গবেষণার প্রকৃত প্রত্যাশা পূরণে ওপেন একসেস আন্দোলন

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০০:৪৭

জাগরণীয়া ডেস্ক

ওপেন একসেস আন্দোলন গতানুগতিক তথ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, গবেষণা এবং প্রকাশনা শিল্প থেকে ভিন্ন একটি আধুনিক ধারণা এবং পৃথিবীব্যাপী গবেষকদের স্বেচ্ছাশ্রম ভিত্তিক সমন্বিত প্রয়াস। নব্বইয়ের দশকে ইন্টারনেট যখন সহজলভ্য, অনলাইনে পাবলিশিং যখন একটি প্রথা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, তখনই এই ধারনাটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। 

আমরা জানি আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি হচ্ছে তথ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা,গবেষণা। আর গবেষণার সাফল্য এটির ফলাফল বার্তা সকলের কাছে যথাযথভাবে দ্রুততার সাথে পৌঁছানোতে। নতুন ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিস্কার থেকে জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা ব্যবসায় নতুন ধরনের পদ্ধতির প্রয়োগ সবক্ষেত্রেই এটি সমানভাবে প্রযোজ্য।
 
যাই হোক আমাদের বর্তমান গবেষণাপদ্ধতি প্রকাশনার ক্ষেত্রে শতবর্ষের পুরনো মডেল অনুসরন করছে এবং প্রযুক্তি নির্ভর বর্তমান যুগের চাহিদার সাথে তাল মেলাতে পারছে না। বিভিন্ন দেশের সরকার গবেষণার সবচেয়ে বড়পৃষ্ঠপোষক এবং অর্থদাতা। বছরে শত বিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশী অর্থ গবেষণার পেছনে বরাদ্দ থাকে এবং এর অধিকাংশ গবেষকদের পেছনে খরচ হয়।
 
এ কারণে ওপেন একসেসের সাথে যুক্ত গবেষকেরা তাদের গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল কোনরূপ নগদ প্রাপ্তির প্রত্যাশা ছাড়া প্রকাশ করে থাকেন। অপরদিকে শতাব্দী প্রাচীন প্রচলিত পদ্ধতিতে গবেষকেরা তাদের গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশে প্রকাশকের দ্বারস্থ হন। দুই ক্ষেত্রেই গবেষক এবং সম্পাদকেরা কাজ করেন গবেষণা ফলাফল প্রকাশের জন্য পারিশ্রমিক ছাড়া। 

যদিও জনগণের মঙ্গলের উদ্দেশ্যে, জনগণেরই টাকায় এই গবেষণাগুলো করা হয় তথাপিও প্রচলিত গবেষণা প্রকাশ পদ্ধতিতে পুনরায় ঐ গবেষণাপত্র ব্যবহারের জন্য জনগণকে পরোক্ষভাবে অর্থ খরচ করতে হয়।
 
যদিও সকল ক্ষেত্রেই গবেষক এবং সম্পাদকেরা কাজ করেন প্রকাশিত ফলাফলের জন্য কোন পারিশ্রমিক ছাড়া; তথাপি জনগণের পয়সা খরচ করে করা তথ্য ও গবেষণাপত্রের জন্য কারিগরি, আইনী এবং অর্থনৈতিক কারণের নামে গবেষণা ফলাফল জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয় অজ্ঞাত কারণে। ওপেন একসেস আন্দোলন মনে করে এর কোন যৌক্তিক কারণ নেই শুধু মাত্র প্রাচীন ধ্বজাধারী প্রকাশকদের স্বার্থ রক্ষা ছাড়া। যা জন সম্পৃক্ততা থেকে তথ্য, শিক্ষা এবং গবেষণা কার্যক্রমকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। গবেষণাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে ব্যাপকভাবে এবং গবেষণাকে একটি অলীক কার্যক্রম হিসেবে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছে।
 
আমরা জানি থিয়োরি অফ রিলেটিভিটির মত জটিল এবং দুর্বোধ্য আবিষ্কার এসেছে পেটেন্ট অফিসের কেরানি আইনস্টাইনের কাছ থেকে। বৈদ্যুতিক বাল্ব কিংবা উড়োজাহাজের মত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার এসেছে একেবারে অপ্রচলিত গবেষক এডিসন কিংবারাইট ব্রাদার্সের কাছ থেকে। 

কাজেই কুলীন ভাল ছাত্র থেকে হরিধানের জনক হরিপদ কাপালীর মত প্রান্তিক জনগণেকে গবেষণা কার্যক্রমে সমপৃক্ত করা জরুরি। আর গবেষণা কার্যক্রমে জনসম্পৃক্ততার মতো মৌলিক অপরিহার্যতা ডিজিটাল টেকনলজি প্রসারের মাধ্যমে অর্জন সম্ভব।

সরকারের মাধ্যমে জনগণই শিক্ষা, তথ্য এবং গবেষণা কাজের জন্য মূল অর্থদাতা। তারা মানবিক উন্নয়নের জন্য, জ্ঞানের উৎকর্ষের জন্য অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে। ওপেন একসেস আন্দোলন জনগণের এই বিনিয়োগ এবং প্রত্যাশার ফলাফল দ্রুততার সাথে জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। 

ওপেন একসেস অনলাইনে বিনামূল্যে তাৎক্ষনিক প্রাপ্য গবেষণাপত্রসমূহ ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশের জন্য কাজ করে। এটি একইসাথে তথ্য এবং গবেষণাপত্র সমূহ ব্যবহারের অধিকার নিশ্চিতের আন্দোলন।

তাই ওপেন একসেস মানে বিনামূল্যে আরও বেশী পাঠক, আরও বেশী গবেষণা সহযোগী, আরও বেশী সাইটেশন এবং ফলশ্রুতিতে বেশী বেশী স্বীকৃতি।

লেখক: ডঃ মোঃ মিলন খান, এম এমআসাদুল্লাহ, কনক মনিরুল ইসলাম, শুভ্রা কর, শাহজাদা মাসুদ আনোয়ারুল হক, শামীম হোসেন, আমিনুল মিঠু, আবু হানিফা, হাসিব দীপু, আরশাদ কাইয়ুম

লেখকগণ ওপেন একসেস বাংলাদেশের সদস্য

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত