এসো পা বাড়াই (১৩ তম পর্ব)

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৯:২১

"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"

LEAN IN                                                                 এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD         নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG                           অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি

আমার শৈশবের কর্তৃত্বপরায়ণতার গল্পগুলো বারবার বারবার বিশাল রসিকতার সাথে বলা হয়। আসলেই, আমি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছিলাম তখন আমার ছোট ভাইবোন, ডেভিড (David) এবং মিশেল (Michelle)-কে শিখিয়েছিলাম, আমার পেছন পেছন ঘুরতে, আমার একপেশে বক্তৃতা শুনতে আর তা শেষ হলে “সঠিক” বলে চিৎকার করে উঠতে। পাড়ার শিশুদের মধ্যে আমি ছিলাম সবচেয়ে বড়,  অভিযোগ আছে আমার বেশিরভাগ সময় আমি পার করতাম বিভিন্ন শো’র আয়োজন করে যা আমি নিজে পরিচালনা করতে পারি আর ক্লাব তৈরী করে যা আমি চালাতে পারি। মানুষ এই গল্পগুলো নিয়ে হাসাহাসি করে, কিন্তু আজও আমি সবসময় আমার এই আচরণগুলোর জন্য কিছুটা লজ্জিত বোধ করি (এখানে লক্ষ্যণীয় যে আমি একটা পুরো বই লিখে ফেলেছি যা বলে, কেন মেয়েদের মধ্যে এই বোধ তৈরীতে বাধ্য করা উচিত নয়, অথবা হতে পারে যা আংশিকভাবে আমার প্রণোদনা ব্যাখ্যা করে)। 

আমরা যখন ত্রিশের কোঠায় তখনও আমার ভাই-বোনের কাছে আমাকে ক্ষেপানোর সবচেয়ে ভালো পন্থা ছিল এই বিষয়গুলো তুলে ধরা। আমি আর ডেভ (Dave) যখন বিয়ে করি তখন আমাদের সম্মানে, ডেভিড (David) আর মিশেল (Michelle) অত্যন্ত হাস্যকর, চমৎকার এক বক্তৃতা দিয়েছিল যার শুরু এভাবে, “হাই, তোমরা কেউ কেউ মনে কর আমরা শেরীলের ছোট ভাই-বোন, কিন্তু আসলে আমরা শেরীলের প্রথম কর্মচারী- কর্মচারী নাম্বার ১, কর্মচারী নাম্বার ২। শুরুতে একটি এক বছর বয়সী এবং তিন বছর বয়সী শিশু হিসেবে আমরা ছিলাম অপদার্থ এবং দুর্বল, বিশৃঙ্খল আর অলস। সকালে কাগজ পড়ার স্বাভাবিক অভ্যাসের মতই খুব দ্রুত আমরা শুধু নিজেদের উপর থুতু ছিটাতাম। কিন্তু শেরীল ঠিকই আমাদের ভেতর সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিল। প্রায় দশ বছরেরও বেশী সময় সে আমাদেরকে তার ছায়ায় রেখে চাবকিয়ে গড়ে তোলে।” 

সবাই হাসছিল আর ওরা বলে চলছিল, “আমাদের জানামতে শেরীল প্রকৃতপক্ষে কখনোই একটি শিশু হিসেবে খেলা করেনি বরং আসলেই অন্য সব শিশুদের খেলার আয়োজন করে দিয়েছে। শেরীল বড়দেরও তত্বাবধান করতো। যখন আমাদের বাবা-মা ছুটিতে বেড়াতে যেতো, সাধারণত তখন আমাদের দাদা-দাদী আমাদের দেখাশোনা করতো। একবার বাবা-মা চলে যাওয়ার আগে শেরীল প্রচণ্ড প্রতিবাদ করে বলেছিল যে, এটা ঠিক না, এখন আমাকে ডেভিড আর মিশেলের সাথে সাথে আবার দাদা-দাদীরও দেখাশোনা করতে হবে”। সবাই আরও জোরে হেসে উঠেছিল। 

আমিও হেসেছিলাম, কিন্তু তখনও আমার ভেতরের এক অংশে অনুভব করছিলাম যে, একটা ছোট্ট মেয়েকে এভাবে উদ্ধত হিসেবে চিন্তা করাটা অশোভন। এই ভাবনা আমাকে কুঁকড়ে ফেলছিল। খুব ছোটবেলা থেকেই দায়িত্ব নিতে এবং তাদের মতামত দিতে ছেলেদেরকে উৎসাহিত করা হয়। শিক্ষকগণ ছেলেদের সঙ্গে বেশি আদান-প্রদান করেন, ঘন ঘন তাদেরকে ডাকেন, তাদেরকে বেশি বেশি প্রশ্ন করেন। আবার ছেলেরাই সাধারণত বেশি প্রশ্নের উত্তর দিতে কথা বলে এবং যখন বলে শিক্ষকরাও সাধারণত শোনে। যখন মেয়েরা বলতে চায়, শিক্ষকরা প্রায়ই তাদের ধমক দেয় নিয়ম ভঙ্গ করার জন্য এবং মনে করিয়ে দেয়, কথা বলতে চাইলে প্রথমে তাদের হাত ওঠাতে।

(চলবে...)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত