এক সংগ্রামী কণ্ঠযোদ্ধার বিদায়

প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৮:৪৪

জাগরণীয়া ডেস্ক

মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী পিরোজপুরের ক্ষমা দাশ গুপ্তা মৃত্যুবরণ করেছেন। ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে ক্ষমার কণ্ঠে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বেজেছিলো স্বাধীনতার গান। চিরবিদায় নিলেন ক্ষমা, তবে আমাদের জন্য রেখে গেলেন স্বাধীন জন্মভূমি।

৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র  কালিগঞ্জ, কোলকাতা) থেকে প্রচারিত ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল’ গানের অন্যতম শিল্পী ক্ষমা দাশ গুপ্তা।

৬৯’র গণ অভ্যুথানে গণ সংগীতের মাধ্যমে ভূমিকা রেখেছেন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে। সে সময় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান গেয়ে মানুষের মনে জাগিয়েছেন এক দুরন্ত সাহস আর বেঁচে থাকার স্বপ্ন। স্বাধীনতাত্তোর ৭৪’র বন্যায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন হাটে মাঠে গান গেয়ে সাহায্য সংগ্রহ করে। 

ক্ষমা দাশ গুপ্তা পিরোজপুর জেলা শহরে মাছিমপুর সড়কে বসবাস করতেন। আন্দোলনমুখর এবং অভিজ্ঞ এ গুণী শিল্পী রবিবার রাতে তার বড় মেয়ের শ্বশুর বাড়ি নরসিংদীতে মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘদিনযাবত হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি।

ক্ষমা দাশ গুপ্তার এই হঠাৎ মৃত্যুতে পিরোজপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গণে শোকের ছায়া নেমে আসে। দুই মেয়ের ইচ্ছায় ১২ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) রাতেই তার বড় মেয়ের শ্বশুর বাড়ি নরসিংদীতে তার শেষকৃত অনুষ্ঠিত হয়। তার মৃত্যুতে পিরোজপুর সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ সর্বমহলে শোকের ছায়া নেমে আসে।

সুপরিচিত এই গুণী শিল্পী ১৯৪৯ সালের ৩১ অক্টোবর পিরোজপুর শহরের মাছিমপুর সড়কে একটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা প্রয়াত সুরেন্দ্র নাথ দাশ গুপ্ত, মা প্রয়াত পারুল বালা দাশ গুপ্তা। স্বামী প্রয়াত কালিদাস সাহা। তিনি ১৯৬৬ সালে পিরোজপুর আরবান গার্লস স্কুল (বর্তমান সরকারি বালিকা বিদ্যালয়) থেকে এস.এস.সি, ১৯৬৯ সালে পিরোজপুর সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি এবং ১৯৭৬ সালে বি.এ পাশ করেন। পেশাগত জীবনে তিনি একজন সরকারি চাকুরীজীবী ছিলেন।

স্কুলজীবন হতেই সংগীতের প্রতি প্রচণ্ড আকর্ষণ ছিল ক্ষমা দাশ গুপ্তার। ৮ম শ্রেণিতে পড়ার সময় জেলার ভান্ডারিয়া থানায় এক সংগীত প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক জিতে নিজেকে সংগীত ভুবনে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর থেকে স্কুল, কলেজ পর্যায়ে নজরুল, রবীন্দ্র, কীর্তণ ও উচ্চাঙ্গ সংগীতে নিজের প্রতিভা বলে প্রতিষ্ঠিত হন।

ক্ষমা দাশ গুপ্তা ১৯৭৩ সালে পিরোজপুরে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী পিরোজপুর মহাকুমা শাখার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজেকে উদীচীর সাথে জড়িত রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে নিবেদিত রেখেছেন। ১৯৭২ সাল থেকে টানা প্রায় বিশ বছর খুলনা, বরিশাল বেতার ও টেলিভিশনে নিয়মিত শিল্পী হিসাবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী পিরোজপুর জেলা শাখা তাকে গুণীশিল্পীর সম্মাননায় ভূষিত করেন। ২০১২ সালে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা সিডি আই নেটওয়ার্ক জীবনব্যাপী সঙ্গীতে অবদানের জন্য সফল নারী সন্মাননা প্রদান করে। ২০১৩ সালে তাকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে জেলার শ্রেষ্ঠ সংগীত শিল্পীর সন্মাননা প্রদান করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত