নদীর বালি তুলে বাংলোর পুকুর ভরাট করছেন ডিসি! (ভিডিও)

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০১৮, ২০:১৮

জাগরণীয়া ডেস্ক

২টি সেতু ও সড়ক থেকে মাত্র কয়েকশ গজের মধ্য থেকেই নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিনের পর দিন চলছে বালি উত্তোলন। আর একাজটি করছে কোন সাধারণ মানুষ নয় খোদ জেলা প্রশাসক। বালি উত্তোলন করে তিনি তার বাংলোর পুকুর ভরাট করছেন। নদীপাড়ের বসতিদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তারা নিষেধ করলেও নেই কোন তোয়াক্কা। আর সংবাদকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের বক্তব্য চাইলে তিনি কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। অন্যদিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেছেন রক্ষক যদি ভক্ষক হয় জনগণই তার বিচার করবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ জেলা শহরের বুকচিরে বয়ে গেছে নবগঙ্গা নদী। এ নদীর উপর ক্যাসাল ব্রীজ ও পবহাটি ব্রীজ বলে পরিচিতি দুটি সেতু রয়েছে। কয়েকটি সড়ক, শিল্পকলা একাডেমী, ভুমি অফিস সহ নানা সরকারি বেসরকারি স্থাপনা রয়েছে নদীর দুই পাড় এলাকাতে। কিন্তু সেই নদীর তলদেশ থেকে গত ২ সপ্তাহের বেশী সময় ধরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি তুলছেন জেলা প্রশাসক জাকির হোসাইন, আর তা দিয়ে ভরাট করছেন নিজের বাংলোর পুকুর। যেসব শ্রমিক মেশিনে বালি তুলছে তারা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বালি তোলা হচ্ছে। ড্রেজার মেশিনে কাজ করা শ্রমিক মাসুদ রানা বলেছেন, নদীর বালি তুলে ডিসি সাহেবের বাংলোর পুকুর ভরাট করা হচ্ছে।

নদীপাড়ের মানুষ, পরিবেশবিদ ও সচেতন মহলে বিষয়টি নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয়রা নিষেধ করলেও তা আমলে নেননি জেলা প্রশাসক। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা সামসুল আলম খান জানান, দিনের পর দিন নবগঙ্গা নদী থেকে বালি তোলা হচ্ছে। এতে নিকট ভবিষ্যতে তাদের বাড়ি-ঘর হুমকির মুখে পড়বে।

এমনিতেই এক সময়কার খরস্রোতা নবগঙ্গা এখন মৃত প্রায়। রয়েছে নানা দখলদারদের দৌরাত্ব। এলাকার মানুষের নদী বাঁচাও দাবির প্রেক্ষিতে আগে কয়েকদফা ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে নদীর ভেতর থেকে কিছু অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিল। এসব সত্ত্বেও হরহামেশাই ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালী মানুষ বালি উত্তোলন করে আসছে। এতে করে একদিকে নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্থ সহ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মাটির স্তর। আর এবার খোদ জেলা প্রশাসক ড্রেজার বসিয়ে বালি তুলতে শুরু করেছেন। 

ঝিনাইদহের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাসুদ আহম্মেদ সঞ্জু বলেন, জেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে নবগঙ্গা নদী কিন্তু একাধিক সেতু, স্থাপনা আর বসতির মাঝ থেকে এভাবে বালি তুললে সবকিছু হুমকির মুখে পড়বে। তিনি বলেন, ড্রেজার দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বালি ওঠানো হচ্ছে, প্রশাসনের নিকট এসবের প্রতিকার চাইলেই অজ্ঞাত কারনে সেসবের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

এদিকে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস বলছেন, যেই হোক না কেন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কেউ বালি তুলতে পারবে না। এতে নদীর ব্রিজ-কালভার্ট, পরিবেশ ও নদী পাড়ের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়বে। তিনি বলেন রক্ষক যদি ভক্ষক হয় সেটা নিঃসন্দেহে দু:খজনক, হয়তো একসময় জনগণই প্রতিবাদী হয়ে উঠবে।

আর ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলনের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি নেয়ার নিয়ম থাকলেও সেটিও করেনি জেলা প্রশাসন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান ফোনে বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে বললেন, জেলা প্রশাসকই এ ব্যাপারে জানে, তাদের করণীয় কিছু নেই।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত