‘সকল প্রতিষ্ঠানে স্কাউটিং’কে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে’

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০১৭, ২০:১৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য তাঁর সরকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কাউটিংকে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামি প্রজন্মকে স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে বাংলাদেশ স্কাউটসকে সার্বিক সহায়তাদানে আমাদের সরকার আরও কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত, দু’টি করে কাব স্কাউট দল, দু’টি স্কাউট দল ও দু’টি রোভার স্কাউট দল চালু করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এ জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বিতভাবে বাংলাদেশ স্কাউট’কে সহযোগিতা করার আহবান জানাচ্ছি। আমি আশা করি এই সহযোগিতা তারা করবেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সকালে গোপালগঞ্জের মানিকদহ অবাসিক এলাকায় সপ্তাহব্যাপী ১১ তম জাতীয় রোভার মুট উদ্বোধনকালে একথা বলেন।

স্কাউটিং-এর গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রেখে এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধির আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ১৬ কোটি মানুষের দেশ। তাই আমাদের স্কাউটদের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করতে হবে।’

‘শান্তিময় জীবন, উন্নত দেশ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী এই রোভার মুটে সার্ক এবং এশীয় প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত স্কাউটসহ প্রায় ১০ হাজার স্কাউট অংশ গ্রহণ করছেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে বাংলাদেশ স্কাউটের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়য়ক মো. আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলাদেশ স্কাউটস’র জাতীয় কমিশনার মোজাম্মেল হক খান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ স্কাউটস’র পক্ষ থেকে কুচকাওয়াজের মাধ্যমে অভিবাদন জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন। স্কাউটদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ ডিসপ্লেও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্কাউটিং’এ মেয়েদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির আহবান জানিয়ে বলেন, ‘স্কাউটিং কার্যক্রমে মেয়েদের অংশগ্রহণ আরো বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে মেয়েদের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত গার্ল-ইন- স্কাউটিং ইউনিট চালু করতে হবে।’

অংশগ্রহণকারী স্কাউটদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। ইনশাল্লাহ আমরা তা পারব। আর তোমরাই হবে জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ গড়ার সোনার সন্তান। যারা এই বাংলাদেশকে সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘুর্ণিঝড়, বন্যা, অগ্নি দুর্ঘটনা ও শীতার্ত মানুষের সেবায় স্কাউটদের কর্মকান্ডের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জেনে আনন্দিত যে- বাংলাদেশ স্কাউটস দুর্যোগে সেবাদানের লক্ষ্যে স্কাউটসদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্প্রসারিত করেছে।

তিনি বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অধিক হারে বৃক্ষরোপণের লক্ষ্যে স্কাউটদের আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করার জন্য অনুরোধ করছি। আশা করি, তোমাদের সেবাধর্মী কাজ আরও বিস্তৃত হবে।

বাংলাদেশে স্কাউট আন্দোলনকে জোরদার করতে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ইতোমধ্যে ‘বাংলাদেশ স্কাউটিং সম্প্রসারণ ও স্কাউট শতাব্দি ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক ১২২ কোটি ১০ লাখ টাকার একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন করেছে।

তিনি বলেন, তাঁর সরকার মৌচাক জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের স্থান সঙ্কুলান সমস্যা নিরসনের জন্য ৯৫ একর বনভূমি স্কাউটদের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ক্যাম্প সাইট স্থাপনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও মানিকগঞ্জে জমি বরাদ্দ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০১০-২০১৬ পর্যন্ত সদ্য সমাপ্ত কাবিং সম্প্রসারণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের জন্য ১১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১১ হাজার নতুন কাব স্কাউট দল গঠন করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হিউম্যান রিসোর্স থ্রু স্কাউটিং প্রকল্পের জন্য ১৭ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার নতুন স্কাউট দল, ৫টি জেলায় স্কাউট ভবন, দিনাজপুর ও কুমিল্লায় মহিলা ডরমিটরি নির্মাণ করা হয়। এছাড়াও জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রাচীরসহ সংস্কার কাজ এবং সিলেট আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থ বছরে পৃথক একটি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ২৪তম রিজিওনাল স্কাউট কনফারেন্স আয়োজন করেছে। মৌচাকে জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আধুনিকায়নের কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে।

তাঁর সরকারের সময়ে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য,শিল্পায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি আজ বাংলাদেশ। গত ৮ বছরে ৫ কোটির বেশি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। দেশ-বিদেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৬ ডলার। রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৩৪.২৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় ১৫ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে চাই। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতুতে ২০১৮ সালে যানবাহন চলবে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল বাধা ও ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। একের পর এক বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। আমরা জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী সকল যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের আওতায় আনব এবং শাস্তি কার্যকর করব।’

তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আমাদের সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করেছি। অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের সুযোগ বন্ধ করেছি।’ ‘নির্বাচিত ব্যক্তিরাই দেশ পরিচালনা করবে-এ পদ্ধতি নিশ্চিত করেছি,’যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী রোভার মুটে অংশগ্রহণকারী স্কাউটদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা যারা এই মুটে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলে তারা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। আমি আশা করি, এ ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করে তোমরা নিজেদের আরও দক্ষ করে গড়ে তুলবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মাটিতেই জাতির পিতার জন্ম, এই মাটিতেই তিনি ঘুমিয়ে আছেন। তাঁর স্বপ্ন পূরণ করা এটা আমাদের লক্ষ্য। কাজেই এই মাটিতে তোমাদের পদচারণায় আমার মনে হচ্ছে হাজার ফুল ফুটে আছে গোপালগঞ্জের মাটিতে।’

তিনি বলেন, তোমরা ফুলের মত সুশোভিত করে এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাও। সুন্দরভাবে তোমাদের জীবন গড়ে উঠুক, তোমাদের ভবিষ্যত সুন্দর হোক-সেই কামণাই করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে একাদশ জাতীয় রোভার মুট উদ্বোধন করতে দু-দিনের সফরে গোপালগঞ্জ পৌঁছেন। তিনি রাতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর পৈত্রিক নিবাসে অবস্থান করবেন। কাল , শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে স্কাউটস’র জাতীয় কমিশনার (পাবলিক রিলেশন এন্ড মার্কেটিং) সারওয়ার মোহাম্মদ শাহরিয়ার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানের শেষ অংশে ১১তম জাতীয় রোভার মুট উপলক্ষে একটি স্মারক ডাক টিকেট অবমুক্ত করেন এবং স্কাউটদের তাঁবুগুলো পরিদর্শন করেন।

সূত্র: বাসস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত