব্যরত একজন ইন্টার্নি চিকিৎসক অর্নবের কাছে জানতে চাইলে ও এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজী হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সম্পূর্ণ নিষেধ রয়েছে বলে জানিয়ে দেন তিনি।

নবজাতক শিশুর মা এ্যাপি রহমান বলেন, এক মাসেরও বেশি সময় যাবৎ তাদেরকে হাসপাতালে নজরবন্দি করে রাখা হয়েছে। ওই ওয়ার্ডে আরো অনেক রোগী রয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক সবার খোঁজ খবর নিলেও তাদের কাছেও যায় না। মাঝে মধ্যে তার শিশু সন্তানটি অসুস্থ হয়ে পড়লে একাধিকবার অনুরোধ করার পরও কোন ডাক্তার দেখতে আসেনি। এছাড়াও হাসপাতালের পরিচালক আনোয়ারুল কাদের নাজিম বেশ কয়েকবার তাদের বেডে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। এমনকি বের করে দেওয়ারও কথা বলেছেন তিনি একাধিকবার। তিনি তার নবজাতক সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে এ্যাপী রহমানের স্বামী অভিযোগ করে আরও বলেন, এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার স্ত্রী ও সন্তানের চিকিৎসা যাবৎ ১২ লাখেরও বেশি টাকা বিল করেছে। গ্রামের শেষ সম্বল ভিটে মাটি বিক্রি করে এ পর্যন্ত হাসপাতালে প্রায় সাত লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেছেন তারা। এখন নিস্ব হয়ে গেছেন। দেওয়ার মতো আর কোন অর্থ নেই তাদের কাছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। বরং বার বার ভৎসর্না শুনতে হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা ব্যায় বাড়ানোর জন্য তার স্ত্রী ও সন্তানদের অতিরিক্ত সময় আইসিউ ও এনআইসিইউতে রেখে বাড়তি বিল তৈরি করেছেন।

এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো: এহসানুল করিম বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে ১০ শতাংশ শয্যা দারিদ্র্য রোগীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার বিধান রয়েছে। অধিকাংশ বড় ধরনের হাসপাতালগুলো এ ধরনের সেবা দেয় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তবে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে কোন প্রতিষ্ঠান বিনা চিকিৎসায় ফেরত দিতে পারবে না। কোন দারিদ্র্য রোগী ব্যয় নির্বাহ করতে না পারলে ১০ শতাংশ শয্যার ব্যয় থেকে তা সমন্বয় করতে পারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সে ক্ষেত্রে এ নিয়ম না মানা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও তিনি জানান।

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো: আমজাদুল হক বলেন, বিষয়টি মানবিক, তবে এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোন বাড়তি অর্থ আদায় করেছে কি না সে বিষয়ে খোজ নেওয়া হবে। এছাড়াও এ ধরনের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত