আয়ু বাড়াতে প্রতিদিন খান এই ৮টি খাবার

প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০১৭, ১৭:৪৫

জাগরণীয়া ডেস্ক

গত কয়েক দশকে আমাদের আয়ু যে হারে বেড়েছে এর পাশাপাশি নানা ধরনের জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের প্রকোপও বেড়েছে। এখনকার প্রজন্ম আগের চেয়ে অনেক কম বয়সেই হৃদরোগ, চোখের সমস্যা বা আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ থেকেই বুঝা যায় আমাদের দাদা-দাদিদের কাল থেকে জীবনযাত্রার ধরনের অনেক বদল এসেছে। কিন্তু এই পরিবর্তন আমাদের জন্য অনুকূল না হয়ে বরং স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। আর তাই সর্বোত্তম মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য অর্জনের জন্য আপনার দরকার ভালো মানের পুষ্টি। 

প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে জীবনের যে তিনটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে আপনি ভালো স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু লাভ করতে পারেন সেগুলো হলো- খাদ্যাভ্যাস, ঘুম এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ। আপনার খাদ্যাভ্যাস আপনার দেহের নানা শক্তির মধ্যে ভারসাম্য স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী এই আটটি খাবার নিয়মিত খেলে আপনার আয়ু বাড়বে….

আমলকি
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফলটি রোগ এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে আপনার দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলে। এটি বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ এবং আয়ু বাড়াতে বেশ কার্যকর একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। হিন্দুদের জনপ্রিয় ধর্মগ্রন্থ পদ্মপুরাণ মতে, দেবতা শিব আমলকিকে এমন একটি পবিত্র ফল হিসেবে গণ্য করতেন যা আয়ু বাড়ায়।

আদা
আদাতে রয়েছে উচ্চহারে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এতে ২৫টি ভিন্ন ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে বলে বিশ্বাস করা হয়। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট দেহে থাকা সেসব ফ্রি র‌্যাডিকেলস এর বিরুদ্ধে লড়াই করে যেগুলো রোগ-বালাই তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এবং দেহকে হার্ট সমস্যা, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস এবং ক্যান্সারের মতো দুর্গম রোগ থেকে রক্ষা করে।

এলাচ
চীনা ঐতিহ্য অনুসারে এলাচ চা পান করলে দীর্ঘায়ু অর্জিত হয়। এলাচ চা দেহকে বিষমুক্তকরণ এবং দেহের আভ্যন্তরীণ সিস্টেমকে পরিষ্কারকরণে কাজ করে। এটি গন্ধসার তেল সমৃদ্ধ যা আপনার দেহের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তচলাচল জোরদার করে এবং জীবনীশক্তি ধরে রেখে দেহের শক্তিও মাত্রাও উন্নত করে।

আজওয়াইন
আজওয়াইন বীজ হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী বন্ধু। এতে রয়েছে নায়াসিন এবং থাইমল যা হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এ ছাড়া এটি একটি শক্তিশালী ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।

জিরা
জিরা বীজ আপনার পাকস্থলীর সব ধরনের সমস্যার জন্য সেরা ওষুধগুলোর একটি হিসেবে কাজ করে। জিরা আয়রন এবং খাদ্যগত আঁশের অসাধারণ একটি উৎস। এটি পাকস্থলিতে হজমে সহায়ক পাচকরসমূহের উৎপাদন বাড়ায় এবং স্নায়ুতন্ত্রকে প্রশমিত করে। রাতে একগ্লাস পানিতে পরিমাণমতো জিরা ভিজিয়ে রেখে সকালে তা পান করুন। এতে আপনার হজমক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি দিনব্যাপী পরিপাকতন্ত্রও ভালো থাকবে।

৬. লবঙ্গ
এতে রয়েছে ছত্রাকনাশক, ব্যাকটেরিয়ারোধী, জীবাণুনাশক এবং বেদনানাশক উপাদান। এ ছাড়া এতে আরো রয়েছে বিস্ময়কর সব রোগপ্রতিরোধী উপাদান। লবঙ্গতে আছে প্রচুর পরিমাণ ম্যাঙ্গানিজ যা আপনার পরিপাকতন্ত্রের ব্যবস্থাপনা এবং আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর।

গোল মরিচ
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন রান্না পদ্ধতিতে ব্যবহৃত একটি সার্বজনীন মশলা হলো গোল মরিচ। আপনি হয়তো জানেন না কিন্তু এই বিনয়ী মশলাটিতে লুকানো রয়েছে অনেক ঔষধি গুণাগুণ এবং এটি খনিজ পুষ্টি উপাদানেও সমৃদ্ধ। আরেকটি বিস্ময়কর বিষয় হলো গোল মরিচ হলুদের থাকা পুষ্টি উপাদানগুলোর শক্তি বাড়ায়। হলুদ-দুধের পুষ্টিগুণ আরো শক্তিশালী করার জন্য এর সঙ্গে গোল মরিচ মেশান। গোল মরিচে থাকা পিপারাইন হলুদে থাকা সারকুমিন শোষণে সহায়তা করে। এটি গোল মরিচের শক্তিশালি স্বাস্থ্য উপকারিতামূলক উপাদান। এটি আপনার পরিপাকতন্ত্রকে আরো শক্তিশালীকরণেও কাজ করে।

মধু
মধু শীর্ষ সুপার ফুডগুলোর একটি। মধু সব সময়ই এমন একটি সৌন্দর্যচর্চার উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যা বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধে বেশ কার্যকর। এ ছাড়া এর বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও রয়েছে। এতে রয়েছে নানা খনিজ উপাদান এবং জীবন্ত অ্যানজাইম যা আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালি করে তুলবে। প্রতি মাত্র এক চামচ কাঁচা মধু খেলে আপনার দেহে শক্তি ও উদ্দীপনায় পূর্ণ করে তুলবে। রাশিয়ার অধ্যাপক নিকোলাল ভ্যাসলিয়েভিচ এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাশিয়ার ককেশাস পর্বত এলাকার বাসিন্দাদের যারা ১২৫ বছরেরও বেশি বছর আয়ু পেয়েছেন তারা নিয়মিতভাবে মৌচাক থেকে সংগ্রহ করা তাজা মধু খেতেন। 

সূত্র: এনডিটিভি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত