কোয়ার্টজ মিডিয়া এলএলসি’র প্রতিবেদন

বিশ্বের সুখীতম অর্থনীতির গল্প বলছে বাংলাদেশ

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০১৭, ১৮:৫৪

জাগরণীয়া ডেস্ক

বাংলাদেশের ১৬০ মিলিয়ন মানুষের সংখ্যা কিন্তু ফ্রান্স, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডসের সম্মিলিত জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। বিশ্বের জনবহুল ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার ওপরে। দেশটির আকার ও দারিদ্র সীমার গভীরতা বিবেচনা করলে হয়তো হতাশাজনক চিত্র চোখে পড়বে। কিন্তু এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বের সুখীতম অর্থনীতির গল্প বলছে। এ কথাই বলছে কোয়ার্টজ মিডিয়া এলএলসির একটি প্রতিবেদন।  

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৭.১ শতাংশ। এটা বিগত ৩০ বছরের মধ্যে দ্রুততম গতিতে এগিয়েছে। টানা ছয় বছর জিডিপি বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি হারে। অধিকাংশ বিশ্লেষকের মতে, ক্রমবর্ধমান জিডিপি বাংলাদেশে নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হবে। রেটিং ফার্ম মুডিস বলছে, বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধির হারকে দারুণ শক্তিশালী বলা যায়।  

তবে এই অগ্রগতি মোটেও সুখকর হবে না, যদি না তা দরিদ্র জনগোষ্ঠী পর্যন্ত পৌঁছায়। বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৫-২০১০ সালের মধ্যে দরিদ্রতম মানুষের ৪০ শতাংশের আয় বৃদ্ধির গতি অন্যদের চেয়ে ০.৫ শতাংশ দ্রুততর ছিল। অথচ ভারতে এ অবস্থা দেখা যায়নি। সেখানে দরিদ্রতম মানুষের আয় বৃদ্ধির গতি অন্যদের তুলনায় নগণ্য।  

এই সার্বিক অগ্রগতির বিচারে দারিদ্রতা কমছে। ১৯৯১ সালে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ চরম দরিদ্র অবস্থার মধ্যে ছিল। কিন্তু আজ, বিশ্বব্যাংকের মতে, এই জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৪ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।  

ইয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ আহমেদ মুশফিকের মতে, বাংলাদেশের এই সাম্প্রতিক সফলতার পেছনে দুটো বিষয় প্রভাবশালী ছিল- একটি ক্রমশ এগিয়ে যাওয়া গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি আর দ্বিতীয়টি শক্তিশালী এনজিও খাত। দুর্বল অবকাঠামো এবং তত্ত্বাবধানে অব্যবস্থাপনার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনার পরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়েছে গার্মেন্ট খাত। ১৯৭০ সালে আমেরিকার আরোপিত টেক্সটাইল কুয়োটা সিস্টেমের সুবিধা লাভ করে বাংলাদেশ। তখন ক্রমবর্ধমান দক্ষিণ কোরিয়ার গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি থেকে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করতেই এই কুয়োটা সিস্টেম তৈরি করে ইউএসএ। এর সঙ্গে তাল মেলাতে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠান খোলে কোরিয়ানরা। তার সুবাদেই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তিতে দক্ষতাসম্পন্নদের দিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।  

পাশাপাশি দেশের দারিদ্রতা বিমোচন এবং স্বাস্থ্য খাতকে স্বাস্থ্যবান করার পেছনে শক্তিশালী এনজিও ব্যবস্থাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মুশফিক। এই খাত দেশের জন্য কাজ করেছে সরকারের সমান্তরালে থেকে। ব্র্যাকের মতো বিশ্বের সর্ববৃহৎ এনজিও ৬০ মিলিয়ন বাংলাদেশির বাড়িতে স্বাস্থ্যকর টয়লেটের ব্যবস্থা করেছে বলে দাবি করা হয়। লিঙ্গবৈষম্য ঘোচাতে ও জীবনের প্রত্যাশা পূরণেও ভূমিকা রেখেছে এনজিওগুলো।  

তবে এর মধ্যেও রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগের অভাব উন্নয়নের গতিকে কিছুটা স্তিমিত করেছে। রাজধানী ঢাকা ইতিমধ্যে বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ শহরের একটি। এটা বাসের অযোগ্য এক শহর হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে গোটা বিশ্বে।  

অর্থনীতিবিদ মুশফিকের সবচেয়ে বড় চিন্তা, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার মতো কোনো ঘটনা যেন আর না ঘটে। ২০১৩ সালে ঢাকার অদূরে সাভারের এই গার্মেন্ট ভবন ধসে ১১০০ গার্মেন্টকর্মী মারা যান। এ খাতে কর্মীদের নিরাপত্তাকে তাই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এটা কেবল জীবন রক্ষার জন্যেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের নিষেধাজ্ঞা থেকে বেঁচে থেকে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতেও এর দরকার রয়েছে। 

সূত্র: কোয়ার্টজ মিডিয়া এলএলসি 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত