লায়লা হাসান: একজন নৃত্যশিল্পী ও সংগঠক

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০১৬, ০২:৫৫

জাগরণীয়া ডেস্ক

লায়লা হাসান, বাবা মায়ের রাখা নাম লায়লা নার্গিস, রোজী। ১৯৪৭ সালের ৮ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে নানা খানবাহাদুর আলি আহমেদ খানের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। মায়ের নাম লতিফা খান, বাবার নাম এম এ আউয়াল। বাবা কোয়াপারেটিভ কলেজের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন। মা ছিলেন কাস্টমস এর কর্মকর্তা। এম এ আউয়াল অবসরে বাঁশি বাজাতেন, আর লতিফা খান সেতার।

লায়লা নার্গিস এর ছোটবেলা কাটে ঢাকার টিকাটুলি এলাকায়। একটু বড় হবার পর মায়ের বদলির চাকরির কারণে নানা, নানি, মামা, (বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ খান সরোয়ার মুরশিদ), মামি, (রাজনীতিবিদ নুরজাহান মুরশিদ), মামাতো ভাই বোনের যৌথ পরিবারে বড় হন তিনি। তখন পুরো টিকাটুলি পাড়াটির ছিল এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ওখানে থাকতেন সুফিয়া কামাল, মোদাম্বের হোসেন, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক প্রমুখ। এসব মানুষদের সন্তানদের সাথে রামকৃষ্ণ মিশনে, গোলাপবাগে ফুল কুড়িয়ে শৈশব কাটে লায়লা নার্গিসের।

লায়লা নার্গিস রোজীর নৃত্যজীবন শুরু হয় মাত্র দু'বছর বয়সে। স্টেজে নাচলে দেখা যায় না বলে আরেকটা টেবিল এনে তার ওপরে দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো। সেই থেকেই শুরু। বিদ্যালয় জীবন শুরু করেন নারীশিক্ষা মন্দিরে, পরবর্তীকালে কামরুন্নেসা স্কুলে। নাচ শিখতেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে। সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের পর ভর্তি হন বেগম বদরুন্নেসা কলেজে। সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে। তবে পড়াশুনার সাথে নাচ চলেছে একই ছন্দে। চলেছে রেডিও নাটকে অভিনয়।

১৯৬৫ সালে চলচ্চিত্রের নায়ক সৈয়দ হাসান ইমামকে বিয়ে করেন লায়লা। শুরু হয় এক ছন্দবদ্ধ যুগলবন্দীর। লায়লা নার্গিস হয়ে যান সবার প্রিয় লায়লা হাসান। নতুন পরিবারের অনুপ্রেরণায় গতিময় হয় সংস্কৃতির সঙ্গে পথচলা। একে একে কোল জুড়ে আসে ৩টি সন্তান। কিন্তু সন্তান, শ্বাশুড়ি, স্বামীসহ যৌথ পরিবারের বহু কাজের মাঝেও নাচের মহড়া, টিভি নাটক, এমনকি কিছুদিন মঞ্চ নাটকও চলতে থাকে। সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হয়েও বিদেশে গিয়েছেন বহুবার। বর্তমানে খেলাঘরের সংগঠক হয়ে কাজ করছেন তিনি।

অগণিত সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি ও পুরস্কার পেয়েছেন লায়লা হাসান। একুশে পদক প্রাপ্তি এনে দেয় রাষ্ট্রীয় সম্মান। একুশে পদকে প্রাপ্ত সব অর্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃত্য বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করে বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক কার্যক্রমে দান করেন। নানা সংগঠনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে নিজেই চালাচ্ছেন নটরাজ নামে একটি নৃত্য শেখার সংগঠন। এছাড়াও নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। প্রতিষ্ঠা কাল থেকেই জাতীয় নবান্ন উৎসব উদযাপণ পর্ষদের কর্ণধার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন এই গুণী শিল্পী।

তথ্যসূত্র:

সঙ্গীতা ইমাম (লায়লা হাসানের কন্যা), সহ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত