উপকূলে নির্বিচারে কাঁকড়া শিকার

প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০১৭, ১৫:১৩

জাগরণীয়া ডেস্ক

বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলীয় জেলা বরগুনা ও পটুয়াখালীর নদ-নদী, খালগুলো থেকে নির্বিচারে বিভিন্ন জাতের ও সাইজের কাঁকড়া শিকার চলছে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ডিমসহ মা কাঁকড়া, কাঁকড়ার পোনা ও প্রমাণ সাইজের কাঁকড়া ধরে স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে।

দুই জেলার শতাধিক আড়তে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ টন কাঁকড়া বেচাকেনা হচ্ছে। আড়তদাররা এ কাঁকড়া নৌ ও স্থল পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন।

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ার কুয়াকাটা সংলগ্ন সাগরসহ আন্ধারমানিক, শিববাড়িয়া, সোনাতলা প্রভৃতি নদী এলাকা, বরগুনার আমতলীর ও তালতলীর সাগর সংলগ্ন এলাকা, পায়রা, কচুপাত্রা, নিশানবাড়িয়া, পাথরঘাটার বিষখালী নদীসহ বিভিন্ন খালে শত শত জেলে চাঁই পেতে কিংবা টং পদ্ধতিতে কাঁকড়া শিকার করছেন। শিকারীদের মধ্যে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় এবং জেলেদের সচেতনতার অভাবে প্রতি বছর কমপক্ষে ১০০ টনের অধিক মা কাঁকড়া নিধন হচ্ছে বলে জেলে ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে। কাঁকড়ার প্রজনন রক্ষায় সরকারি-বেসরকারিভাবে তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা না থাকায় জেলে-শিকারীদের এ বিষয়ে কোনো সচেতনতা নেই। নির্বিচারে কাঁকড়া নিধন হওয়ায় এক সময় কাঁকড়ার আকাল দেখা দেবে বলে আশংকা করেছেন পরিবেশবাদীরা।

আমতলীর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, এ উপকূলে ‘ফাইলা অলভিসিয়া’ প্রজাতির কাঁকড়াই বেশি শিকার হচ্ছে।

এক সময়ে দু’একটি সম্প্রদায় ব্যতীত অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে কাঁকড়া খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। বর্তমানে সব সম্প্রদায়ের মানুষই কাঁকড়াকে প্রিয় খাবারের তালিকায় রেখেছেন। তাই স্থানীয় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে জেলে-শিকারিরা বাজারে বিক্রির চেয়ে আড়তে বেশি বিক্রি করছেন।

আকার ভেদে প্রমাণ সাইজের কাঁকড়ার দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে। ৫০০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ডবল এক্সেল পুরুষ কাঁকড়ার দাম কেজি প্রতি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। ১৮০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম ওজনের এফ-ওয়ান স্ত্রী কাঁকড়া কেজি প্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়।

এই বর্ষা মৌসুমে লাখ লাখ কাঁকড়া পোনাও ধরা পড়ছে পেশাদার ও সৌখিন শিকারীদের জালে। কাঁকড়া পোনা ঝাঁকে ঝাঁকে নদী ও খালে সাঁতরে বেড়ায় এবং সহজে শিকারে পরিণত হয়। এগুলো খাবার হিসেবে, বিশেষ করে সেগুলোর মগজ বেশ সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয়ভাবে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে জানান আমতলী শহরের কাঁকড়া ক্রেতা বিনয় দাস, পরিতোষ কর্মকারসহ অনেকেই।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রমাণ সাইজের কাঁকড়া ঢাকা, খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন আড়তে চালান করে বলে আমতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়ার আড়তদার ও কাঁকড়া চাষী মনির জানান। 

তিনি জানান, এক সময়ে শুধু মাত্র কাঁকড়া চাষীরা জেলেদের কাছ থেকে মা কাঁকড়া ও পোনা কাঁকড়া সংগ্রহ করতেন। স্থানীয় বাজারগুলোতে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য অল্প পরিমাণ কাঁকড়া স্থানীয় বাজারগুলোতে আসতো। তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়, ভাল দাম ও সহজলভ্য হওয়ার কারণে ব্যাপকহারে প্রাকৃতিক কাঁকড়া নিধন করা হচ্ছে। পাথরঘাটা এলাকার কাঁকড়া চাষী বিডি রফিক জানান, এসব কাঁকড়া বর্তমানে চীন ও সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হচ্ছে।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, মাছের মতো কাঁকড়াও উপকূলের প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক কাঁকড়া ধ্বংস না করে কাঁকড়া চাষে এগিয়ে আসতে হবে। কাঁকড়া চাষ সহজ এবং লাভজনক।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত