বিজ্ঞাপনে মডেলের ফিগার পাল্টানোর ফাঁকি আর চলবে না

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৩০

জাগরণীয়া ডেস্ক

মডেলের শারীরিক সৌন্দর্যকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে যে প্রায়শই তার ছবির কিছু কিছু জায়গায় কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবর্তন ঘটানো হয় সেটা তো আর গোপন কিছু নয়।

প্রতিনিয়ত এমন বিজ্ঞাপন আমাদের চোখে পড়ে যেখানে মডেলকে আরো স্লিম, দীর্ঘকায়, সরু ও লম্বা পায়ের অধিকারী, বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি, আরো মসৃণ ত্বক, বড়ো বড়ো চোখ এবং শরীরের কোথাও কোথাও বাঁক সৃষ্টি করে তাকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যে বিশেষ কিছু সফটওয়্যারের মাধ্যমে ছবিতে এসব পরিবর্তন ঘটানো হয়।

কিন্তু ফ্রান্সে ১ অক্টোবর (রবিবার) থেকে বিজ্ঞাপনের ছবিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এ ধরনের কোন পরিবর্তন আনা হলে এ বিষয়ে ভোক্তাদেরকে সতর্ক করে দিতে হবে, যেমনটা লেখা থাকে সিগারেটের প্যাকেটে। অর্থাৎ বিজ্ঞাপনে মডেলের ফিগার পাল্টানোর ফাঁকি আর চলবে না। নতুন আইনে বলা হয়েছে, এ ধরনের বিজ্ঞাপনে স্পষ্ট করে লিখে দিতে হবে, ‘সম্পাদিত ছবি’ এই বার্তাটি। এই আইন ভঙ্গ করলে তার ৩৭,৫০০ ইউরো কিম্বা বিজ্ঞাপনটি তৈরি করতে যতো খরচ হয়েছে তার ৩০ শতাংশ গুণতে হবে জরিমানা হিসেবে।

কর্মকর্তারা বলছেন, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে এধরনের কৃত্রিম ছবি তৈরি বন্ধ করতেই সরকারের এই উদ্যোগ। এসব ছবি দেখে মানুষ যাতে অতি রুগ্ন হওয়া এবং ওই মডেলের মতো শারীরিক সৌন্দর্যের অধিকারী হতে বেপরোয়া না হয়ে নিজেদের মতো করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে সেই লক্ষ্যে নতুন এই আইনটি কার্যকর হতে যাচ্ছে।

ফরাসী স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেছেন, “শরীরের এসব অবাস্তব ছবি দেখে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের আত্মবিশ্বাস ও নিজেদের প্রতি সম্মান নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে তাদের শারীরিক ক্ষতিও হতে পারে।”

কারণ ফরাসী তরুণ তরুণীদের কাছে স্লিম হতে পারে তাদের ধ্যান-জ্ঞানের মতো। দেশটিতে প্রচুর মানুষ ক্ষুধা-হীনতার মতো অসুখে ভুগছে এবং ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সেই মানুষের বিএমআই (উচ্চতা অনুযায়ী ওজন) সবচেয়ে কম।

ফ্রান্সই যে পৃথিবীর একমাত্র দেশ যারা এই আইনটি প্রয়োগ করতে যাচ্ছে তা নয়, ইসরায়েলেও এধরনের একটি আইন কার্যকর রয়েছে।

স্লিম ও মোটা মানুষের প্রতি লোকজনের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন তার উপর একটি বই লিখেছেন ফরাসী এক লেখক গ্যাব্রিয়েল দেদিয়ের। ওই বইতে তিনি লিখেছেন, মোটা হওয়ার কারণে একটি স্কুলে তাকে চাকরি হারাতে হয়েছে। আরেক জায়গায় চাকরির জন্যে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে তাকে শুনতে হয়েছে মোটা মানুষের ঘিলু কম।

কিন্তু প্রশ্ন হলো নতুন আইন কি শরীরের প্রতি ফরাসী মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দিতে পারবে?

অনেকেই এটা মানতে রাজি নন। এরকম একজন ব্রিটেনের টম কুইন। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন তিনি।

“ফটোশপ করা ছবি খাওয়া দাওয়া সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বিষয়টা এতো সহজ সরল নয়। তবে অনেকেই আছেন এধরনের সম্পাদিত ছবি দেখার পর যাদের আত্মবিশ্বাস ও প্রেরণা কমে যায়,” বলেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত