রোগীর জীবন বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিলেন সেবিকা

প্রকাশ : ২৩ মে ২০১৮, ২০:১৩

জাগরণীয়া ডেস্ক

নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত একটি পরিবারকে হাসপাতালে সেবা দিতে গিয়ে নিজেই প্রাণ হারালেন ভারতের কেরালার এক সেবিকা, লিনি পুত্তুসেরি (২৮)।

গত ২১ মে (সোমবার) মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানা যায়, নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ৩ জনের একটি পরিবারকে গত ১৯ মে (শনিবার) সারা রাত সেবা দেন লিনি। ২০ মে (রবিবার) অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন লিনি এবং নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এই আশঙ্কায় নিজেই হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির পূর্বে স্বামীকে ফোন করে জানান, তিনি অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি হতে যাচ্ছেন।

নিজের মৃত্যু অবধারিত জেনে শেষ একটি চিঠিতে লিখেন, মনে হয় তোমার সাথে আমার আর দেখা হবে না। আমাদের সন্তানদের তুমি বড় করো।

লিনির স্বামী সাজিস বাহরাইনে একজন হিসাবরক্ষক হিসেবে চাকুরী করতেন। লিনির হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এ খবর শুনে তিনি কেরালায় ফিরে এলেও লিনিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে দেখতে পান তিনি। ২১ মে (সোমবার) সকালে লিনি মৃত্যুবরণ করেন। এসময় লিনিরই এক আত্মীয় লিনির লেখা চিঠিটি সাজিসকে দেন যা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভাসছে লিনির প্রশংসায়। লিনির এই মৃত্যুকে অনেকেই আত্মাহুতি হিসেবে বর্ণনা করছেন এবং তাকে তার পেশাগত দায়িত্ববোধের জন্য সম্মানিত করছেন। ডাক্তার এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ লিনিকে ভারতের "হিরো" সেবিকা হিসেবে মর্যাদা দিয়েছেন।

রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী পিয়ানারায়ি বিজয়ন এক টুইট বার্তায়, লিনির জন্য সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। সেই সাথে নিঃস্বার্থ এই আত্মদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করেন।

ভাইরাস ছড়িয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় লিনির মরদেহ এখনো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। হাসপাতালে অফিশিয়াল তত্ত্বাবধানে লিনির মরদেহ রাখা হয়েছে।

ভারতের কেরালায় নিপাহ ভাইরাস নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। লিনির পাশাপাশি এরই মধ্যে আরও ৯ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এছাড়া এ ভাইরাসে আক্রান্ত দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

মূলত প্রাণী দেহ থেকে ছড়িয়ে যাওয়া এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত কোন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। বাদুরের খেয়ে যাওয়া ফল থেকেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব। তাই গাছের ফল খাওয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে কেরালা প্রশাসন। জ্বর, বমি আর তীব্র মাথাব্যথা নিয়ে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থার ১০ টি প্রধান রোগের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসের কথা উল্লেখ রয়েছে।

২০০১ সালে প্রথমবারের নিপাহ ভাইরাস ভারতে শনাক্ত করা হয়। তার ৬ বছর পর আবারও এ ভাইরাসে য়াক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। দুইবার ঘটা এ মহামারীতে প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত