এসো পা বাড়াই (১৭ তম পর্ব)

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০১৭, ০১:১৫

"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"

LEAN IN                                                                 এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD         নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG                           অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি

নারীরা যেসব বাধার মুখোমুখি হয় তার বেশিরভাগ এর মূলে রয়েছে ভয়। কেউ পছন্দ করবে না, এই ভয়। ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ার ভয়। নেতিবাচক দৃষ্টি আকর্ষণ এর ভয়। নাগাল ছাপিয়ে যাওয়ার ভয়। কিভাবে বিবেচিত হবে, এই ভয়। ব্যর্থতার ভয়। এবং ভয়ের পবিত্র ট্রিনিটি (খ্রিস্টীয় মতে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা- এই তিনের রহস্যময় সমন্বয়কে ট্রিনিটি বলা হয়) হচ্ছে, একজন খারাপ মা/ স্ত্রী অথবা খারাপ কন্যা হওয়ার ভয়।

এই ভয় না থাকলে, নারীরা পেশাগত সাফল্য এবং ব্যক্তিগত পরিপূর্ণতা পেতে পারে- আর স্বাধীনভাবে যেকোন একটি বা দুটোই বেছে নিতে পারে। মানুষকে ঝুঁকি নিতে উৎসাহিত করার চর্চা তৈরীতে ফেসবুকের অফিসে আমরা কঠোর পরিশ্রম করি। পুরো কার্যালয় জুড়ে পোস্টার লাগানো আছে যা এই মনোভাবকে আরো চাঙ্গা করে তোলে। উজ্জ্বল লাল অক্ষরে একটি পোস্টার ঘোষণা দিচ্ছে, “ভাগ্য সাহসীদের পক্ষে” (“Fortune favors the bold”)। অন্য আরেকটি জোর দিচ্ছে, “এগিয়ে যাও এবং বলিষ্ঠ হও” (“Proceed and be bold”)। আমার পড়তে ভালো লাগে, “যদি ভয় না পেতে, তবে তুমি কি করতে?” (“What would you do if you weren't afraid?”)।

নিউ ইয়র্ক সিটিতে শুধুমাত্র নারীদের জন্য লিবারেল আর্টস এর একটি বিদ্যালয় আছে, নাম বার্নার্ড কলেজ। এই কলেজের প্রেসিডেন্ট ড্যাবরা স্পার (Debora Spar) ২০১১ সালে, আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাদের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার জন্য। এই বক্তৃতাতেই প্রথম আমি নেতৃত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বৈসাদৃশ্য নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেছিলাম। মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি বিচলিত অনুভব করছিলাম। স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার সদস্যদের আমি বলেছিলাম যে তাদেরকে শুধু স্বপ্ন পূরণে উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে হবে তাই নয়, সেই সাথে তাদের কাজের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দানেও ব্যাকুল হতে হবে। আমি জানতাম, এই বার্তা ভুল ব্যাখ্যা দিতে পারে, বিশেষ করে যেসব নারীদের পছন্দ আমার মত নয়। এর চেয়ে বড় ভুল আর কিছুই হতে পারে না। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সকলের নিজের পথ নিজে বেছে নেয়ার অধিকার রয়েছে। আমি আরও বিশ্বাস করি, নারীদের নেতৃত্বের ভুমিকায় যেতে উৎসাহিত করার জন্য আমাদের আরো কাজ করতে হবে। যদি স্নাতক ডিগ্রীর অনুষ্ঠানে নারীদের লক্ষ্য উঁচু করতে বলতে না পারি, তবে কবে বলবো?

উদ্যমী নারীদের প্রতি এই বক্তৃতা দেয়ার সময়, আমি নিজেকে আবিষ্কার করেছিলাম অশ্রুজলে যুদ্ধরত অবস্থায়। আমি বক্তৃতা শেষ করতে পেরেছিলাম এবং উপসংহার ছিল এটি:

আরো বেশি সমতার বিশ্বের জন্য তোমরাই প্রতিশ্রুতি। তাই এখানকার সবার জন্য আমার আশা এই যে, এই মঞ্চ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পর, তোমাদের সনদ নেয়ার পর, আজকে রাতে বাইরে যাওয়ার পর, তীব্রভাবে উদযাপন কর- তারপর তোমরা তোমাদের কর্মজীবনের পথে পা বাড়াবে। তোমরা যা করতে ভালবাসো, সেরকম কাজ খুঁজে পাবে এবং তা উদ্যমের সাথে করে যাবে। নিজেদের জন্য সঠিক পেশা খুঁজে পাও এবং একেবারে শীর্ষ পর্যন্ত পৌঁছাও এই কামনা।

(চলবে...)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত