এসো পা বাড়াই (১১তম পর্ব)

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২৩:২১

"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"

LEAN IN                                                                 এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD         নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG                           অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি

এত অগ্রগতির মধ্যেও, এখনো পর্যন্ত নারীদের উপর একটা সামাজিক চাপ কাজ করে তা হলো, একেবারে তরুণ বয়স থেকেই বিয়ের বিষয়ে নজর রাখার জন্য। আমি যখন কলেজ শুরু করেছিলাম, তখন আমার বাবা-মা আমার একাডেমিক অর্জনে যত গুরুত্ব দিয়েছিল, তার থেকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছিল আমার বিয়ের বিষয়ে। তারা আমাকে বলেছিল, যোগ্য মেয়েরা অল্প বয়সে বিয়ে করে, যাতে অন্যরা সব নিয়ে নেয়ার আগেই একটা “ভালো ছেলে” পাওয়া যায়। আমি তাদের পরামর্শ মেনে চলছিলাম এবং কলেজ জীবনের প্রত্যেকটা 'ডেট'কে আমি সম্ভাব্য জীবনসঙ্গী ভেবে পরখ করছিলাম (বিশ্বাস করো, উনিশ বছর বয়সের একটা ডেটকে নষ্ট করার এটা একটা নিশ্চিত উপায়)। আমার স্নাতক এর শেষ দিকে, আমার থিসিস উপদেষ্টা ল্যারি সামার্স (Larry Summers), প্রস্তাব দিয়েছিল আন্তর্জাতিক ফেলোশিপ  এর জন্য আবেদন করতে। বিদেশের মাটিতে একটা ডেট থেকে জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম- এই বিবেচনায় আমি সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলাম। পরিবর্তে, আমি ওয়াশিংটন, ডি.সি তে স্থানান্তরিত হয়েছিলাম, যা ছিল যোগ্যতা সম্পন্ন পুরুষে পরিপূর্ণ জায়গা। এটা কাজে লেগেছিল। কলেজ থেকে বের হওয়ার প্রথম বছরেই আমার একজনের সাথে পরিচয় হয়েছিল, যে শুধু যোগ্য-ই নয়, সেই সাথে চমৎকার একজন মানুষ, তাই আমি তাকে বিয়ে করেছিলাম। আমার বয়স ছিল চব্বিশ আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে বিয়ে হচ্ছে সুখী ও ফলদায়ক জীবনের জন্য প্রথম এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

কিন্তু এটা সেভাবে কাজে আসেনি। সারাজীবনের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়ার মত যথেষ্ট পরিপক্ক আসলে আমি ছিলাম না, তাই সম্পর্কটি দ্রুতই ভেঙ্গে যায়। পঁচিশ বছর বয়সে, আমি আবার বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম- এবং আবারও বিবাহবিচ্ছেদ। ঐ সময় মনে হয়েছিল, এটা বড় রকমের ব্যক্তিগত এবং প্রকাশ্য ব্যর্থতা। বহু বছর ধরে আমার মনে হত যে, আমার বুকের উপর যে রক্তাক্ত ডি অক্ষর (Divorced) সেলাই করা তার সাথে তুলনায় আমার পেশাগত অর্জন যাই হোক না কেন তা ম্লান হয়ে যায়। (প্রায় ১০ বছর পর আমি জানতে পেরেছিলাম যে, সব 'ভালো ছেলে' নিয়ে নেয়া হয়নি, আর বুদ্ধিমানের মত এবং খুব আনন্দের সাথে আমি ডেভ গোল্ডবার্গ (Dave Goldberg)-কে বিয়ে করেছিলাম।

আমার মতই, গেইল যীম্যাচ লেমন (Gayle Tzemach Lemmon), (বৈদেশিক সম্পর্ক কাউন্সিলের ডেপুটি ডিরেক্টর, নারী ও পররাষ্ট্র নীতি প্রোগ্রাম)-কে কর্মজীবনের উপর বিয়ে কে অগ্রাধিকার দিতে উত্সাহ দেওয়া হয়েছিল। সে যেভাবে বর্ণনা করেছিল দ্যা আটলান্টিক (The Atlantic) এ,- “আমার ২৭ বছর বয়সে, আমি একটি অভিজাত ফেলোশিপ পেয়েছিলাম, জার্মানী ভ্রমনের জন্য, যেখানে আমি জার্মান ভাষা শিখবো এবং ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল (Wall Street Journal) এ কাজ করবো- বিশের কোঠায় থাকা কারো জন্য, যে কোন বিবেচনায় এটি ছিল একটি অবিশ্বাস্য সুযোগ। আমি জানতাম এটি আমাকে শুধু স্নাতক স্কুলের প্রস্তুতির জন্য সাহায্য করবে তা নয় বরং সব কিছু ছাড়িয়ে অনেক বেশী উপকারে আসবে। আমার বান্ধবীরা অবশ্য ভয়াবহ মানসিক ধাক্কার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছিল যে, একবছরের জন্য বিদেশে বসবাসের ঐ সময়ে আমাকে, আমার প্রেমিককে ছেড়ে যেতে হবে! আমার আত্মীয়রা জানতে চেয়েছিল, আর কখনোই বিয়ে করতে পারবো কিনা, তা নিয়ে আমি চিন্তিত কিনা। আর যখন আমার তখনকার প্রেমিকের সাথে একটা বার-বি-কিউ পার্টিতে গিয়েছিলাম, তার বস আমাকে আড়ালে নিয়ে মনে করিয়ে দিয়েছিল যে, “এরকম ভালো ছেলে অনেক নেই”। 

গেইল (Gayle) এর দৃষ্টিতে, এই এত নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার ফল হচ্ছে অনেক নারী, “এখনও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে একটি খারাপ জগত হিসেবে দেখে"।

(চলবে...)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত