এসো পা বাড়াই (২৬ তম পর্ব)

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০১৭, ২২:৪০

"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"

LEAN IN                                                                 এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD         নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG                           অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি


আমি সতর্ক হতে চলেছি, শুধুমাত্র আমরা নারীরা কিভাবে নিজেদের এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হচ্ছি তার প্রতি না, এছাড়াও কিভাবে আমরা এই বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করতে এবং ঠিক করতে ব্যর্থ হচ্ছি তার প্রতিও। এবং এই 'আমরা' এর মধ্যে আমি নিজেও আছি। কয়েক বছর আগে আমি ফেসবুকের শ’খানেক কর্মচারীর মধ্যে লিঙ্গ সমস্যা (Gender Issue) নিয়ে একটি বক্তব্য দিয়েছিলাম। বক্তব্যের শেষে যতক্ষণ সময় ছিল আমি প্রশ্ন নিয়েছিলাম। ঐ বিকালের পরে অফিসে ফিরে দেখি একজন তরুণ নারী আমার সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছে। “আমি আজকে কিছু শিখেছি”, সে বললো। আমি খুশি হয়ে জানতে চাইলাম “কি?”, যেহেতু আমি ভাবছিলাম, সে বলতে যাচ্ছে কিভাবে আমার কথা তাকে স্পর্শ করেছে। পরিবর্তে সে বললো, “আমি আমার হাত উঁচু করে রাখতে শিখেছি”। 

সে ব্যাখ্যা করেছিল যে আমার বক্তব্যের শেষে আমি বলেছিলাম আর মাত্র দুটি প্রশ্ন নিবো। আমি তাই করেছিলাম এবং তখন সে, অন্য সব নারীদের সাথে তার হাত নামিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু কিছু পুরুষ তখনও হাত উঁচিয়ে রেখেছিল। এবং যেহেতু তখনও বাতাসে হাত নড়ছিল, আমি আরও প্রশ্ন নিয়েছিলাম - শুধুমাত্র পুরুষদের কাছ থেকে। আমার কথা তাকে স্পর্শ করার বদলে তার কথা আমাকে এক টন ইটের মত আঘাত করেছিল। যদিও আমি লিঙ্গ সমস্যা (Gender Issue) নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলাম, কিন্ত নিজেই নিজেদের প্রতি অন্ধ ছিলাম।

আমরা যদি বৃহত্তর সমতার পৃথিবী চাই, আমাদের স্বীকার করতে হবে যে নারীদের হাত উঁচু করে রাখার সম্ভাবনা কম। আমাদের প্রয়োজন প্রতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তিগতভাবে এই ব্যবহারকে লক্ষ্য করা আর ঠিক করা। আরও বেশি নারীকে উৎসাহ দিয়ে, উন্নীত করে এবং সমর্থন দিয়ে এটা করা যায়। নারীদেরও তাদের হাত উঁচু করে রাখতে শিখতে হবে কারণ যখন তারা হাত নামিয়ে নেবে, তখন সেরা উদ্দেশ্য নিয়ে রাখা ব্যবস্থাপকও হয়তো খেয়াল করবে না।

তখনকার ওয়ার্ল্ড ব্যাংক (World Bank) এর প্রধান অর্থনীতিবিদ ল্যারি সামার্স (Larry Summers) এর সাথে আমি যখন কাজ শুরু করি সে ভিকি (Vicki) নামে একজন আয়কর আইনজীবীর সঙ্গে বিবাহিত ছিল। সে ভিকির পেশার প্রতি খুবই সহায়ক ছিল এবং তাকে জোরালোভাবে পরামর্শ দিতো, ছেলেদের মত মূল্য ধারণ করতে (bill like a boy)। তার অভিমত ছিল এরকম যে, পুরুষরা কোন সমস্যা নিয়ে তাদের চিন্তায় যে সময় ব্যয় করে- এমনকি গোসলের সময়ও- তারা সেটাকে মূল্য পরিশোধযোগ্য সময় বলে বিবেচনা করে। যাই হোক, তার স্ত্রী এবং স্ত্রীর নারী সহকর্মী ভেবে নিয়েছিল যে তারা সর্বোচ্চ ভালোভাবে পুরো দিন কাজ করতে পারছে না। তাই তাদের মক্কেলদের প্রতি ন্যায্য হওয়ার তাগিদে তারা অফিসে ব্যয় করা সময় থেকে সময় বাদ দিয়ে ছাড় দিতো। ঐ আইনী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান আইনজীবী কি কেউ ছিলেন? ল্যারি তার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দেখাতে, হার্ভাড ল স্কুলের এক সুপরিচিত প্রফেসরের গল্প তাদের কাছে করেছিল, যাকে একজন বিচারক বলেছিলেন, তার বিলকে আলাদা ভাগ করে সাজিয়ে দিতে। উত্তরে সেই প্রফেসর বলেছিলেন যে তিনি তা পারবেন না কারণ প্রায়ই তিনি একই সময়ে দুইটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করেন।

(চলবে...)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত