সুচিত্রা সেন: চিরসবুজ এক প্রেয়সী

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০১৮, ১৬:২৫

জাগরণীয়া ডেস্ক

বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকার মুকুট পড়েছিলেন সুচিত্রা সেন। নামটি মূলত পর্দার নাম। বেড়ে উঠেছিলেন রমা দাশগুপ্ত নামে। পিতা করুণাময় ও আর মাতা ইন্দিরা দাশগুপ্তের তৃতীয় কন্যা সুচিত্রা সেন ৬ এপ্রিল ১৯২৯ মতান্তরে ১৯৩১ সালে বাংলাদেশের পাবনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব আর কৈশোর কাটে পাবনায়।

১৯৪৭ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিয়ের পিড়িতে বসেন তিনি। বাবা মায়ের সাথে পুরীতে বেড়াতে গেলে সেখানেই হবু স্বামী দিবানাথ সেনের পরিবারের চোখে পড়েন তিনি। আর দেরি না করেই সানাই বেজে উঠে সুচিত্রা সেনের।

স্বামী আর শ্বশুরের উৎসাহে প্রথম পাড়ার ‘নটীর পূজা’ নামে একটি নাটকে অভিনয় করেন। সেই অভিনয়ের খ্যাতি চলে যায় টালিগঞ্জে। হতে চেয়েছিলেন পর্দার পিছনে গায়িকা। কিন্তু ছিপছিপে শরীর আর অপূর্ব দ্যুতিতে উজ্জল ঐ মুখটিকে পর্দার আড়ালে রাখতে রাজি হয়নি রুপালি পর্দার কারিগরেরা।

১৯৫২ সালে শেষ কোথায় চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সিনেমা জগতে অনুপ্রবেশ। অর্থাভাবে যদিও চলচ্চিত্রটি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি।

এরপর সুকুমার দাশগুপ্তর ‘সাত নম্বর কয়েদী’ সিনেমা থেকে চলচ্চিত্রে নিয়মিত হলেন রমা। তখন সুকুমার দাশগুপ্তর সহকারী নীতীশ রায় তার নাম দিলেন সুচিত্রা।  নীরেন লাহিড়ীর ‘কাজরী’ ছবির মাধ্যমে সালে রমা সেন পাল্টিয়ে ‘সুচিত্রা সেন’ নামে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।

সুচিত্রা সেনের নামের পাশে যে নামটি অনায়াসে চলে আসে তিনি বাংলার মহানায়ক উত্তম কুমার। শুরুতে বেশ কয়েকটি ছবি এই জুটি করলেও ১৯৫৪ সালে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ সিনেমাটিই এই জুটিকে দর্শক্মনে স্থান করে দেয়। টানা ১৫ সপ্তাহ হলে চলা ঐ চলচ্চিত্র তখনকার সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে রেকর্ড গড়ে দেয়। 

১৯৫৫ সালে প্রথম হিন্দী ছবি ‘দেবদাস’ মুক্তি পায়। এ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। এসময় থেকেই সুচিত্রা হয়ে উঠেন ফ্যাশন সচেতন নারীদের আদর্শ। তার চলন, শাড়ি পড়া, খোঁপার ফুল সবই হয়ে উঠে উঠতি নারীদের অনুকরণের বিষয়। 

১৯৬৩ সালে সাত পাঁকে বাধা চলচ্চিত্রের জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার পান। তিনিই ছিলেন প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি এ সম্মানে ভুষিত হন। অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালক, শিডিউল এসব বিষয়ে বেশ শর্ত মেনে চলতেন তিনি।তিনি কোথায় অভিনয় করবেন, কোন ব্যানারে তার নাম আসবে, তা শুধু তিনিই নির্ধারণ করতেন। তার সময়ের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নিতেন তিনি। ‘সপ্তপদী’ সিনেমাটির জন্য পারিশ্রমিক হিসেবে নিয়েছিলেন দু’লক্ষ টাকা, যা সেসময়ের যেকোনো অভিনেতার চাইতে বেশি।

১৯৭৮ সালে সুদীর্ঘ ২৫ বছর অভিনয়ের পর তিনি চলচ্চিত্র থেকে অবসরগ্রহণ করেন। এরপরই ধীরে ধীরে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান এই চিরসবুজ প্রেয়সী। জীবণের শেষদিকে প্রায় গৃহবন্দী জীবন কাটিয়েছেন রূপালী পর্দার এই অনন্য নক্ষত্র। 

২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য সুচিত্রা সেন মনোনীত হন, কিন্তু ভারতের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে সশরীরে পুরস্কার নিতে দিল্লী যাওয়ায় আপত্তি জানানোর কারনে তাঁকে পুরস্কার দেয়া হয় নি।

মৃত্যু: ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ২৫ মিনিট নাগাদ কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিরবিদায় নেন চলচ্চিত্রের এই মহানায়িকা। 

সুচিত্রা সেনের অভিনীত কয়েকটি বিখ্যাত চলচ্চিত্রের তালিকা-
সাড়ে চুয়াত্তর (১৯৫৩)
ওরা থাকে ওধারে (১৯৫৪)
অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫৪)
শাপমোচন (১৯৫৫)
সবার উপরে (১৯৫৫)
সাগরিকা (১৯৫৬)
পথে হল দেরি (১৯৫৭)
হারানো সুর (১৯৫৭)
দীপ জ্বেলে যাই (১৯৫৯)
সপ্তপদী (১৯৬১)
বিপাশা (১৯৬২)
চাওয়া-পাওয়া
সাত-পাকে বাঁধা (১৯৬৩)
হসপিটাল
শিল্পী (১৯৬৫)
ইন্দ্রাণী (১৯৫৮)
রাজলক্ষী ও শ্রীকান্ত (১৯৫৮)
সূর্য তোরণ (১৯৫৮)
উত্তর ফাল্গুনি (১৯৬৩) (হিন্দিতে পুনঃনির্মিত হয়েছে মমতা নামে)
গৃহদাহ (১৯৬৭)
ফরিয়াদ
দেবী চৌধুরানী (১৯৭৪)
দত্তা (১৯৭৬)
প্রণয় পাশা
প্রিয় বান্ধবী

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত