কাজী নজরুল: এক সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক মানুষ

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৩৮

তনুশ্রী বিশ্বাস

ধর্মান্ধ, ধর্মান্ধতা, নাস্তিক, আস্তিক শব্দগুলো এখন আমাদের কাছে খুব পরিচিত। মাঝেমাঝেই শব্দগুলো আমরা শুনে থাকি। ধর্মান্ধতা আগেও ছিলো এখনো আছে। আবার কিছু মানুষ আছে যারা নিজেরা মুখে বলে মানবধর্মে বিশ্বাসি বা নিজে নিজের ধর্মকে খুব শ্রদ্ধা করে, কিন্তু সেই অন্যের ধর্মকে কটাক্ষ করে কথা বলে। আবার এমনো আছে, সারাদিন নজরুল রবীন্দ্রনাথ নিয়ে পড়ে থাকেন, সামনে বলে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা কিন্তু পেছনে ঠিকই অন্যের ধর্মকে কটাক্ষ করে কথা বলবে।

কিন্তু এই সবকিছুর ঊর্ধ্বে যেয়ে যিনি সত্যের মানবতাকে মনে প্রাণে গ্রহণ করেছিলেন এবং মানুষকে মানবিক হওয়ার জন্য পথ দেখিয়ে গেছেন আজ সেই মহান ব্যক্তির প্রয়াণ দিবস। তিনি আমাদের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৭৬ সালের এই দিনে (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র, ইংরেজি ২৯ আগস্ট) ঢাকায় তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) ৭৭ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

কবিকে উপমা দিয়ে শেষ করা যাবে না। তাকে পরিপূর্ণ করে তুলে ধরার সাধ্যও আমার নেই! কবির তুলনা কবি নিজেই! শান্তি, সাম্য, অধিকার, স্বাধিকার –নজরুলের কাব্যিক চেতনার একেকটি হীরকখণ্ড। সাম্প্রদায়িকতা, কুসংস্কার আর কূপমণ্ডুকতা এর বিরুদ্ধে ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন চেতনার কবি। তিনি যেমন মেনে নেন নি নারীর প্রতি অবিচার আর বৈষম্য, তেমনি মেনে নেন নি দুর্বলের প্রতি সবলের আধিপত্য।

তিনি এমন একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ তৈরি করতে চেয়েছিলেন যারা ধর্মের ভয়ে নয়, মানবিকতার স্বার্থে মানুষের পাশে দাঁড়াবে, মানুষকে সাহায্য করবে।
কবি হিন্দু মুসলামান, মুসলমান হিন্দু- এভাবে কখনো চিন্তা করেননি। তিনি সবাইকে একচোখে মানুষের রূপে দেখেছেন।
তিনি তার লেখায় হিন্দু মুসলমানকে এক সুতোয় গেঁথেছেন। ইসলামিক গানের পাশাপাশি লিখেছেন শ্যামা সংগীত, কীর্তনও!

সাম্যবাদি’ কাব্যগ্রন্থের কবির লেখা পড়লে কিছুটা আঁতকে উঠি! এতো বছর আগেও মানুষ এতো আধুনিকভাবে ভাবতো!? যখন কিনা ধর্মের গোঁড়ামি কুসংস্কারে ভরা ছিলো!। ‘সাম্যবাদি’, ‘মানুষ’ এবং ‘নারী’ কবিতায় নজরুল ধর্মীয় কুসংস্কার এবং উগ্রতার বিপক্ষে মানবতার কথা তুলে ধরেছেন।

"গাহি সাম্যের গান- 
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান।
যেখানে মিশেছে হিন্দু-মুসলিম-বুদ্ধ-খ্রিশ্চান।
গাহি সাম্যের গান!"

পাকিস্তানের শাসনামলে কবি কিছুটা নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ কবির এই মুক্তচিন্তার লেখালেখির জন্য কবিকে অনেক অপমানিত হতে হয়েছিলো। হুমকিও দিয়েছিলো ধর্মান্ধ মানুষ! অনেকে আবার কবিকে 'কাফের' খেতাবও দিয়েছিলো!

কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কবি আবার লেখালেখিতেও স্বাধীন হয়েছিলেন। বাংলাদেশে তার গানের বই, কবিতার বই ছাপতে শুরু হলো, সেই থেকে এখনো পর্যন্ত কবি আমাদের হৃদয়ে জাগ্রত।

দিন দিন হয়তো আমরা আধুনিক থেকে আধুনিকতর হচ্ছি কিন্তু কেউই কবির মত আধুনিক চিন্তা করতে সক্ষম হইনি। কিংবা এখনো বেশিরভাগ মানুষই ধর্মান্ধতায় মগ্ন তাই মুক্তচিন্তা যারা করছে তাদের সামনে বিশাল এক দেয়াল তুলে দেওয়া হচ্ছে।

আজকে কবির প্রয়াণ দিবসে কবির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখেই বলছি "অন্যের সামনে মহান সাজার জন্য নয়, নিজের মন থেকেই মানবতাকে গ্রহণ করি এবং শুধু মুক্তচিন্তা নিয়ে কাজ করি। তাহলে সমাজ ঠিকই একদিন ঠিকই আলোকে গ্রহণ করবে!"

লেখক: শিক্ষার্থী

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত