পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় বৈষম্যমূলক বিষয় অন্তর্ভূক্তি

রবিবার এনসিটিবির সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ

প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০১৭, ২০:১২

জাগরণীয়া ডেস্ক

পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় বৈষম্যমূলক বিষয় অন্তর্ভূক্তি, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রগতিশীল লেখকদের লেখা বাদ দেয়াসহ নানা অসঙ্গতির প্রতিবাদে ১৫ জানুয়ারি এনসিটিবি সামনে সমাবেশ করবে দেশের বেশ কয়েকটি প্রগতিশীল সংগঠন। এছাড়া একই দিন জেলায় জেলায় শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষুব্ধ অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনগুলি।

১১ জানুয়ারি (বুধবার) সকাল ১১টায় সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচী ঘোষণা করেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক সফিউদ্দিন আহমদ। এ সময় অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রণেশ দাশগুপ্ত চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি চলচ্চিত্রকার মশিউদ্দিন শাকের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক ডিন চিত্রশিল্পী অধ্যাপক মতলুব আলী, ভাস্কর রাসা, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক মোখলেসুর রহমান সাগর, প্রগতি লেখক সংঘের সংগঠক কবি সাখাওয়াত টিপু, লেখক হাবীব ইমন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আদনান রিয়াদ, সাবেক ছাত্রনেতা আকরামুল হক, সংস্কৃতিকর্মী জীবনানন্দ জয়ন্ত, প্রকাশক রবীন আহসান, ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সেনগুপ্ত ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি অনিক রায় প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক সফিউদ্দিন আহমদ এর সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিএম জিলানী শুভ।

সংবাদ  সম্মেলনে এসব সংগঠনগুলির পক্ষে ৮ দফা দাবি জানানো হয়। এসব দাবিগুলি হলো-

১. সাম্প্রদায়িক, বৈষম্যমূলক ও ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

২. সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী অপশক্তি তোষণ বন্ধ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপ্রসূত বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা.ও জাতীয়তাবাদের আদর্শের ভিত্তিতে পাঠ্য পুস্তক প্রণয়ন করতে হবে।

৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন শাহ, সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, এস ওয়াজেদ আলী, হুমায়ুন আজাদসহ যে লেখকদের লেখাগুলো বাদ দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের মনন উদ্বোধনের পথ রুদ্ধ করার জন্যে, সেগুলো সংযোজন করতে হবে।

৪. শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।

৫. জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও বাংলা একাডেমির বানান বিধানের মধ্যে যে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে, তা আমাদের শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে তুলছে। ফলে বাংলা বানানের বিষয়ে তারা একটি নৈরাজ্যের মধ্যে অবস্থান করছে। সৃষ্টিশীল সাহিত্য ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রে এই অসামঞ্জস্যতা দূর করে একটি স্থিতিশীল বানান কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে।

৬. পাঠ্যপুস্তকের নির্লজ্জ দলীয়করণ, ব্যক্তিস্তুতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে শিক্ষার অধিকার রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব গ্রহণ করে কোনো রাজনৈতিক দল তার দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারে না।

৭. দেশের শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে তার মাধ্যমে সংবিধানে উল্লিখিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী, গণমুখী ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার জন্যে উপযোগি পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে হবে।

৮. পাঠ্যপুস্তক জামাতিকরণ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রেরণকারী গণমাধ্যমকর্মীদেরকে চরমোনাইয়ের পীর যে হুমকি দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত