শিল্পায়নের পথে এগিয়ে চলেছে দ্বীপ জেলা ভোলা

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০১৭, ১০:০৩

জাগরণীয়া ডেস্ক

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দেশের সর্ববৃহৎ দ্বীপ জেলা ভোলা ক্রমশই শিল্পায়নের পথে এগিয়ে চলেছে। গ্যাস সমৃদ্ধ দক্ষিণের এই জেলায় নতুন একটি গ্যাসকূপ সন্ধানের খবরে এর চাহিদা যেন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্যাস ভিত্তিক শিল্পায়নের মাধ্যমে এখানে উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক গতি সঞ্চারিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া মহাজোট সরকারের পরিকল্পিত নানা উন্নয়নে অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জেলা থেকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জেলার পথে এগিয়ে চলছে। গড়ে উঠেছে মাঝারি, ক্ষুদ্র ও বৃহৎ আকারের বিভিন্ন শিল্প-কলকরখানা।

দেশের অন্যতম বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান শেলটেক গ্রুপ অব কোম্পানি উপজেলা সদরে সিরামিক্স উৎপাদনের কারখানা স্থাপনে কাজ করছে। এখান থেকে উৎপাদিত টাইলস, বাথরুম ফিটিংসসহ বিভিন্ন সিরামিক্স পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানী করা হবে। কার্যক্রম চলছে কাজী ফার্ম, সুন্দরবন গ্যাস কম্পানিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। চালু হয়েছে কোল্ড স্টোরেজ, সয়ংক্রিয় মেশিনের বেশ কয়েকটি অটো রাইস মিল। বিসিক শিল্প নগরীতে চালছে ফিড, প্লাস্টিক কারখানা, পাইপ তৈরি, আলকাতরা, টাইলস, মবিল, জুতা ইত্যাদির কারখানা। এরই মধ্যে যমুনা গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, প্রাণ, বসুন্ধরা, আবুল খায়ের, আরএফএলসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ভোলায় শিল্পায়নের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে।

ভোলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল মমিন টুলু জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের একান্ত প্রচেষ্টায় ভোলায় ব্যাপক উন্নয়মূলক কাজ হচ্ছে। এখানকার বিপুল পরিমাণ গ্যাসকে কাজে লাগিয়ে শিল্পায়ন করা সম্ভব। ইতোমধ্যে অনেক উদ্যোক্তরা বিনিয়োগ শুরু করেছেন। ভোলা-বরিশাল ব্রীজ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করার কাজও চলছে। এই সেতুটি নির্মিত হলে ভোলা আর বিচ্ছিন্ন জেলা থাকবেনা। সদরে খেয়াঘাট ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় সরকারিভাবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য ২০৮ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

মূলত গ্যাস সমৃদ্ধ জেলায় প্রচুর গ্যাসের মজুত থাকায় গ্যাস ভিত্তিক শিল্পায়ণের বিষয়টি মাথায় রেখেই উদ্যেক্তারা জেলার বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছেন। আর আবিস্কৃত নতুন গ্যাসকূপ শাহবাজপুর ইষ্ট-১ থেকে ৭০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মোট ৫টি কূপে বর্তমানে এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আছে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। অনেকেই জমি কিনতে চাচ্ছেন এই জেলায়। তাই সাম্প্রতিক সময়ে জমির দামও বৃদ্ধি পেয়েছে এখানে।

জেলা প্রশাসক মো. সেলিমউদ্দিন বলেন, পায়রা বন্দর-পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় ও ভোলা-বরিশাল সংযোগ সেতু হওয়ার সম্ভাবনার কারণে জেলায় শিল্পায়নের একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। গ্যাসের অতিরিক্ত রিজার্ভটা জানার পরে আরো বেশি পরিমাণ শিল্প উদ্যেক্তরা এখানে আসবেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যেক্তাদের জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। যাতে তাদের কোন জটিলতা বা ভোগান্তি পোহাতে না হয়।

ভোলা স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ অপু বলেন, জেলায় গ্যাস ভিত্তিক ২২৫ মেগাওয়াট একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যা থেকে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। আরো ১টি ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় দৈনিক সারে ৫ শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। যা দিয়ে এখানে ব্যাপক আকারে শিল্পায়ন করা যাবে। দেশের খ্যাতিমান বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান জেলায় জমি অধিগ্রহণের কাজ চালাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

জানা যায়, বিপুল গ্যাসের উৎপত্তি স্থল ভোলার প্রধান সমস্যা যোগাযোগ ব্যবস্থা। সরাসরি সড়ক পথ না থাকায় নদী পথেই মূলত এই অঞ্চলের মানুষ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে। আর সেই দুর্ভোগ লাঘবে বর্তমান সরকার ভোলাবাসীর প্রাণের দাবি ভোলা-বরিশাল ব্রীজ নির্মাণের উদ্যেগ গ্রহণ করেছে। এই ব্রীজ নির্মাণ হলে এখনকার মানুষ অল্প সময়ে পদ্মা ব্রীজ হয়ে খুব সহজে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যেতে পরবে।

এ ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভোলা-বরিশাল ব্রীজ নির্মাণ ও ভোলাকে স্থায়ীভাবে নদী ভাঙ্গার হাত থেকে রক্ষা করাই এখন তার প্রধান স্বপ্ন। এ দুটি কাজ হয়ে গেলে ভোলা হবে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জেলা।

চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারগুলোর আমলে ভোলার গ্যাস কাজে না লাগালেও বর্তমান সরকার গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এছাড়াও ভোলা পৌর এলাকায় গৃহস্থালী কাজের জন্য আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। দেশের বড় বড় শিল্প উদ্যেক্তারা ভোলায় শিল্পায়নের জন্য উদ্যেগ নিচ্ছে।

অন্যদিকে ভোলাবাসীর আরেক আতংক ছিলো প্রমত্তা মেঘনা নদীর ভয়াল ভাঙ্গন। বর্ষা মৌসুম এলেই দ্বীপ জেলার বাসিন্দারা ভয়ে থাকতো। তাই ভাঙ্গন রোধে বর্তমান সরকার তীর সংরক্ষণে প্রায় ১৬ শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। জেলার ৪টি নির্বাচনী এলাকায় বর্তমানে নদী নিয়ন্ত্রণে ব্লক ও জিও ব্যগ স্থাপনে কাজ এগিয়ে চলছে। এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে ভোলাকে স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে করে দারুণ খুশি স্থানীয়রা। মানুষের মাঝে নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়েছে। ভোলার সম্ভাবনা বাড়ছে সারা দেশের কাছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত