‘কোন অঞ্চলের মানুষ উপেক্ষিত থাকবে না’

প্রকাশ : ১৭ মে ২০১৭, ১৯:৫১

জাগরণীয়া ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের কোন অঞ্চলে মানুষ উপেক্ষিত থাকবে না। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে এনে সকলের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে তাঁর সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর যারা পিছিয়ে আছেন তাদের শিক্ষা-দীক্ষা এবং আর্থ-সামাজিকভাবে যাতে তারা উন্নত হতে পারেন সেই উদ্যোগটা আমরা হাতে নিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় শিক্ষাকে অধিকার হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘দেশের প্রায় ৫৫টি জেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। তাদের জীবনমান কিভাবে উন্নত করা যায় এবং সেই লক্ষ্যে আমরা কিছু বিশেষ এলাকা নিয়ে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। এজন্য বাজেটেও আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ মে (বুধবার) সকালে তার কার্যালয়ে আয়োজিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে বৃত্তি হিসেবে ২৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ১৬ জন কৃতি শিক্ষার্থীর হাতে এই বৃত্তির চেক তুলে দেন।

নিজ নিজ সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে এদিন চেক গ্রহণে আগত শিক্ষার্থীরা নিজস্ব সংস্কৃতির পোশাক পরিধান করায় সমগ্র অনুষ্ঠানটি একটি ভিন্ন মাত্রা লাভ করে।

দেশের প্রায় ৫৫টি জেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, খুব ক্ষুদ্র আকারে হলেও এসব জেলায় তারা রয়েছেন। কজেই তাদের জীবনমান কিভাবে উন্নত করা যায় এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কিছু বিশেষ এলাকা নিয়ে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করি। এজন্য বাজেটে আলাদা করাদ্দ রাখার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা সবসময় মনে করি শিক্ষা হচ্ছে একটি জাতির অধিকার।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী।

প্রকল্প পরিচালক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা প্রদান করেন।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওরাং সম্প্রদায়ের লিমা তাত্তো বৃত্তি লাভের পর অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

গত বছর বৃত্তি লাভকারী মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার চা শ্রমিক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি এবং বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী রাজু দেশোয়ারার ওপর একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, জাতীয় সংসদের সদস্যবৃন্দ, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিদেশি কূটনিতিক, রাষ্ট্রদূত, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাওতাল, মুরং, হাজং, গারো, খাসিয়াসহ বহু ক্ষুদ ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী এদেশে রয়েছে। তাঁদের সংস্কৃতি শিক্ষা এবং মাতৃভাষার সম্মান বজায় রাখা আমাদের লক্ষ্য। যাতে এইসব বৈচিত্রময় নৃগোষ্ঠীর ভাষার এবং তাদের বিভিন্ন সংস্কৃতির চর্চা সঠিকভাবে তাঁরা করতে পারেন।

তিনি বলেন, সেই সাথে তারা যেন শিক্ষার দিক থেকে যেন পিছিয়ে না পড়ে। কারণ, বাংলাদেশকে সকল পর্যায়ের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখে সুশিক্ষায় সজ্জিত হয়ে শিক্ষিত জাতি হিসেবে গড়ে উঠব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজ নিজ পেশা তারা করবেন কিন্তু একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে নিজ নিজ পেশায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলে সমগ্র পেশারই উৎকর্ষ সাধিত হবে।

সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তাঁর সরকার শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই, তা গড়তে হলে-অবশ্যই শিক্ষিত জাতি হিসেবে আমাদের দেশের মানুষকে গড়ে তুলতে হবে।

দীর্ঘ ২১ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি এবং ২১ বছর পর ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংঘাত নিরসনে শান্তি চুক্তিও করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দুই দশক ধরে যে সংঘাতময় পরিস্থিতি ছিল তা আওয়ামী লীগ সরকার দূর করে সেখানে শান্তি চুক্তি করে। তাঁদের উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় গড়ে তোলে, পার্বত্য উন্নয়ন পরিষদ করে দেয় এবং বহুবিধ উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রাক-প্রাইমারী থেকে মাধ্যমিকে সকল স্তরে বিনামূল্যে বছরের প্রথম দিন পাঠ্য পুস্তক বিতরণ প্রাইমারী থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি ও উপবৃত্তি চালু এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য নিজস্ব ভাষায় পাঠ্য পুস্তক প্রণয়নের তথ্য তুলে ধরেন।

২০১৭ সালে তার সরকার ৫টি নৃগোষ্ঠীর ভাষায় ৭৭ লাখ ২৮২টি বই ছাপিয়ে বিতরণ করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

সরকার প্রধান বলেন, আমরা ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক বিতরণকালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা যাতে প্রথম শ্রেণিতে পড়ার জন্য নিজস্ব ভাষায় লিখিত বই পায় তার উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া, যাদের বর্ণমালা নেই তাদের বাংলাতেই লেখনি আয়ত্ব করার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী।

বৃত্তি প্রাপ্তদের প্রধানমন্ত্রী মনোযোগের সঙ্গে লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে বলেন, নিজেদের জীবনযাত্রা শিক্ষার মধ্যদিয়ে আরো উন্নত করার সুযোগ থাকে। সে দিকে দৃষ্টি দেয়াসহ ভালোভাবে লেখাপড়া করায় উৎসাহ প্রদানের জন্যই এই বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতির যথাযথ বিকাশও কামনা করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত