সংগ্রামী নাসিমা ইসলাম

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০১৬, ২২:২৫

তাহমিদ জামান

আমরা যারা আশি ও নব্বইয়ের দশকে সমাজ বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ছাত্র ইউনিয়নের পতাকা তলে জড়ো হয়েছিলাম, তাদের দুই স্বপ্ন পুরুষ- আশির দশকের শহীদ কমরেড তাজুল ও নব্বই দশকের শহীদ মঈন হোসেন রাজু। মনে মনে স্বপ্ন দেখতাম কিভাবে রাজুর মতো সাহসী হওয়া যায়, কিভাবে কমরেড তাজুলের মতো নিজেকে শ্রেণিসংগ্রামে নিয়োজিত করবো, শ্রমিক-ক্ষেতমজুরের সত্যিকারের বন্ধু হবো। এই স্বপ্নপুরুষদের পরিবারও ছিলো আমাদের ভীষণ ভালবাসা ও শ্রদ্ধার স্থানে। দুর্ভাগ্যবশতঃ এই দুই পরিবারের দুই প্রধান ব্যক্তি রাজুর মা- আমাদের প্রিয় খালাম্মা খাদিজা বেগম এবং কমরেড তাজুলের জীবনসঙ্গী নাসিমা ইসলামকে অল্প সময়ের ব্যবধানে হারিয়েছি আমরা- গেল এক বছরের মধ্যে।
 
সেদিন আমার এক বন্ধু স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলছিলো- “তাহমিদ, তোমার মনে আছে? আমরা তাজুল ভাইয়ের স্ত্রীকে ‘নসিমা আপা’ বলে ডাকতাম। ব্যতিক্রম ছিলে শুধু তুমি। তুমি ডাকতে ‘খুকী আপা’ বলে।” হ্যাঁ, তিনি ছিলেন আমার ‘খুকী আপা’। সেই অল্পবয়সে বুঝতে শিখার আগ থেকেই যে তিনি আমার ‘খুকী আপা’।
 
খুকী আপা আমার বোন ছিলেন। আমরা এক বাড়িতেই বেড়ে উঠেছি, যদিও তিনি ছিলেন আমার অনেক বড়। আমাদের পরিবারের আবহটা ছিলো শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের ধ্যান-ধারণায় গড়ে উঠা। এর মধ্যে আবার খুকী আপার বাবা ছিলেন অপেক্ষাকৃত সামর্থ্যবান ও প্রভাবশালী। খুকী আপা ছিলেন বাবার দ্বিতীয় কন্যা। পারিবারিক ঐতিহ্য ও চরিত্র বজায় রেখে খুকী আপার বড় বোনের বিয়ে হলেও খুকী আপার ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম হলো। আর্থিক সামর্থ্যকে প্রাধান্য না দিয়ে খুকী আপার বাবা প্রাধান্য দিলেন মেধাকে। পাশের গ্রামের তুখোড় মেধাবী তাজুল ইসলামকে জামাতা হিসেবে গ্রহণ করলেন। এই তুখোড় ছেলের সুনাম পুরো এলাকাজুড়ে। সর্বক্ষেত্রেই তাঁর নাম-ডাক, সমস্যা শুধু একটা ব্যাপারেই, তাজুল রাজনীতির সাথে যুক্ত, কমিউনিস্ট পার্টি করে। আমার চাচার বিশ্বাস ছিলো, এটা যুবক বয়সের একটা মোহ, ঘর-সংসার হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তার মেয়ে ঠিকই সময়মতো জামাইকে সংসারী করে তুলবে। মেধাবী তাজুল বড় চাকুরী করবে আর তার আদরের খুকী থাকবে অর্থ প্রাচুর্য্য নিয়ে বিরাট সুখের সংসারে। কিন্তু অল্প কিছু দিনের মধ্যেই চাচা দেখলেন তার সব হিসাব গরমিল হয়ে গেছে।
 
তাজুলের সমাজ বদলের স্বপ্ন নিতান্তই কোনো মোহ দ্বারা তাড়িত নয়, তাজুল যুক্তি ও হৃদয় দিয়ে সমাজতন্ত্রের দীক্ষা নিয়েছেন। তাজুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে এম. এ পাশ করে তথাকথিত ভাল চাকুরীর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলে গেলেন দেশের সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজী জুট মিলে। কাজ নিলেন বদলি শ্রমিকের। উদ্দেশ্য- শ্রমিককে জাগিয়ে তুলতে হবে, শ্রেণিমুক্ত-শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে, কায়েম করতে হবে সমাজতন্ত্র।
 
কমরেড তাজুল যখন এই সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে যাচ্ছেন, স্বাভাবিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারের কন্যা হিসেবে খুকী আপা এর প্রতিবাদ করবেন, তাজুল ভাইকে নিবারণ করবেন- এটাই ছিলো আমার চাচার প্রত্যাশা। কিন্তু সবাইকে হতবাক করে খুকী আপা দাঁড়ালেন তাজুল ভাইয়ের পাশে, প্রকৃত অর্থেই একজন বিপ্লবীর আদর্শ জীবনসঙ্গী হিসেবে। একদিকে তাজুল ভাই ব্যস্ত রাজপথের সংগ্রামে, অন্যদিকে খুকী আপা সংগ্রাম করছেন পারিবারিক-সামাজিক বিভিন্ন চাপের বিরুদ্ধে। শুনেছি কখনো কখনো পারিবারিক চাপ এতটাই বেশি ছিল যে, আশপাশের অনেকেই ভেবেছিলো এবার বোধ হয় খুকী হার মানবে। তাজুলকে সঠিক পথে আনবে, সুখের সংসার গড়বে। কিন্তু তাদের সেই ভাবনা ভুল প্রমাণিত করেন খুকী আপা। আরো দৃঢ় হয়েছেন, সাহস ও শক্তি যুগিয়েছেন তাজুল ভাইয়ের। খুকী আপার উপর চাপের তীব্রতা বাড়াতে তার বাবা দীর্ঘদিন তার সাথে কথা বলা বন্ধ রেখেছিলেন। এমন কি একসময় আমাদের গ্রামের সাধারণ মানুষ আদমজী এলাকায় তাজুল ভাইয়ের সাথে দেখা হওয়ার এবং উনার কর্মকাণ্ডের গল্প খুকী আপার বাবাকে জানানোর পর তিনি এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যে, খুকী আপাকে ত্যাজ্য ঘোষণা করেন। তবুও খুকী আপা পিছু হটলেন না, শক্ত হাতে পাশে থাকলেন তাজুল ভাইয়ের। সংসার পাতলেন আদমজীর শ্রমিক পল্লীতে ছোট্ট একটি রুমে। 
 
দুই শিশু সন্তান নিয়ে খুকী আপা এবং তাজুল ভাইয়ের জীর্ণ কিন্তু সাহসী সংসারে এমন অনেক সময়ই এসেছে যে, দুই শিশুর মুখে একটু দুধ তুলে দেয়াও কঠিন ছিলো। খুকী আপার মুখে শুনেছি মায়ের মন খারাপ হবে এই ভেবে তাজুল ভাই খুকী আপাকে সান্তনা দিতেন এই বলে যে, দেশের হাজারো শিশু না খেয়ে আছে। তারা যদি খেতে না পায় তবে শুধু নিজের সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিয়ে কোনো শান্তি পাওয়া যায় না। তাজুল ভাইয়ের এমন কথায় খুকী আপা হাসতেন, কারণ তিনিও তো এটাই বিশ্বাস করেন। তাইতো তাজুল ভাইকে সাহস জোগান, প্রেরণা জোগান। তাজুল ভাইয়ের সাথে সাথে নিজেও স্বপ্ন দেখেন সমাজতান্ত্রিক শোষণমুক্ত সমাজের।
 
আর দশজন সাধারণ শ্রমিকের মতোই আর্থিক সংকটের মধ্যে তাজুল ভাই খুকী আপার সংসার এগিয়ে চলছিলো আদমজীর শ্রমিক পল্লীতে। আর্থিক টানাটানিকে সামাল দিতে কখনো কখনো খুকী আপা চলে যেতেন গ্রামের বাড়িতে- থাকতেন সেখানেই। কখনো আদমজী আবার কখনো গ্রামে- একজন শ্রমিকের সংসার জীবনের এই সাধারণ চিরচেনা চেহারাই আমরা দেখেছি তাদের সংসারে। একবার তাজুল ভাইয়ের স্মরণে আলোচনা সভায় খুকী আপার সাথে আদমজী গিয়েছিলাম। আলোচনা সভার শেষে আদমজীর কমরেডরা আমাদের নিয়ে গিয়েছিলো শ্রমিক পল্লীতে। যেখানে ছিলো তাজুল ভাইয়ের সংসার। আমার এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না, কিভাবে খুকী আপার মতো স্বচ্ছল পরিবারের একজন এখানে সংসার করেছেন- এতো ছোট! এত ঘুপচি জায়গা! একজন বিপ্লবীর জীবনসঙ্গীতো এমনই হওয়ার কথা! খুকী আপাতো আর কেউ নয়- কমরেড তাজুলের সাথী! 
 
এভাবে চলতে চলতেই চলে আসে ১৯৮৪’র ফেব্রুয়ারি মাস। তাজুল ভাই ব্যস্ত স্বৈরাচারী এরশাদ শাহীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে দেশের সকল শ্রমিক সংগঠনগুলো একত্রিত হয়ে ১ মার্চ শ্রমিক ধর্মঘটের ডাক দেয়। এরশাদের লালিত গুন্ডা বাহিনী আছে আদমজীতে, তারা এই শ্রমিক ধর্মঘট সফল করতে দেবে না। কিন্তু কমরেড তাজুল প্রতিজ্ঞা করেন, যে করেই হোক এরশাদের গুন্ডা বাহিনীকে পরাস্ত করে ধর্মঘট সফল করবেন। সেদিন রাতে যখন ধর্মঘটের সমর্থনে গণসংযোগ ও মিছিল করে ফিরছিলেন কমরেড তাজুল, এরশাদের গুন্ডা বাহিনী নৃশংসভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর উপর। তাজুলের রক্তে ভেসে যায় আদমজীর রাজপথ। জীবনাবসান হয় বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের তথা কমিউনিস্ট আন্দোলনের এক কিংবদন্তির। খুকী আপার কাছেই গ্রামে ফিরলেন শহীদ তাজুল। বাবার আদর বুঝার অধিকার থেকে বঞ্চিত হলেন ছোট দুই ছেলে বাবু-টিপলু। শুরু হলো খুকী আপার সংগ্রামী জীবনের আরেক অধ্যায়! 
 
গত ৬ জানুয়ারি আমরা লালমাটিয়াতে সমবেত হয়েছিলাম খুকী আপাকে শেষ বিদায় জানাতে। সেখানে টিপলু মায়ের জন্য দোয়া চাওয়ার সময় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলছিলো, তার মা ছিলো একাধারে বাবা এবং মা। সত্যিকার অর্থেই খুকী আপা তাঁর দুই ছেলের বাবা এবং মায়ের ভূমিকা পালন করেছেন। তাজুল ভাইয়ের মৃত্যুর পর খুকী আপা ঢাকায় চলে আসেন এবং তাজুল ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কামাল ভাই এর সহযোগিতায় চাকুরী শুরু করেন ‘নিজেরা করি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে। চাকুরীর উপার্জন ছিলো যৎসামান্য। তা দিয়েই রায়ের বাজারের এক রুমের বাসায় খুকী আপার সংসার। কতদিন যে খুকী আপা তার ছেলেদেরকে শুধু ডালের পানি দিয়ে ভাত খাইয়েছেন তার হিসাব নেই। আশপাশের বাড়ি থেকে মাছ-মাংস রান্নার গন্ধ পেলে দুই ছোট শিশু মায়ের কাছে আবদার করতো মাছ-মাংস খাওয়ার জন্য। খুকী আপা তখন তাদের নানাভাবে নিবৃত করতেন আর রাতে ছেলেরা ঘুমিয়ে পড়তো তখন দু’নয়নের অশ্রু ঢেলে মনকে হালকা করতেন তিনি। 
 
ছেলেদের অনুপস্থিতিতে এমনি অনেক সুখ-দুঃখের গল্প করেছেন খুকী আপা। কিন্তু ছেলেদের সামনে চেষ্টা করতেন এমন দুঃখগাঁথা এড়িয়ে চলতে। এমন অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝেও খুকী আপা একটুর জন্যও আদর্শচ্যুত হননি। স্বৈরাচারী এরশাদের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন প্রলোভন এসেছে। কিন্তু কঠোর হাতে সেগুলো এড়িয়ে চলেছেন সংগ্রামী তাজুল পত্নী। আমার প্রতি খুকী আপা ছিলেন একেবারে পক্ষপাতদুষ্ট। আমাদের পরিবারের একমাত্র আমিই সক্রিয়ভাবে ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত ছিলাম। নিয়মিত যোগাযোগ হতো খুকী আপার সাথে বাসায়, অফিসে কিংবা রাজপথে। খুকী আপা, আমি একই মিছিলের সাথী ছিলাম। খুকী আপা সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন নারী আন্দোলনে। নেতৃত্ব দিয়েছেন মহিলা পরিষদে আর এই সকল কর্মকাণ্ডের মূলে যে আদর্শ তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই যুক্ত ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সাথে। 
 
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সিপিবি’র রাজনীতিতে এসেছিলো বিরাট আঘাত। বড় বড় ডাকসাইটে নেতারা দল ত্যাগ করলেন, কেউ কেউ নতুন ব্যানার খুললেন। সেসময়েও অনেকে খুকী আপাকে কাছে টানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খুকী আপার বক্তব্য ছিলো স্পষ্ট- ‘আমি কমিউনিস্ট পার্টির সাথে আছি, তাজুল কমিউনিস্ট পার্টির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে, আমি কমিউনিস্ট পার্টির সাথেই থাকব।’ বলতে দ্বিধা নেই, পার্টির সব বিষয়ে যে খুকী আপা খুশি হতেন, তা নয়। তার জন্য মাঝে মাঝে ক্ষোভও প্রকাশ করতেন। কিন্তু তাই বলে শৃঙ্খলাবিরোধী কিংবা পার্টিবিরোধী কোনো কিছু নিজেও করতেন না, অন্য কেউ তার সামনে করলে তিনি প্রতিবাদ করতেন। আবার যারা পার্টি ছেড়ে চলে গেছেন তাদেরকে তাদের প্রাপ্য সম্মান করতে পিছপা হতেন না। এ ব্যাপারে খুকী আপার মূল্যায়ন হলো- ‘এরা যেহেতু এই আদর্শ এখন আর বিশ্বাস করে না, সুতরাং তারা সিপিবিতে না থাকাই তো ভাল।’
 
গেল ক’বছর ধরে শরীরটা ওনার সাথে মারাত্মক শত্রুতা শুরু করেছিলো। লালমাটিয়ায় নিউ কলোনীর যে বাসাটায় খুকী আপা ছিলেন তার দেয়াল পুরোনো হয়ে গিয়েছিলো, দেয়ালে ছত্রাক জন্মেছিলো। সেখান থেকেই জীবাণু সংক্রমিত হয় খুকী আপার ফুসফুসে। কথা বলতে প্রচণ্ড কষ্ট হতো। তার মধ্যেই সুযোগ পেলে খুকী আপা ফোন করতেন। বলতেন নানা পরিকল্পনার কথা, কিভাবে একটা বৃদ্ধাশ্রম করা যায়, কিভাবে তাজুল স্মৃতি বৃত্তিটা চালু করা যায়, কিভাবে তাজুলের নামে একটা প্রামাণ্যচিত্র বানানো যায়। তাজুল প্রামাণ্য চিত্র বানানোর জন্য একজনকে তিনি টাকাও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই টাকাটা আত্মসাৎ হয়ে যায় এই নিয়েও প্রায়ই ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। যা হোক, সর্বশেষ কিছুদিন আগে শেখর নামের এক উদ্যোগী তরুণ তাজুল ভাইয়ের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে, যা খুকী আপাকে দিয়েছিলো নির্মল আনন্দ। 
 
তাজুল ভাই-খুকী আপার দুই ছেলে এখন বড় হয়েছে। তারা তাদের সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে মায়ের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করেছে। সময়ের সব চেষ্টাকেই হার মানিয়ে খুকী আপা আমাদের মাঝ থেকে চলে গেছেন। কিন্তু তার সংগ্রামী জীবন, প্রতিকূলতার পথে লড়াই করার সাহস, মানবিক মূল্যবোধ, সর্বোপরি আদর্শবাদিতা আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবে। আমি অহংকার করি যে, খুকী আপার মতো একজন বোন পেয়েছিলাম।

সূত্র: সাপ্তাহিক একতা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত