হামিদা শহীদ: রক্ষণশীল পাক সীমান্তের প্রথম নারী প্রার্থী

প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০১৮, ১৬:১৮

জাগরণীয়া ডেস্ক

যেখানে নারীরা ভোট দেয় না, সেখানে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ভোট চাইছেন পাকিস্তানের হামিদা শহীদ। পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী রক্ষণশীল এলাকা দির কোহিস্তান থেকে পিকে-১০ নং আসনের জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। খবর ডন এর। 

সীমানবর্তী অঞ্চল দির একসময় ছিল তালেবানের শক্ত ঘাঁটি। সেখানে মেয়েদের অধিকার নেই বললেই চলে। তাদের ভোটের কোন অধিকার নেই। গত বছরই দিরের এক কাউন্সিল নির্বাচনের ফলাফল গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিল পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। কারণ সেখানে কোন নারীই ভোট দেন নি। অথচ কোন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে হলে ওই এলাকার অন্তত ১০ শতাংশ নারী ভোটারকে ভোট দিতেই হবে।

সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের দল তেহরিক-এ-ইনসাফের হয়ে দির আসনে নির্বাচন করতে মাঠে নেমেছেন হামিদা শহীদ। আগামী ২৫ জুলাই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদি জিতে যান, তবে পাকিস্তানের ইতিহাস নতুন মাইলফলক যোগ করবেন হামিদা শহীদ।

এক নজরে হামিদা শহীদ

৪৪ বছর বয়সী হামিদা পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী পইন্ডাখেল বংশের উত্তরসূরী। তার পরিবার মূলত ঊশেরি দারা অঞ্চলের দির এলাকার বাসিন্দা। কিন্তু ব্যবসার কারণে বেশ কয়েক দশক আগে তারা পেশোয়ারে বসত গড়েন। রাজনৈতিকভাবে হামিদার পরিবার জামাত এ ইসলামী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির মতাদর্শে বিশ্বাসী। যদি তিনি তার পরিবারের অমতে তেহরিক-এ-ইনসাফের হয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। 

এ প্রসঙ্গে হামিদা বলেন, আমার পরিবারের অমতেই আমি  তেহরিক-এ-ইনসাফ দলে যোগদান করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, এ দলটিই একমাত্র প্ল্যাটফর্ম যারা আমাকে দির এলাকার উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে।

নারী হিসেবে নির্বাচন প্রসঙ্গে হামিদা বলেন, একজন নারী যদি ভোট দিতে পারে, তবে ভোট চাইতেও পারে।

এই প্রথম সেখানে একজন নারী নির্বাচনে প্রার্থী হলেন। দির এলাকার পুরুষরা এখনও অভ্যস্ত হচ্ছেন এই নতুন দৃশ্যে - ভোটের জন্য প্রচারাভিযান চালাচ্ছেন একজন নারী।

এ প্রসঙ্গে বিবিসির সুমায়লা জাফরি লিখছেন, হামিদা এখন বাড়ি থেকে বের হলেই তার পুরুষ সমর্থকরা শ্লোগান দেয়, 'পিটিআই জিন্দাবাদ' বলে। পিটিআই-এর পতাকার রঙের একটি স্কার্ফ দিয়েছে ভক্তেরা। সেটা পরে তিনি প্রচারাভিযানে যাচ্ছেন।

পাকিস্তানে নারী ভোটার

পাকিস্তানে নারীদের ভোট দিতে না পারাটা শুধু যে দির-এর মতো প্রত্যন্ত এলাকারই সমস্যা তা মোটেও নয়। পাকিস্তানের সবখানেই এ সমস্যা আছে, আছে এমনকি পাঞ্জাবেও যা দেশটির সবচেয়ে উন্নত প্রদেশ।পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই নারীদের ভোট দেবার অধিকার আছে। কিন্তু সে অধিকার আইনে থাকা আর বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারা - দুটি আলাদা জিনিস। খবর বিবিসি এর।

রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম ধুরনাল। এ গ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস আছে - মেয়েদের ভোট দিতে না দেবার।

এখানে ১৯৬২ সাল থেকেই এমনটা ঘটছে। পাকিস্তানের পুরুষরা অনেকেই মনে করে - তাদের সম্মানের সাথে নারীদের রক্ষা করাটা জড়িত। সেই বছর ভোটের দিন এ নিয়ে একটা গোলমাল হয়। পুরুষরা অপমানিত বোধ করে নারীদের ভোট দেয়া নিষিদ্ধ করে। অর্ধ শতাব্দীর বেশি পার হয়ে গেলেও এখনো সেই নিষেধাজ্ঞা রয়ে গেছে। এখানে সামাজিক চাপ এতই বেশি যে একজন তরুণী মেয়ে যে ভোট দিতে ইচ্ছুক সে তার পরিচয়ও প্রকাশ করতে দিতে চায় নি। 

ভোটার এক নারী বলেন, আমার জীবনে আমি কোন নারীকে ভোট দিতে দেখিনি। পুরুষরা এ গ্রামের নারীদের ভোট কেন্দ্রে পাঠাতে চায় না। এটা একটা ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে। 

এখানে স্থানীয় কিছু এনজিও মেয়েদের ভোট দিতে দেবার জন্য কাজ করছে। কিন্তু মেয়েদের সাথে এ নিয়ে কথা বলাটাও একটা কঠিন কাজ। এখানে একজন পুরুষেরও ক্ষমতা নেই এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর, কারণ তাকেও এ সমাজে টিকে থাকতে হবে।

স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম কাজি হাফিজ আলি, যিনি গ্রামের একজন প্রভাবশালী লোক, তিনি মেয়েদের ভোট দেবার ওপর কোন নিষেধাজ্ঞার কথা অস্বীকার করলেন, যদিও মেয়েদের মুখে শোনা যায় ভিন্ন কথা।

ধুরনাল গ্রামে ইমরান খানের পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন আম্মার ইয়াসির। তার একটি নির্বাচনী সভায় গিয়ে দেখা গেল সেটা এক পুরুষের জনসমুদ্র।

এ প্রসঙ্গে প্রার্থী ইয়াসির বললেন, তিনি মেয়েদের ভোট দেবার ওপর নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করেন না, কিন্তু এতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা কেউ করে নি। তিনি বলেন, তিনি নিজে এ নিয়ে স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলেছেন, তারা ব্যাপারটি বিবেচনা করছেন।

নির্বাচন কমিশনের জেন্ডার সংক্রান্ত কর্মকর্তা নিঘাত সিদিক বলছেন, নারীদের ভোটার তালিকাভুক্তির কাজ হয়েছে। অতিরিক্ত ৩০ লাখ নারী এবার ভোট দিতে পারবেন। কিন্তু তার পরও মনে করা হয়, এখনো ৯০ লক্ষেরও বেশি নারী রয়ে গেছেন তালিকার বাইরে।

তিনি বলেন, তাদের বার্তা লোকের মধ্যে পৌঁছেছে, অনেক নারীই এগিয়ে আসছেন তারা ভোট দিতে চান। আমরা নারী-পুরুষ সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। ১০ শতাংশ নারীর ভোট না পড়লে ওই আসনের ফলই ঘোষণা করা হবে না, এবং নতুন করে ভোটগ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত