শান্তাবাই যাদব: ভারতের প্রথম নারী নাপিত

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০১৮, ০১:৩২

জাগরণীয়া ডেস্ক

ভারতে প্রচলিত লৈঙ্গিক ধ্যান-ধারণা থেকে বের হয়ে আসা প্রথম নারী নাপিত শান্তাবাই যাদব। স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন মহারাষ্ট্রের এই নারী।

বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাতকারে উঠে আসে শান্তাবাইয়ের সংগ্রামের কাহিনি। মহারাষ্ট্র রাজ্যের কলহাপুর জেলার হাসুরাসগিরি গ্রামে আনুমানিক ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন শান্তাবাই। তার পিতা নরসুন্দর ছিলেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে হয়ে যায়,পাশের আর্ডাল গ্রামের শ্রীপতি যাদবের সঙ্গে। শুরুর দিকে শ্রীপতি জমিজমা চাষের পাশাপাশি নাপিতের কাজ করলেও পরবর্তীতে সম্পতি ভাগাভাগি হয়ে গেলে চাষের কাজ ছেড়ে দিয়ে শুধু নাপিতের কাজ করতে থাকেন। ধার দেনা করে কোনরকমে তাদের সংসার চলতে থাকে। এরই মধ্যে চার কন্যা সন্তানের জননী হন শান্তাবাই। 

বড় মেয়ের বয়স যখন আট বছর, এরই মধ্যে একদিন আকস্মিকভাবে প্রাণ হারান স্বামী শ্রীপতি। এ প্রসঙ্গে শান্তাবাই বলেন, এখন থেকে প্রায় ৪০ বছর আগের কথা । চার কন্যা সন্তানকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়ে যাই। শুরুর দিকে মাত্র ৫০ পয়সা দিনের হিসাবে জমিতে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের কাজ শুরু করি। তাতে একদিন খাবার জুটলে আরেকদিন জুটতো না। একই সাথে মাথায় উপরে ছিল স্বামীর করা ঋণ। অর্থাভাবে অনাহারে ভেবেছিলাম, সন্তানসহ আত্মহত্যা করব।

এমনই সময় শান্তাবাইয়ের পাশে দাড়ান হাসুরাসগিরি গ্রামের পঞ্চায়েতের সভাপতি হরিবাবু কাদুকার। তিনি শান্তাবাইকে আবার হাসুরাসগিরি গ্রামে ফিরে গিয়ে পারিবারিক ব্যবসায় শুরু করার পরামর্শ দেন।

এ প্রসঙ্গে শান্তাবাই বলেন, আমার কাছে দুটি পথ খোলা ছিল। এক, সন্তানসহ আত্মহত্যা আর দুই, পারিবারিক ব্যবসা শুরু করা। আমি দ্বিতীয়টাকে বেছে নিলাম। কিন্তু যুগ যুগ ধরে পুরুষদের করা এই পেশায় একজন নারীকে গ্রামের মানুষ কী চোখে দেখবে সে নিয়ে আতঙ্কে ছিলাম। হরবাবুই ছিলেন আমার প্রথম খদ্দের। 

পেশার শুরুতেই সবার কাছে হাস্যরসের পাত্রী হয়ে উঠেন শান্তাবাই। গ্রামের মানুষ নানাভাবে তাকে বিদ্রুপ করা শুরু করে। কিন্তু তিনি দমে যাননি। প্রতিদিন ৪-৫ কিলোমিটার হেঁটে খদ্দের খুঁজতে শুরু করেন শান্তাবাই। শুরুর দিকে সবাই নাক সিটকালেও ধীরে ধীরে তার খদ্দেরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আশেপাশের কুডাল, হিদাডুগু ও নারেয়াদি গ্রামে কোন নাপিত না থাকায় শান্তাবাইয়ের কদর এসব গ্রামে বেড়ে যায়। 

শীঘ্রই স্থানীয় সংবাদপত্রে উঠে আসে শান্তাবাইয়ের নাম। বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। যার মধ্যে অন্যতম হল রাজ্য থেকে পাওয়া সমাজরত্ন পুরস্কার। ১৯৮৫ সালে নিজ গ্রামে নিজের একটি ঘর তোলেন তিনি, সহায়তা করে ইন্দিরা গান্ধী ইয়োজনা। 

কারো কাছ থেকে কোনরকম আর্থিক সাহায্য ছাড়াই তার চার সন্তানের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন ৭০ বছর বয়সী শান্তাবাই। এখন তিনি আর হেঁটে খদ্দের খুঁজতে পারেন না। পুরানা খদ্দেররা কেউ কেউ এখনো তার বাড়িতে ভীড় করে। আর সরকার থেকে পান ৬০০ রুপি। আর এতেই দিন চলে যায় শান্তাবাইয়ের।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আয় অনেক কম। দিন বদলেছে, বাজারে নতুন সেলুন বসেছে। সবাই সেখানেই যায়। পুরানো খদ্দের যারা আসেন তারাই ভরসা। তবে তাতে দুঃখ নেই। এই পেশা আমি ছাড়বো না। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আমি কাজ করে যাব। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত