উৎসবমুখর বর্ষা বরণ উদীচী’র

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০১৭, ১৮:১৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তির প্রাণোচ্ছলতায় উচ্ছসিত হয়ে ষড়ঋতুর অন্যতম সৌন্দর্যমণ্ডিত, প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর বর্ষা ঋতুকে বরণ করলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।

পহেলা আষাঢ় ১৪২৪, ১৫ জুন ২০১৭ বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বর্ষা মঙ্গল। প্রতিবছর বর্ষা উৎসব পালন করলেও এবার রাঙামাটি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে পাহাড় ধসে বহু লোকের প্রাণহানিতে সকলের মঙ্গল কামনায় অনুষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্ষা মঙ্গল। 

সকাল ৭টায় পাহাড় ধসে নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর বিশিষ্ট বাঁশি বাদক শেখ আবু জাফরের একক বংশী বাদনের মাধ্যমে শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

তিনি বাঁশিতে ‘মেঘ মেদুর বর্ষায় কোথা তুমি’ গানটির সুর তোলেন। সকালের শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশে আবু জাফরের অসাধারণ বাঁশির সুরে বিভোর হন উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারা। এরপর ‘নীল অঞ্জন ঘন কুঞ্জ ছায়ায়’ গানটির সাথে একক নৃত্য পরিবেশন করেন বেনজীর আহমেদ লিয়া। বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী ডালিয়া আহমেদের আবৃত্তি পরিবেশনের পর এরপর অনিক বসুর পরিচালনায় ‘স্পন্দন’-এর শিল্পীরা ‘মেঘের পালক’ গানটির সাথে পরিবেশন করেন দলীয় নৃত্য।

এরপর একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন লোক শিল্পী বিমান চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি পরিবেশন করেন ‘আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানি রে’ গানটি। এরপর আবৃত্তি নিয়ে উপস্থিত হন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী বেলায়েত হোসেন। 

এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেনের গ্রন্থনায় গীতিআলেখ্য “বিহ্বল বর্ষায়” পরিবেশন করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা। গান, নাচ ও আবৃত্তির সমন্বয়ে রচিত গীতিনৃত্যালেখ্যে বর্ষার নানা রুপ ও স্বাদের সাথে পরিচয় ঘটানো হয়। এরপর মঞ্চে দলীয় পরিবেশনা উপস্থাপন করে উদীচী কাফরুল শাখা, স্বপ্নবীণা এবং উদীচী মিরপুর শাখার শিল্পীরা। ইকবাল খোরশেদের একক আবৃত্তির পর একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শামীম আল মামুন, সাজেদা বেগম সাজু, অবিনাশ বাউল, মায়েশা সুলতানা ঊর্বি এবং জাকির হোসেন।

এরপর উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক রহমান মুফিজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয় বর্ষা কথন। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহ-সভাপতি একরাম হোসেনের সভাপতিত্বে এ পর্বে অংশ নেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন। এ পর্বে বর্ষা কথন পাঠ করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম। আর বর্ষা ঘোষণা পাঠ করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান। বর্ষা ঘোষণায় প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার উপর জোর দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়। সবশেষে উদীচী কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগের শিল্পীরা পরিবেশন করেন বর্ষায় হাওড়ের মানুষের জীবনসংগ্রাম নিয়ে নাটিকা ‘হাওরনামা’।

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে শুষ্কপ্রায় প্রকৃতিকে নিবৃত্তি দিতে প্রতিবছর ষড়ঋতুর পরিক্রমায় ঘুরে ঘুরে আসে বর্ষাঋতু। অবিরাম বারিবর্ষণে স্নিগ্ধ সজীব পরশ বুলিয়ে দিয়ে মানুষকে দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয় বর্ষা। প্রকৃতি রক্ষার ব্রত আর অপার সৌন্দর্য্যরে অধিকারী এই বর্ষা ঋতুকে বরণ নেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিবছরই বর্ষা উৎসবের আয়োজন করে উদীচী।

উদীচী’র আমন্ত্রণে বর্ষার আবাহনে মেতে ওঠে ছোট থেকে বড় নানা বয়সের নানা শ্রেণীর মানুষ। মিলিত হয় বর্ষার উৎসবে, প্রাণের উৎসবে। অবগাহন করে প্রকৃতির বৃষ্টিতে, বর্ষার পবিত্র স্রোতধারায়। এবার একাদশবারের মতো আয়োজিত হয় বর্ষা উৎসব। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত