গর্ভাবস্থায় প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে নির্যাতন, নবজাতকের মৃত্যু

প্রকাশ : ০৪ মে ২০১৭, ২০:০৩

জাগরণীয়া ডেস্ক

ঝালকাঠির রাজাপুরের পালট গ্রামে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনে সীমা বেগম (৩০) নামে অন্তঃসত্ত্বা শারীরিক প্রতিবন্ধী গৃহবধূর ৬ মাসের সন্তান প্রসব হওয়ার ২ দিন পর ৪ মে (বৃহস্পতিবার) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।

২ মে (মঙ্গলবার) দুপুরে ওই প্রতিবন্ধী গৃহবধূ রাজাপুরের সোহাগ ক্লিনিকে ডাক্তারী পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য গেলে সেখানেই সন্তানের জন্ম হয়।

সীমা বেগমের ভাই শফিকুল ইসলাম পলাশ অভিযোগ করে জানান, গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে সীমার শ্বশুর রহমান, শাশুড়ি ফিরোজা বেগম ও দেবর কাসেম, আবুল ও জসিম মাহমুদার প্রতিবেশী আঃ খালেক সিকদারের মেয়ে বিদেশ ফেরত মাহমুদা বেগমের বসতগৃহে গিয়ে মারধর করে গলার স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। পরে এ ঘটনা সীমা মিমাংসার জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে বললে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্বশুর রহমান বটি দিয়ে কুপিয়ে তার ডান হাত জখম করে। এরপর শাশুড়ি ফিরোজা বেগম তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের মেঝেতে ফেলে দিয়ে পরনের পোশাক টেনে ছিঁড়ে ফেলে এবং পঙ্গু পায়ের পাতা ধরে টেনে হিঁচড়ে ঘরের বাহিরে বের করে ফেলে দেয়।

এমতাবস্থায় দেবর কাসেম, আবুল হোসেন ও জসিম রান্নার জন্য রাখা স-মিল থেকে আনা কাঠ দিয়ে অমানুষিকভাবে এলোপাথারি পিটিয়ে ও লাথি মেরে অন্তঃসত্ত্বা প্রতিবন্ধী সীমার পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। পরে সীমা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে স্থানীয়রা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে বলেন ডাক্তার। কিন্তু অর্থাভাবে ওই দিন সীমার চিকিৎসা হয়নি।

পরে সীমার বাবার পরিবারের সহয়োগিতায় ২ মে (মঙ্গলবার) সকালে রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক সীমার শারীরিক অবস্থার ও গর্ভের সন্তানের অবস্থা নিরূপনের জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে বলেন। কিন্তু সীমা রাজাপুর সোহাগ ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাফির জন্য গিয়ে সেখানেই অন্তঃসত্ত্বা সীমা সন্তান প্রসব করেন।

৩ মে (বুধবার) সন্ধ্যায় সীমার ভাই শফিকুল ইসলাম পলাশ বাদি হয়ে শ্বশুর-শাশুড়িসহ ৬ জনকে আসামি করে রাজাপুর থানায় মামলা করেছেন। তবে পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। বর্তমানে ওই প্রতিবন্ধী গৃহবধূ মুমূর্ষু অবস্থায় বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

চিকিৎসক জানিয়েছেন, গৃহবধূর অবস্থা অপরিবর্তিত আছে।

সীমা বেগমের ভাই শফিকুল ইসলাম পলাশ অভিযোগ করে জানান, ১০ বছর পূর্বে সীমার বিয়ে হওয়ার পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন বহুবার সীমাকে নির্মমভাবে মারধরসহ বিভিন্ন সময় নির্যাতন করে আসছিলো। ৩ সন্তানের জননী সীমার স্বামী গাছ ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম। স্বামী শহিদুল গাছ ব্যবসার কাজে বাড়ির বাহিরে গেলেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন সীমাকে নিযার্তন করতো বলেও অভিযোগ সীমার ভাই পলাশের।

রাজাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তার টিএইচও মাহাবুবুর রহমান জানান, ওই গৃহবধূ গর্ভাবস্থায় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় অপরিপক্ক অবস্থায় সন্তান প্রসব হয়েছে। 

রাজাপুর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গিয়াস জানান, এ ঘটনায় মামলা হচ্ছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত