চিনে নিন বিশ্বের প্রাচীন ১০ অরণ্য

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১০:৫৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

১. দ্য টার্কাইন
অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়াতে দ্য টার্কাইন অরণ্য অবস্থিত। এটি মূলত একটি দ্বীপের অরণ্য। এ অরণ্যের ইতিহাস ৩০০ মিলিয়ন বছরের পুরনো। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টিবহুল অরণ্য। এ অরণ্যে তিন হাজার বছরের পুরনো হুওন পাইন পাওয়া যায়। বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীন জীবিত উদ্ভিদ এটি। অরণ্যটি অসাধারণ সুন্দর। খনি ও গাছ কাটার কারণে এ অরণ্য এখন হুমকির সম্মুখিন। এ অরণ্যে পাওয়া যায় মেদিগাছ, ব্ল্যাকউড, সাফার্স এবং ইউক্যালিপ্টাস গাছ। এছাড়া এখানে রয়েছে ফার্নি পাহাড় ও জলপ্রপাত। 

২. অ্যারাকুয়েরিয়া
চিলির এ বনে পাওয়া যায় প্রায় এক হাজার বছরের পুরনো দুর্লভ চিলিয়ান পাইন গাছ। এ গাছের পাতাগুলো অন্য গাছ থেকে আলাদা। জানা যায়, ডায়নোসর যেন গাছটি সহজে খেতে না পারে সেজন্যই এটি এভাবে গড়ে ওঠে। বর্তমানে ডায়নোসর না থাকলেও গাছটি এভাবেই রয়ে গেছে। জুরাসিক যুগের এ অরণ্যটিকে চিলি সরকার জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। মধ্য চিলিতে এ অরণ্য সবচেয়ে ঘন। চিলির ভিলারিকো আগ্নেয়গিরির শীখরেও এ ধরনের গাছসমৃদ্ধ অরণ্য দেখা যায়। এ অরণ্য ভ্রমণ করার জন্য নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস সেরা। 

৩. ইয়াকুশিমা
শ্যাওলা ঢাকা পাথর ও গাছসমৃদ্ধ জাপানের ইয়াকুশিমা অরণ্য প্রায় সাত হাজার বছরের পুরনো। এটি মূলত কয়েকটি ছোট দ্বীপের সমন্বয়। এ অরণ্যের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ১৭ শতকে এ অরণ্যের গাছ মূল জাপানি ভূখণ্ডেও লাগানো হয়। আর এ কারণে চওড়া এ গাছগুলো মূল ভূখণ্ডেও পাওয়া যায়। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবেও ঘোষিত হয়েছে এ অরণ্য। জাপানের ইয়াকুশিমা এয়ারপোর্টে নেমে সরাসরি একটি গাড়ি বা ট্যাক্সি ভাড়া করে এ অরণ্য দেখতে যাওয়া যায়। 

৪. ব্রিসলকোন পাইন
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় রয়েছে প্রাচীন ব্রিসলকোন পাইন বন। এ বনে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো জীবিত গাছ। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো গাছটির বয়স ৪,৮৪১ বছর। গাছটির সঠিক অবস্থান কর্তৃপক্ষ কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে রক্ষা করছেন। তবে আপনি এ অরণ্যে বেড়াতে গেলে এ ধরনের বহু গাছপালা দেখতে পাবেন, যার মধ্যেই লুকিয়ে আছে বহু হাজার বছরের ইতিহাস। লস অ্যাঞ্জেলস শহর থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে ইনইয়ো ন্যাশনাল ফরেস্ট-এ যাওয়া যাবে। সেখানেই রয়েছে এ বন। 

৫. ডেইনট্রি রেইনফরেস্ট
অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে বহু বছরের পুরনো এ ডেইনট্রি রেইনফরেস্ট। ব্রিসবেন থেকে দুই ঘণ্টা গাড়ি চালালে এ অরণ্যের সন্ধান পাওয়া যাবে। এ বনে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন আরাকুরিয়া গাছ। এছাড়া অন্যান্য ট্রপিক্যাল পাইন ও প্রাচীন ডেইনট্রি গাছের সন্ধান পাওয়া যাবে এখানে। বনভূমিটি সাগরের ধারে অবস্থিত। আর এ সাগরেই রয়েছে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ। এখানে পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থাও চমৎকার। 

৬. বায়ালোউইজা
পোল্যান্ড ও বেলারুশে রয়েছে এ বনভূমি। এটি ইউরোপের মধ্যযুগীয় অরণ্য। ৫৪৫ বর্গমাইল আয়তনের এ অরণ্যে রয়েছে ম্যাপল, সিলভার বার্চ, অ্যাসপেনস, ওক, এলম ও পাইন গাছ। গাছগুলো প্রধানত ফাঙ্গাস দিয়ে ঢাকা। সাত হাজার বছর ধরে এ বনের ফাঙ্গাসগুলোতে ধুলো জমছে। পোল্যান্ড ও বেলারুশের রাজা ও জমিদারেরা বহু বছর ধরেই এ বনে শিকার করেন। ২০ শতকের শুরুতে এ বনটি জাতীয় পার্ক হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বর্তমানে এ বনটি অতিক্রম করার জন্য কোনো ভিসা প্রয়োজন হয় না। 

৭. অ্যামাজন
ব্রাজিল ও পেরুতে রয়েছে ৫৫ মিলিয়ন বছরের পুরনো অ্যামাজন বন। দক্ষিণ আমেরিকার এ বনের বহু অংশই পরবর্তীতে গড়ে উঠেছে। কিন্তু এ বন এখনও ভাঙা-গড়ার মধ্যে রয়েছে। এ বনের বেশ কিছু অংশ বহু প্রাচীন। প্রধানত পশ্চিম ব্রাজিলিয়ান রাজ্য অ্যাক্রি ও পূর্ব পেরুর প্রদেশ মাদরি ডি ডায়োস ও উকায়ালিতে এ বনটি অবস্থিত। এ বনে রয়েছে এমন সব আদিবাসী গোষ্ঠী, যারা এখনও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের দেখা পায়নি। 

৮. ওয়েইপোউয়া
নিউজিল্যান্ডের ওয়েইপোউয়া বনটি দেশের নর্থ আইল্যান্ডে অবস্থিত। ১২ শতক পর্যন্ত এ বনটি অধিকাংশ মানুষের অজানা ছিল। পরবর্তীতে এ বনটির বহু বিষয় জানা যায়। দুই হাজার বছরের পুরনো গাছপালা সমৃদ্ধ এ বনে রয়েছে বহু প্রাকৃতিক নিদর্শন। অকল্যান্ড থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টা গাড়ি চালিয়েই এ বনে পৌঁছানো যায়। এ বনে রয়েছে প্রাচীন গাছ ‘টানে মাহুতা’। এছাড়া এখানে দেখা যায় প্রাচীন গুহা ও ওয়েইপুয়া নদী। 

৯. বাওয়াব
দক্ষিণ আফ্রিকা ও মাদাগাস্কারে এ বন রয়েছে। এ বনটি ‘দ্য লায়ন কিং’-এর জন্য বিখ্যাত। এ বনটিতে বহু বড় বড় বিষয় রয়েছে, যা অনেকেরই ধারণা নেই। এ বনেই মানুষের হোমো সেপিয়েন্স হয়ে ওঠার ইতিহাস রয়েছে। আর এ সময়ের আগে থেকেই বাওবাব গাছটি এখানে রয়েছে। এ গাছগুলো কতো বছরের পুরনো তা এখনো জানা যায়নি। 

১০. টংগাস
আলাস্কার টংগাস ন্যাশনাল ফরেস্টের কিছু গাছ ৭০০ বছরেরও পুরনো। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় জাতীয় অরণ্য এই টংগাস। এখানে উত্তর ও দক্ষিণ আলাস্কার বহু বিষয়ের সম্মিলন ঘটেছে। এ অরণ্যে কয়েক হাজার বছরের পুরনো গাছও রয়েছে। এ অরণ্যে পর্যটকদের জন্য হেঁটে বেড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে কিন্তু সেজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হয়। কারণ এ বনে রয়েছে ভাল্লুকের উপদ্রপ। এ বনের নিকটবর্তী শহর কেটচিক্যান। সেখানেই গাইড পাওয়া যায় বনটি ঘুরে দেখানোর জন্য।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত