ঢাকায় ৩ ঘণ্টায় ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০১৭, ১৫:১৩

অনলাইন ডেস্ক

রাজধানী ঢাকা শহরে ৩ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) দুপুরে দিকে প্রবল বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ রাস্তা পানির নিচে ডুবে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে। ৩ ঘন্টা সীমাহীন বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। আর এ পরিস্থিতির জন্য মূলত ঢাকার পানি নিষ্কাশনে অকার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থাকেই দায়ী করলেন সংশ্লিষ্টরা।

এই প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়; গাড়ি না পাওয়া, আবার পেলেও যানজটের ধকল পোহাতে হয় মানুষকে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে। ৪ আগস্ট (শুক্রবার) দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকার চারদিক শুধু পানি আর পানি। সচিবালয় থেকে রাজপথ আর গলিপথ পানিতে একাকার। সর্বত্রই তিন থেকে চার মাস পূর্বে খুঁড়ে রাখা ড্রেনগুলো পরিপূর্ণ হয়ে আছে ইট, বালু, সিমেন্ট আর ময়লা-আবর্জনায়। ফলে এই অল্প বৃষ্টিতেই ডুবন্ত ঢাকায় নাগরিক জীবনে নেমে আসে অসহনীয় দুর্ভোগ। অসংখ্য যানবাহন রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে। নিরূপায় যাত্রীরা পানির মধ্যে হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অসহনীয় যানজটের কবলে পড়ে পানির মধ্যেই দীর্ঘসময় অতিবাহিত করতে হয় নগরের অসংখ্য বাসিন্দাকে।

স্কুলগামী, স্কুলফেরত শিশুদের নিয়ে বিপাকে পড়েন অভিভাবকরা। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমড় পানি মাড়িয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে সবাইকে। কী নারী, কী পুরুষ, কী শিশু সবার একই পরিণতি। দুই একটি জায়গায় নৌকা দিয়ে পারাপার করতে দেখা গেছে। অনেকের এক ঘন্টার পথ পাড়ি দিতে পাঁচ ঘন্টা লেগেছে। শান্তিনগরে বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া সড়কে রেসকিউ বোট দিয়ে পারাপার করিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

এলিফ্যান্ট রোড় এলাকায় দেখা যায়, কিছু  দোকানের ভিতর পানি উঠে মালমাল নষ্ট হচ্ছে। এর জন্য আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। রাস্তার পার্শে যে দোকানগুলি আছে তারা সচেতনার জন্য মোটর গাড়ি যেন জোরে চলতে না পারে সে জন্য রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে থেকে সচেতন করছে। 
রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে গতকাল জলাবদ্ধতা বেশি ছিল উত্তর সিটিতে? এর মধ্যে কারওয়ান বাজার, গার্ডেন রোড, মিরপুর ১, মিরপুর ১০, কচুক্ষেত, শেওড়াপাড়া, মানিক মিয়া এভিনিউ, কালশী, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে নতুন বাজার, খিলখেতসহ বিভিন্ন এলাকা অন্যতম?

ঢাকার বেগুনবাড়ি, পান্থপথের বিভিন্ন এলাকা, ধানমণ্ডি, কুড়িল, পুরান ঢাকার আলাউদ্দিন রোড, যাত্রাবাড়ী মোড়, জুরাইন, শহীদনগর, মধুবাগে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় অল্প বৃষ্টিতেই? অলি-গলি হাঁটু থেকে কোমড় পানিতে তলিয়ে যায়?

পূর্ব জুরাইন থেকে ডিএনডি বাঁধ পর্যন্ত এলাকায় বছরের প্রায় প্রতিদিনই পানি জমে থাকে? এই এলাকাটি অন্যান্য এলাকার তুলনায় অনেক নিচু হওয়ায় আশপাশের এলাকাসহ বাসা বাড়ির সুয়্যারেজের পানি জমে জলাদ্ধতা দেখা দেয়?

নগরবিদ মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা নয় আছে জলজট। ড্রেন এবং খালগুলো সচল না থাকায় বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার কোনো রাস্তা পায় না। ঢাকার আশপাশের সব খাল এবং পুকুর ভরাট হয়ে গেছে, অনেকগুলো দখল হয়ে গেছে। কারও একক উদ্যোগে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। মানুষকে এই জলজট থেকে বাঁচাতে প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পিত উদ্যোগ।

নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরে পানি নিষ্কাশন মাধ্যমগুলো সঠিকভাবে মেইনটেনেন্স করতে হবে। এই কাজে সমন্বিত পদক্ষেপ  নেওয়া দরকার। ওয়াসা ও দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় না থাকলে কাজের ফল আসবে না।