সরোজিনী নাইডু

প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:১০

জাগরণীয়া ডেস্ক

ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও কবি সরোজিনী নাইডু ১৮৭৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি হায়দ্রাবাদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ‘দ্য নাইটেঙ্গেল অব ইন্ডিয়া’ নামে পরিচিত। সরোজিনী ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি। স্বাধীন ভারতে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের রাজ্যপাল নিযুক্ত হন তিনি।

সরোজিনী নাইডুর পৈত্রিক নিবাস বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামে। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং কবি বরদাসুন্দরী দেবীর বড় মেয়ে। অঘোরনাথ নিজাম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি ও তার বন্ধু মোল্লা আব্দুল কাইয়ুম ছিলেন হায়দ্রাবাদের ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সদস্য। পরে রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য তাকে কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে পদচ্যুত করে হয়।

সমগ্র মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে প্রথম স্থান অধিকার করে ১২ বছর বয়সে সরোজিনী মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৯১-১৮৯৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা বন্ধ রেখে তিনি নানা বিষয় অধ্যয়ন করেন। ১৮৯৫ সালে প্রথমে ইংল্যান্ডের কিংস কলেজ লন্ডন ও পরে কেমব্রিজের গার্টন কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি উর্দু, তেলেগু, ফার্সী ও বাংলা ভাষায় পারদর্শী ছিলেন।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরোজিনী স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯০৩-১৯১৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে গোপালকৃষ্ণ গোখলে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মোহম্মদ আলী জিন্নাহ, এ্যানি বেসান্ত, সি পি রামস্বামী আইয়ার, মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহরুর সংস্পর্শে আসেন। ১৯১৫-১৯১৮ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে যুবকল্যাণ, শ্রমের গৌরব, নারীমুক্তি ও জাতীয়তাবাদ বিষয়ে বক্তৃতা দেন। ১৯১৬ সালে জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর চম্পারণে নীলচাষীদের হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯২৫ সালে তিনি কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনিই ছিলেন কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি।

১৯১৯ সালের মার্চ মাসে ব্রিটিশ সরকার রাওলাট আইন জারি করে সকল প্রকার রাজদ্রোহমূলক লেখা নিষিদ্ধ করে। এর প্রতিবাদে গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত করলে সরোজিনী তাতে যোগ দেন। পরে ব্রিটিশ সরকার এই আন্দোলনের উপর দমননীতি প্রয়োগ করে। জুলাই মাসে সরোজিনী ইংল্যান্ডে হোমরুল লিগের দূত মনোনীত হন। ১৯২৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি পূর্ব আফ্রিকান ভারতীয় কংগ্রেসের দুই জাতীয় কংগ্রেস প্রতিনিধির একজন নির্বাচিত হন। ১৯২৮ সালের অক্টোবর মাসে নিউইয়র্ক সফর করেন। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান আমেরিকান ও রেড ইন্ডিয়ানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের নিন্দা করেন। ভারতে ফিরলে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ৫ মে গান্ধীজীকে গ্রেফতার করা হয়। কিছুদিন পরেই গ্রেফতার হয়ে সরোজিনী কয়েক মাস কারারুদ্ধ থাকেন। ১৯৩১ সালের ৩১ জানুয়ারি গান্ধীজীর সঙ্গে তাকেও মুক্তি দেওয়া হয়। ওই বছরই আবার তাদের গ্রেফতার করা হয়। স্বাস্থ্যহানির কারণে অল্পদিনের মধ্যেই ছাড়া পান সরোজিনী। ১৯৩১ সালে গান্ধীজী ও পণ্ডিত মালব্যের সঙ্গে তিনিও গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন। ১৯৪২ সালের ২ অক্টোবর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় গান্ধীজীর সঙ্গে ২১ মাস কারারুদ্ধ থাকেন।

১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পর সরোজিনী নাইডু যুক্তপ্রদেশের (বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ) রাজ্যপাল নিযুক্ত হন। তিনিই ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল।

তার লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে The Golden Threshold (১৯০৫), The Bird of Time : Songs of Life, Death & the Spring (১৯১২), The Broken Wing : Songs of Love, Death and the Spring (১৯১৭), The Sceptred Flute : Songs of India (১৯৪৩), The Feather of the Dawn (১৯৬১) ও The Gift of India.

১৭ বছর বয়সে সরোজিনী ড. মুথ্যালা গোবিন্দরাজুলু নাইডুর প্রেমে পড়েন। ২ বছর পর তাকে বিয়ে করেন। ওই সময় অসবর্ণ বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল। সরোজিনী ছিলেন ব্রাহ্মণ ও গোবিন্দরাজুলু অব্রাহ্মণ। ১৮৭২ সালের আইন অনুযায়ী ১৮৯৮ সালে মাদ্রাজে তাদের বিয়ে হয়। তাদের চার সন্তান— জয়সূর্য, পদ্মজা, রণধীর ও লীলামণি। পদ্মজা পরে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হন।

সরোজিনীর ভাই বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও ছিলেন এক বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন বার্লিন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্রের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। কমিউনিজমে আকৃষ্ট হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নও যান। বলা হয়ে থাকে, স্তালিনের নির্দেশে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। অপর ভাই হারীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন নাট্যকার, কবি ও অভিনেতা।

সরোজিনী নাইডু ১৯৪৯ সালের ২ মার্চ উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদে মারা যান।

সূত্র : উইকিপিডিয়া

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত