আলো ছড়ানো ৮০ বছরের হাওয়া বেগম

প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০১৭, ১৮:০১

জাগরণীয়া ডেস্ক

জ্ঞান অর্জন করো দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত। কিন্তু আমাদের গ্রামীণ নারীর জীবনে সেই দোলনার দেখা মিললেও মাঝপথে থেমে যায় শিক্ষা। বিয়ে-সন্তান-সংসারের বেড়াজালে নারীর আর পড়াশোনা করা হয়ে ওঠে না। এমন নারী আমাদের ঘরে ঘরে। শিক্ষার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়ে সারাজীবন তাদের একটা আহাজারি থাকে। তেমনই এক নারী হাওয়া বেগম। কেউ কেউ যেমন সারাজীবন আফসোসই করে যান, কিন্তু আফসোসকে বুকে ধারণ না করে নিজের পড়াশোনার স্বপ্নকে নাতিদের মাধ্যমে পূরণ করে চলছেন তিনি। সেই সঙ্গে শিক্ষাসচেতনতায় রাখছেন ভূমিকা। জীবনের গল্পটি তার মুখেই শুনি- ‘আমি হাওয়া বেগম। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির দুই নাতিকে নিয়ে আমি নিয়মিত কুড়িগ্রামের ভোগডাঙ্গার কমিউনিটি রিডিং ক্যাম্পে আসি।

ক্যাম্পে আসা প্রতিটি শিশুর সঙ্গে তাদের মা-বাবা এলেও আমি দাদি হওয়া সত্ত্বেও দুই নাতিকে নিয়ে রিডিং ক্যাম্পে আসি। আমার ছেলে যখন ছোট ছিল, তখন আমি তার সঙ্গে খেলা করে, গল্প, গান এবং কবিতা শুনিয়ে তাকে পড়া শেখাতাম। আমার মনে হতো, এভাবে শিশুকে শিক্ষা দিলে তাদের মধ্যে শেখার আগ্রহ বাড়ে। আমি তখন ভাবতাম বিভিন্ন উদ্ভাবনমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েও তো শিশুদের পড়ানো যেতে পারে। এ বছরের জানুয়ারিতে যখন আমি কমিউনিটি রিডিং ক্যাম্পের বিষয়ে জানলাম, তখন আমি ভেবে খুব খুশি হয়েছিলাম, এবার অবশ্যই শিশুরা বইয়ের বাইরে গিয়ে পড়া শিখবে খেলার ছলে।

অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় আমার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর যখন আমি রংপুর শহর থেকে কুড়িগ্রামে আসি, তখন আমার পড়ালেখার ইতি ঘটে। এখন আমার বয়স ৮০ বছর। আমি এখন কুড়িগ্রামের ভোগডাঙ্গা গ্রামের ছেলে, পুত্রবধূ ও দুই নাতির সঙ্গে বসবাস করি। নাতিদের শিক্ষায় সহায়তার পাশাপাশি কমিউনিটি রিডিং ক্যাম্পে শিক্ষাদানে অংশগ্রহণ করি। মাঝে মাঝে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করি এলাকার ক্যাম্পের স্পেচ্ছাসেবকদেরও।’

এভাবেই তিনি শিশুশিক্ষায় এক ব্যতিক্রম প্রয়াস দেখাচ্ছেন। ভোগডাঙ্গা কমিউনিটি রিডিং ক্যাম্পে একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যুক্ত হওয়ার পর থেকে হাওয়া বেগমের জীবন কীভাবে চলছে-এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ঘরের কাজে সময় পার করতেই আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি। এখন আমি শুধু আমার দুই নাতির ভবিষ্যৎ নিয়েই ভাবছি। বর্তমানে আমি প্রায়ই বিভিন্ন প্রাইমারি স্কুল পরিদর্শনে যাই। আমি চেষ্টা করছি স্কুলের সব শিক্ষকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে। সেই সঙ্গে অভিভাবক ও শিক্ষকদের মতবিনিময় সভায় নিয়মিত যোগদানের চেষ্টা করি। জীবনের এ পর্যায়ে এসে খুব ভালো লাগে যখন দেখি কুড়িগ্রামের মানুষ আমাকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আপন করে নিচ্ছে।’

প্রতিবেদক: আশিক মুস্তাফা
প্রথম প্রকাশ: সমকাল

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত