সুনামগঞ্জে রোপা আমনের বাম্পার ফলন

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০১৭, ০২:২০

অনলাইন ডেস্ক

গত বোরো মৌসুমে ফসলহানির পর এবার সুনামগঞ্জে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে করে উঁচু এলাকার কৃষকেরা বোরোর ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি চলতি আমন মৌসুমে ধানের সঠিক মূল্যও পাবেন বলে আশা করছেন আমন চাষিরা।

গত বোরো মৌসুমে ফসলহানির পর উঁচু এলাকার কৃষকেরা বোরোর ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার জন্য চলতি রোপা আমনে মৌসুমে অন্য বছরের চেয়ে বেশি চাষাবাদ করেছেন। যদিও টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যায় কয়েকবার চারার ক্ষতি করেছে। পরে পোকার আক্রমণেও ধানের কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে সময়মত বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুনামগঞ্জের আমন জমিতে ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এতে উঁচু এলাকার আমন চাষিরা খুশি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছর জেলায় রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬১ হাজার ৬৯৪ হেক্টর। কিন্তু পুরো জেলাজুড়ে বোরো ফসলহানি হওয়ায় কৃষকরা আমনের চাষাবাদ বেশি করেছেন । মোট চাষাবাদ হয়েছে ৭৪ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমি। ফলন ভালো হওয়ায় ও লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমি চাষাবাদ করায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় দুই লাখ মে. টন । উচ্চ ফলনশীল ধান প্রতি হেক্টরে সাড়ে চার থেকে ৫ মে.টন; প্রতি বিঘায় গড়ে ১০ থেকে ১৫ মণ ধান পাবেন কৃষকেরা। ভালো করে কাটতে পারলে কৃষকের গোলায় প্রায় ২০০ কোটি টাকার ফসল উঠবে।

চলতি আমন মৌসুমে সবচেয়ে বেশি আমন ধান চাষাবাদ হয়েছে দোয়ারাবাজার উপজেলায়। দোয়ারায় চাষাবাদ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৫০ হেক্টর, ছাতকে ১২ হাজার ৪৩০ হেক্টর, সুনামগঞ্জ সদরে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ১২০০ হেক্টর, বিশ্বম্ভরপুরে ৮ হাজার ৫০ হেক্টর, তাহিরপুরে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর, ধর্মপাশায় ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর, জামালগঞ্জে ৩ হাজার ৫০ হেক্টর, দিরাইয়ে ২ হাজার ৮৫০ হেক্টর ও শাল্লায় ৫ হাজার ও জগন্নাথপুরে ৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদ হয়েছে। 

এ বছর দেশী জাতের মালতী, চাপলাইন জাতের ধান। পাশাপাশি ব্রি ধান-৪৯, বি-আর ১১,২২ ও ২৩ জাতের উচ্চ ফলনশীন জাতের ধান চাষাবাদ করেছেন অনেক কৃষক। 

দোয়ারাবাজার উপজেলার সদরের নৈনগাঁও গ্রামের কৃষক আকবর আলী (৩৭) বলেন, ‘গেলবার ৩৫ হাজার টাকা খরচ করি ৯ বিঘায় বোরো ক্ষেত করছিলাম; সবখানি পানিত গেছে। ইবার ৬ বিঘায় আমন ক্ষেত করছি। দুইবার পাইন্নে মারছে, জালা পাইতে কষ্ট হইছে। তারপরও আশা কররাম ৬০ মণ ধান অইব। হাওর ধান ভালাই অইছে। বোরো ধান পাইবার আগ পর্যন্ত চলা যাইব। ’

একই উপজেলার আমবাড়ি-নগারগাঁও গ্রামের স্বাবলম্বী কৃষক আব্দুল কাইয়ুম জানান, তিনি প্রায় ৭০ বিঘায় আমন জমি চাষাবাদ করেছেন। জমিতে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘায় অন্তত ১০ মণ করে প্রায় ৭০০ মণ ধান পাওয়ার আশা করছেন। এতে করে গত বোরো মৌসুমের ক্ষতির কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউপির গোদিগাঁও গ্রামের কৃষক উমর ফারুক বলেন, ‘৭-৮ বিঘায় আমন জমি করেছি; ধান মোটামোটি ভালই হয়েছে। এখন ভালো করে কাটতে পারলে অন্তত ১০০ মণ ধান হতে পারে। এক সপ্তাহ পরে ধান কাটার ধুম পড়বে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন, ‘গত বোরো মৌসুমে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাই এ বছর রোপা আমন ধান অপেক্ষাকৃত বেশি চাষাবাদ হয়েছে। তবে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় রোপা আমনের কিছু ক্ষতি হলেও আবহাওয়া ভাল থাকায় সুনামগঞ্জে ভালো ফলন হয়েছে। কিছু জায়গায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে আগামী ১৫ দিন পরে পুরোদমে শুরু হবে।’