সাওলা কি বিলুপ্ত?

প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০১৭, ২০:০৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

‘সাওলা’! এক ধরনের বুনো গাই। এরা ভিয়েতনাম আর লাওসে আছে গত ২০ লাখ বছর ধরে। অথচ ‘আবিষ্কৃত’ হয়েছে ১৯৯২ সালে। তারপর আর তাকে ক্যামেরা ট্র্যাপে ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায়নি। ভিয়েতনামের বাইরে সাওলাকে কেউ চেনে কিনা সন্দেহ। ভিয়েতনাম আর লাওস-এর মধ্যে পাহাড়-জঙ্গল এলাকায় সাওলারা আছে নাকি গত ২০ লাখ বছর ধরে। 

জীববিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু টিল্কার বলছেন, ‘‘আমি একটা সাওলাকে দেখার স্বপ্ন দেখছি কতদিন ধরে! শুধু এক ঝলক দেখা। এক সেকেন্ড! দু’সেকেন্ডের হলেই চলবে। তাতেই এত বছরের পরিশ্রম সার্থক হবে, কষ্টের ফল পাওয়া যাবে।” 

অ্যান্ড্রু টিল্কার শুধু ফটো থেকেই সাওলা জীবটিকে চেনেন। অ্যান্ড্রু নিজে অ্যামেরিকান। গত তিন বছর ধরে ভিয়েতনামের জীবজন্তু নিয়ে গবেষণা করছেন। বিজ্ঞানীরা ১৯৯২ সালে সাওলা প্রাণীটিকে আবিষ্কার করেন। তারপর আরও পাঁচবার সে ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার বা ডাব্লিউডাব্লিউএফের হয়ে কাজ করেন অ্যান্ড্রু। সঙ্গীসাথীদের নিয়ে সপ্তাহের পর সপ্তাহ জঙ্গলে কাটান। সকলের আশঙ্কা, যেকোনও দিন শিকারির ফাঁদে বিশ্বের শেষ সাওলা প্রাণ দিতে পারে। অ্যান্ড্রু বলেন, ‘‘কোয়াং নাম বা ভিয়েতনামে যে আর ক’টা সাওলা বেঁচে আছে, তা কেউ জানে না। তাদের সংখ্যা একশ’ও হতে পারে, আবার হাতে গুণে বলা যায়, এমনও হতে পারে। এ যেন সেই খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজার মতো।”

তার একটা সমাধান হতে পারে: জোঁক। এই জোঁকগুলো যেন হাজার হাজার ক্যামেরা ট্র্যাপের সমান। অ্যান্ড্রু বলেন, ‘‘জোঁকরা জন্তুজানোয়ারের রক্ত চোষে। ওরা নিজে থেকেই আমাদের কাছে আসে, কেননা ওরা আমাদের রক্ত খেয়ে বাঁচে। আমরা জোঁকগুলোকে সংগ্রহ করে তাদের মধ্যে জীবজন্তুর যে রক্ত আছে, তার ডিএনএ বিশ্লেষণ করতে পাঠাই।”

জঙ্গল থেকে ল্যাবরেটরি। অ্যান্ড্রু আর তার সহকর্মীরা প্রায় বিশ হাজার জোঁক পাঠিয়েছেন চীন আর জার্মানির বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে। কিন্তু কোনও স্যাম্পলেই সাওলার রক্ত পাওয়া যায়নি। তাহলে কি সাওলা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে? অ্যান্ড্রুর মতে, ‘‘ধরে নেওয়া যাক, আর কোনও সাওলা নেই। কিন্তু অন্যান্য জীবজন্তু রয়েছে, যারা ঠিক সেই পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ অথচ বিপন্ন – জোঁক থেকে যাদের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। যেমন লাল রঙের শেং ডুক বাঁদর, কিংবা বাঘের মতো ডোরাকাটা খরগোশ, যা শুধু ভিয়েতনাম আর লাওসে পাওয়া যায়।”

জন্তুজানোয়ার বাঁচানোর ব্যাপারে মানুষজনকে কিভাবে উৎসাহ দেওয়া যায়? ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর কর্মীরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে সভা করেন, কথা বলেন, ছোট ছোট খেলার মাধ্যমে বোঝান। এই কানামাছি খেলাটার লক্ষ্য হল, চোখ বুজে, ফাঁদে না পড়ে হাঁটা। ভিয়েতনামের প্রাণীবৈচিত্র্যের কথা শুনে পর্যটকরা আসবেন, তা থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা উপকৃত হবেন, এই হল ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর কর্মীদের যুক্তি। অজানা সাওলা জীবটি যেমন এখন ভিয়েতনামের বাইরেও পরিচিত। তালাং গ্রামের বাসিন্দা আ লাং থি গাং বলেন, ‘‘বিশেষ করে চোরাশিকার আর জঙ্গল কাটার দরুণ সাওলা বিপন্ন। একবার সাওলা দেখতে পেলে আমি খুব খুশি হতাম। ও যেন আমার পরিবারের কেউ। ও-কে নিশ্চয় খুব সুন্দর দেখতে।”

অ্যান্ড্রু টিল্কারের মতো বিজ্ঞানীদের স্বপ্ন হল, একটি নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করা। তুষার যুগ থেকে চলে আসা একটি জীব, যাকে নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। অ্যান্ড্রু এই প্রথম একটি আস্ত সাওলা দেখলেন – প্রাদেশিক বনবিভাগে। নব্বই-এর দশকের সূচনায় বনবিভাগের কর্মীরা একটি মৃত সাওলা খুঁজে পেয়ে খড় দিয়ে পুরে সাজিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেন। অ্যান্ড্রুর কাছে তার অর্থ, ‘‘আমি যখন এখানে সাওলাটাকে দেখি, বা কোনও গ্রামে সাওলার শিং দেখি, তখন তা যেন সাওলার ছবিটাকে বাঁচিয়ে রাখতে, তাজা রাখতে সাহায্য করে। আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে, সাওলা শুধু আমার কল্পনা নয়, একটা বাস্তবিক জীব।”

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আবার একটি সাওলার ছবি ধরা পড়ে জঙ্গলের ক্যামেরায়। সেই সঙ্গে বিজ্ঞানীদের আশাও নতুন খোরাক পায় যে, সাওলা সত্যি সত্যি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত